বাংলা অনুচ্ছেদ। বাংলা প্যারাগ্রাফ। টীকা লেখা।

 বাংলা অনুচ্ছেদ। বাংলা প্যারাগ্রাফ। টীকা লেখা।

বাংলা প্যারাগ্রাফ
বাংলা অনুচ্ছেদ লিখুন। 

আবু মুসা দ্বীপ 

হরমুজ প্রণালীর একেবারে কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ হল আবু মুসা দ্বীপ। এ দীপ্তির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এ দ্বীপ হচ্ছে ধনী উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ১৯৭১ সালে শারজাহতে অনুষ্ঠিত এক সমঝোতা বৈঠকে শারজাহ চুক্তির মাধ্যমে ইরান এর অধিকাংশ এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বীপের পার্শ্ববর্তী 'লেসার টম্ব' এবং 'গ্রেটার টম্ব' অঞ্চল দুটি দখল করে। কয়েক বছর পূর্বে ইরান ঘোষণা দেয় যে, ইরানই হচ্ছে আবু মুসা দ্বীপ এর একমাত্র স্বত্বাধিকারী। ইরান এ দ্বীপকে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং হরমুজ প্রণালীর উপর নজর রাখতে সক্ষম হচ্ছে। তবে ইরান একতরফা ভাবে এই দ্বীপের মালিকানা দাবি করে আসছে। 


মাজার ই শরীফ 

উত্তর আফগানিস্তানের একটি বিখ্যাত শহরের নাম মাজার ই শরীফ। রাজধানী কাবুল হতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। সম্প্রতি এই শহরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। পূর্বে শহরটি ছিল তালেবান বিরোধী আব্দুর রশিদ দোস্তাম ও আহমেদ শাহ মাসুদের শক্তঘাঁটি । ১৯৯৭ সালের মে মাসে এক আকস্মিক হামলা চালিয়ে তালেবান বাহিনী এ শহরটিকে দখল করে নেয়। এই সময় উভয়পক্ষের ব্যাপক সৈন্যের হতাহত হতে হয়। নভেম্বর ১৯৯৮ সালে তালেবানরা মাজার-ই-শরীফ এর ৯ জন ইরানি কূটনীতিককে হত্যা করে। এ নিয়ে দু'দেশ প্রায় যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সহায়তায় তালেবান সরকার নতিস্বীকার করে এবং উত্তেজনা প্রশমিত হয়। 


বায়াফ্রা 

সাবেক পূর্ব নাইজেরিয়ার অবিচ্ছিন্ন অংশের নাম বায়াফ্রা। ১৯৬৭ সালে একে বায়াফা নাম দেয়া হয় এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত একে কেন্দ্র করেই সমগ্র দেশে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এই অঞ্চলের সংখ্যাগুরু "ইবু উপজাতিভুক্ত" সামরিক গভর্নর লেফটেন্যান্ট কর্নেল অজুকো ১৯৬৭ সালের ৩১ শে মে এ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯৮০ সালের অজুকো দেশ থেকে পলায়ন করলে বায়াফ্রা বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং নাইজেরিয়ার ফেডারেল বাহিনী বায়াফ্রা দখল করে নেয়। তবে গৃহযুদ্ধ চলাকালে তানজানিয়া ও গ্যাবন বায়াফ্রাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। 


পার্ল হারবার 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিভুক্ত হওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত বিমান ঘাঁটি হল পার্ল হারবার। সামরিক কৌশলগত দিক দিয়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান এ অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে তা দখল করে নেয়। এই আক্রমণের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং পার্ল হারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে রয়েছে। পার্ল হারবার প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য হলেও এর সামরিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটি করে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর নজর রাখতে সক্ষম হচ্ছে।


নাগার্নো কারাবাখ

আজারবাইন ও আর্মেনিয়ার মধ্যবর্তী একটি বিতর্কিত ছিটমহলের নাম নাগার্নো কারাবাখ। এই ছিটমহল টি আর্মেনিয়ার খ্রিস্টান অধ্যুষিত। এক সময় এটি আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১৯২৩ সালে এটি আজারবাহিনের অংশ হিসেবে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা লাভ করে। এ নিয়ে খ্রিস্টান ও আজারবাইনের মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। অতঃপর দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর ১৯৮১ সালে ছিটমহলটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইন ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টির উপর হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯৫ সালে পুনরায় এই নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার লোক নিহত এবং প্রায় ৯০ হাজার লোক ইরানে উদ্বাস্ত হিসেবে জীবন যাপন করছে। এখনো এই ছিটমহল টি নিয়ে আজারবাইন ও আর্মেনিয়ায় তথা মধ্য এশিয়ায় এক অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সমস্যাটির এখনো কোন সূরাহা হয়নি। 


মিন্দানাও দ্বীপ 

মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপের নাম মিন্দানাও। দীর্ঘদিন এটি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ছিল। দ্বীপের অধিকাংশ অধিবাসী মরো মুসলিম। ১৯৭২ সালে ফিলিপাইনের স্বৈরশাসক ফার্ডিনান্ড মার্কস ক্ষমতায় এসেই এখানকার মুসলমানদের উপর ব্যাপক দমন নিপীড়ন চালাতে শুরু করে। সেই থেকে মিন্দানাও এর মুসলিম গেরিলা নেতা নুর মিসৌরির নেতৃত্বে মরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (MNLF)  স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা আন্দোলন শুরু করে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ৫০ হাজার লোক হতাহত হয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ ২৪ বছর পর কেন্দ্রীয় সরকার মিন্দানাওকে স্বায়ত্তশাসন দিতে রাজি হয় এবং গত ২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে MNLF এর সাথে একটি চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় সরকার সেখান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং নূর মিসৌরিকে মিন্দানাওয়ের গভর্নর নিযুক্ত করে। বর্তমানে মিন্দানাও একটি স্বায়ত্তশাসিত উপদ্বীপ। 

 

ম্যাকাও 

এশিয়া মহাদেশের একমাত্র উপনিবেশ হচ্ছে ম্যাকাও। চীনের দক্ষিনে অবস্থিত এ ক্ষুদ্র উপনিবেশটি প্রায় ৪৫০ বছর ধরে পর্তুগালের অধীনে থাকে। ১৯৮৭ সালের ১৩ এপ্রিল চীন এবং পর্তুগালের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ২৩ জুন ম্যাকাও চীনের অধিভুক্ত হয় এবং এটি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে চলছে। হংকং থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ম্যাকাও এর আয়তন ৬.৮৭ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ৪ লাখ। দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত ম্যাকাও এর অধিবাসীদের প্রায় ৯৫ শতাংশই চীনা ও বাকি ৫℅ পর্তুগিজ। অফিশিয়াল ভাষা পর্তুগিজ ও চীনা। ম্যাকাও এর একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৫৩০ সালে জর্জ আলভরিস নামক এক পর্তুগিজ নাবিক প্রথম এখানে অবতরণ করেন এবং ১৫৫৭ সালে সরকারিভাবে পর্তুগিজ শাসনাধীনে আসে। ১৮৪৬ সালে ম্যাকাও এর গভর্নর জুয়াও ফেরেরা দ্য আমারাল ম্যাকাওকে শুল্কমুক্ত বন্দর হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৫১ সাল থেকে ম্যাকাও পর্তুগালের একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। পশ্চিমা গণতন্ত্রের দেশ পর্তুগাল ম্যাকাও উপনিবেশ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছে। 


লন্ডনে বাংলা টাউন 

প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি অধ্যুষিত লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের ব্রিকলেনকে সেখানকার সরকারি কাউন্সিল 'বাংলা টাউন' নামকরণের সম্মত হয়েছে। উক্ত কাউন্সিলের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই বাঙালি। স্থানীয় বাঙালি অধিবাসী ও কাউন্সিলদের এলাকার উন্নয়নে অবদান ও দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকলেনের কর্তৃপক্ষ এ নামকরণের সম্মত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে এটি বাস্তবিত হয়। বাংলা টাউনে একটা আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠা এবং টাওয়ার ব্রিজ থেকে ব্রিকলেন পর্যন্ত রিক্সা সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঐ এলাকায় সবগুলো রাস্তার নাম ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখা হয়েছে। ঐ অঞ্চলে বাঙালি অধিবাসীদের অধিকাংশই বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বংশদূত। 


শাত-ইল-আরব 

পারস্য উপসাগরের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে শাত-ইল-আরবের অবস্থান। এটি একটি ব-দ্বীপ। এর দৈর্ঘ্য ২১৯ কিলোমিটার  এবং প্রস্থ ৪০ কিলোমিটার। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে শাত-ইল-আরব গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ইরাক ইরানের যুদ্ধের সূচনা হয় এই শাত-ইল-আরবকে নিয়ে। বহুদিন যাবত এই অঞ্চলটি নিয়ে ইরাক ইরানের মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক বিরাজ করছে। ১৯১৩ সালে কনস্টান্টিনোপল চুক্তির মাধ্যমে শাত-ইল-আরব তুরস্কের এখতিয়ার ভুক্ত হয়। ১৯৩৭ সালে এই চুক্তি কিছুটা সংশোধন করা হয় এবং শাত-ইল-আরবে পৃথিবীর সকল দেশের বাণিজ্যিক নৌযান অবাধে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ইরান চুক্তিটি বাতিল করে এবং সাতইল আরব নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

সাতইল আরব কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা নিয়ে ইরাক ও ইরান উভয় দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ইরান নদীর গভীর অংশকে ধরে সীমানা ভাগ করার পক্ষে। অপরদিকে ইরাক এর বিরোধিতা করছে। কারণ এর ফলে ইরাকের সমুদ্রে পৌঁছাবার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সাত-ইল-আরবই হচ্ছে ইরাকের সমুদ্রে পৌঁছাবার একমাত্র জলপথ। এছাড়া এই পথ হাতছাড়া হয়ে গেলে ইরাক বিদেশি জাহাজের উপর তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে এবং কর ও শুল্ক থেকে বঞ্চিত হবে। এ কারণে ইরাক ও ইরান উভয় দেশের জন্য এ শাত-ইল-আরব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৫ সালে এ সমস্যা সমাধান করার জন্য আলজেরিয়ায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৮০ সালে ইরাক এ চুক্তি বাতিল করে এবং ইরানের সাথে যুদ্ধ করে যা ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। 


পরিশেষেঃ



Next Post Previous Post