মাস্টার্স প্রিলিমিনারি রাষ্ট্রবিজ্ঞান- মৌখিক পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর
(অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)
____________________°___________________
প্রিয় পাঠক এবং মাস্টার্স প্রথম পর্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মাস্টার্স প্রথম পর্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের, "আন্তর্জাতিক রাজনীতি" বই থেকে অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে। আমি মনেকরি আপনারা সবাই জানেন যে, প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ভাইভা পরীক্ষায় বেশ কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে।এছাড়াও মাস্টার্স প্রথম পর্ব পরীক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বইয়ের (ক-বিভাগ) থেকে ১০ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা সাধারন জ্ঞান থাকে। তাই আজ আমি আপনাদের কাছে উক্ত বিষয়ের অতি গুরুত্বপুর্ণ বেশকিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলো তুলে ধরলাম। ভালো ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে আশাকরি আপনারা সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
![]() |
মাস্টার্স প্রিলিমিনারি রাষ্ট্রবিজ্ঞান। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর। আন্তর্জাতিক রাজনীতি। |
১. আন্তর্জাতিক রাজনীতি কি?
উত্তরঃ জাতীয় স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে অপরাপর রাষ্ট্রের সাথে যে সব ব্যবহারিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক চলে তাকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলে অভিহিত করা হয়। গ্রেসন কার্ক বলেন, "আন্তর্জাতিক রাজনীতি হলো সেই শাস্ত্র যা বিভিন্ন জাতীয় রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি এবং সেই সঙ্গে এ সমস্ত নীতির কার্যকারিতা ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।"
২. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে এমন একটি আলোচ্য বিষয়কে বুঝায় যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বহুমুখী এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। টমসনের মতে, "আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিরোধ এবং যে সকল শর্ত ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের উন্নতি বা অবনতি ঘটে তাদের পর্যালোচনাকে বুঝায়।"
৩. আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির তুলনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এখতিয়ার বহু, ব্যাপক ও বিস্তৃত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনীতি সম্পর্ক ছাড়াও অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক সম্পর্কও বিশ্লেষণ করে। পক্ষান্তরে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তু সীমিত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ক্ষমতার খেলার সাথে যুক্ত বিষয় নিয়েই আলোচনায় মগ্ন থাকে। সাধারণভাবে রাজনীতি শব্দটির সাথে বিরোধ বা সংঘর্ষের ধারণা জড়িত। সম্পর্ক শব্দটি সাধারণভাবে সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের পরিস্থিতি দ্যোতক।
৪. আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিধি কতদূর?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি এবং তাদের মধ্যকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ, প্রতিযোগিতা, সমস্যার সমাধান, কূটনীতি, প্রচারণা, অর্থনৈতিক কলাকৌশল প্রভৃতিও বিশ্লেষণ করে।
৫. আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়নের পদ্ধতি কি কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গণে সে সকল অধ্যয়ন পদ্ধতি বহুলভাবে আলোচিত হয়ে থাকে সেগুলো হলো-
- ঐতিহাসিক পদ্ধতি
- পদ্ধতিগত রীতি
- নৈতিক পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি
- পলিসি সায়েন্স পদ্ধতি ও
- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
৬. আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা কি?
উত্তরঃ নিম্নোক্ত কারণ সমূহের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে-
- মানব জাতির অস্তিত্ব ও উন্নয়ন
- বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা
- স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন
- বিশ্বজনীন আইন প্রতিষ্ঠা
- বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
- আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং
- অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৭. জাতীয় রাজনীতি বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ জাতীয় রাজনীতি বলতে মানুষের সেসব কর্মকাণ্ড এবং বিস্তাকে বুঝায় যার সাথে তাদের নিজ দেশের জাতীয় স্বার্থ, কল্যাণ, গৌরব এবং সুখ-শান্তির বিষয় জড়িত থাকে।
৮. আন্তর্জাতিক রাজনীতি কিভাবে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করে?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতি জাতীয় রাজনীতিকে নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেমন-
- অন্যদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার
- অন্য দেশের সাথে সংযোগ স্থাপন
- শক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর প্রভাব বিস্তার
- অর্থনৈতিক সংস্থা গঠন
- কূটনৈতিক কলাকৌশল
- সাহায্য ও ঋণদান এবং
- মতাদর্শগত প্রভার বিস্তার।
৯. জাতীয়তাবাদ কি?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদকে এক কথায় জাতীয় ঐক্যানুভূতি বলা যায়। বিভিন্ন কারণে একই জাতির মধ্যে যে ঐক্যবন্ধন লক্ষ্য করা যায় তাকেই জাতীয়তাবাদ বলা যায়। অধ্যাপক লাস্কির মতে, জাতীয়তাবাদ সাধারণভাবে মানসিকতার ব্যাপার যারা এ অংশীদার, এ ঐক্যবোধ তাদেরকে বাকি মানব সমাজ থেকে স্বতন্ত্র রূপে চিহ্নিত করে।
১০. জাতীয়তাবাদের উপাদানগুলো কি?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদের উপাদানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- বংশগত ঐক্য
- ভাষাগত ঐক্য
- ধর্মগত ঐক্য
- রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্য
- অর্থনৈতিক সমস্বার্থ ইত্যাদি।
১১. উগ্র জাতীয়তাবাদ কি সভ্যতার প্রতি হুমকি স্বরূপ?
উত্তরঃ উগ্র জাতীয়তাবাদকে মানব সভ্যতার ও আন্তর্জাতিকতার ক্ষেত্রে বড়ই অন্তরায় বা হুমকি বলে মনে করা হয়। জাতীয়তাবাদের অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে এক জাতি নিজেদের সম্পর্কে গর্ববোধ এবং অপর জাতির প্রতি ঘৃণাভাব প্রকাশ করে। এভাবে বিকৃত রূপ ধারণ করে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষের সম্পর্ক সৃষ্টি করে। তার ফলে মানব সভ্যতা সংকটের সম্মুখীন হয়।
১২. জাতীয় শক্তি কি?
উত্তরঃ নিজের স্বার্থ ও নীতি অনুযায়ী অন্য রাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাকেই আমরা জাতীয় শক্তি বা National Power বলতে পারি। অধ্যাপক লাস্কির মতে, জাতীয় শক্তির অর্থ হলো অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর কোন রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা এবং নিজের উপর অন্য রাষ্ট্রের অনুরূপ প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা প্রতিহত করার সামর্থ্য।
১৩. আন্তর্জাতিক রাজনীতি কি শক্তির রাজনীতি?
উত্তরঃ শক্তিই হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চূড়ান্ত নির্ধারক। কারণ শক্তি দিয়েই বিচার করা হয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি জাতি কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শক্তি যে কোন রাষ্ট্রকে বিশ্ব রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আসীন পেতে সাহায্য করে। একারণেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে অনেক সময় শক্তি রাজনীতি (Power Politics) নামে অভিহিত করা হয়।
১৪. জাতীয় শক্তির উপাদানসমূহ কি?
উত্তরঃ জাতীয় শক্তির উপাদান মূলত দু'প্রকার যথা-
- স্থায়ী উপাদানঃ ভৌগোলিক উপাদান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, সামরিক উপাদান, শিল্পের উন্নতি, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি।
- অস্থায়ী উপাদানঃ কূটনীতির মান, জাতীয় নেতৃত্ব, সামাজিক উপাদান, জাতীয় চরিত্র ও মনোবল, আন্ত র্জাতিক অবস্থান, রাজনৈতিক কাঠামো ইত্যাদি।
১৫. সামরিক শক্তির উপাদানসমূহ কি কি?
উত্তরঃ সামরিক শক্তির উপাদানগুলো হলো-
- সেনাবাহিনীর দক্ষতা
- যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র
- সেনাবাহিনীর আয়তন বা সৈন্যসংখ্যা
- নেতৃত্ব এবং
- জাতীয় সংহতি।
১৬. জাতীয় শক্তি ব্যবহারের পদ্ধতিগুলো কি কি?
উত্তরঃ জাতীয় শক্তি ব্যবহারের চারটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
- বল প্রয়োগ
- প্ররোচণা
- পুরস্কার
- শাস্তি।
১৭. কূটনীতি কি?
উত্তরঃ সাধারণ অর্থে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে সরকারি সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে বুদ্ধি এবং কৌশলের প্রয়োগই হলো কূটনীতি। Geogre kennan বলেন, "কূটনীতি বিভিন্ন সরকারের মধ্যে সংযোগ সাধনের উপায় হিসেবে কাজ করে। সংক্ষেপে বলা যায় যে, কূটনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে সংযোগ সাধনের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়।
১৮. কোথায় কখন সর্বপ্রথম কূটনৈতিক কলা-কৌশল উদ্ভাবিত ও বিকশিত হয়?
উত্তরঃ সুদূর প্রাচীনকালে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতি হিসেবে কূটনীতির উদ্ভব ঘটেছিল। প্রাচীন চীন, ভারত, মিসর, গ্রিক, রোম, ইতালি বাইজেন্টাইন প্রভৃতি রাষ্ট্রে কূটনৈতিক কলাকৌশল উদ্ভাবিত ও বিকশিত হয়েছিল।
১৯. কখন কূটনৈতিক পদ্ধতি এবং নিয়ম কানুন আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে?
উত্তরঃ উনবিংশ শতকে নেপোলিয়নের পরিচালনাধীন যুদ্ধের সমাপ্তির পর আই-লা-স্যাপেলের কংগ্রেসের নিয়মাবলীতে কূটনৈতিক পদ্ধতি এবং নিয়ম-কানুন আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
২০. তুমি কিভাবে কূটনীতির শ্রেণী বিভাগ করবে?
উত্তরঃ কূটনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, পরিচালনার ধরন অনুসারে কূটনীতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- গোপন কূটনীতি
- প্রকাশ্য কূটনীতি
- সম্মেলনের মাধ্যমে পরিচালিত কূটনীতি
- ব্যক্তিগত ও সর্বাত্মক কূটনীতি ইত্যাদি ভাবে শ্রেণী বিভাগ করতে পারা যায়।
২১. ব্যক্তিগত কূটনীতি কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান, প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণকে ব্যক্তিগত কূটনীতি বলে।
২২. কূটনীতি ও পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে কি পার্থক্য বিদ্যমান?
উত্তরঃ কূটনীতিঃ কূটনীতি শব্দটির একাধিক অর্থ আছে। কখনো এটাকে পররাষ্ট্রীয় নীতির সাথে এক করে দেখা হয় আবার কখনো একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা বা যোগাযোগকে কূটনীতি বলে। অধ্যাপক নিকলসন বলেন, "কূটনীতি হচ্ছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পেশাদার ও অভিজ্ঞ কর্মচারী দ্বারা বৈদেশিক নীতির প্রয়োগ। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের মতাদর্শগত লক্ষ্য সীমায় উত্তরণের প্রয়াসে সে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করা হয় তার সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনই হলো কূটনীতি।
পররাষ্ট্রনীতি বা বৈদেশিক নীতিঃ পররাষ্ট্র নীতি বলতে বাহ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে কোন রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা এবং ক্রিয়াকলাপকে বুঝায়। প্রকৃতপক্ষে পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌছার নীতি। আর কূটনীতি হচ্ছে পেশাদার অভিজ্ঞ কর্মচারী দ্বারা সে নীতির প্রয়োগ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্পর্কে কোন রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, বর্তমান ও প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের ক্রিয়া-কলাপের সমষ্টিই হলো পররাষ্ট্রনীতি যা বহির্বিশ্বে কূটনীতিকদের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কূটনীতি ও পররাষ্ট্র নীতি ওতপ্রোতাভাবে জড়িত। তবে পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি এক জিনিস নয়। উভয়ের অর্থ ভিন্ন এবং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। তবে এ দু'টি একে অপরের পরিপূরক। জে আর চাইল্ডের মতে, "পররাষ্ট্রনীতি পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়বস্তু নিয়ে গঠিত। প্রকৃতপক্ষে কূটনীতি বলতে পররাষ্ট্র নীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়াকে বুঝায়।
২৩ঃ কূটনৈতিক অব্যাহতি বা খালাস কি?
উত্তরঃ কূটনীতিবিদগণ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কতকগুলো বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি ভোগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে কূটনীতিবিদদেরকে সে সকল অধিকার এবং বিধিসম্মত বিষয় থেকে যে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকেই কূটনৈতিক অব্যাহতি বা খালাস বলে।
২৪. কূটনৈতিক অব্যাহতি বা খালাস তুমি কেন সমর্থন কর?
উত্তরঃ কূটনীতিবিদগণ শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের যদি কিছুটা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা না হয় তবে তারা কাজে উৎসাহ হারাবেন। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এসব কারণে আমি কূটনৈতিক অব্যাহতি সমর্থন করি।
২৫. কূটনৈতিক অবক্ষয় বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ সপ্তদশ শতক থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কূটনীতির সুবর্ণ যুগ ছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়। এ সময় বৈদেশিক বিষয়াদি পরিচালনা করার কলাকৌশল হিসেবে কূটনীতির ভূমিকা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। কূটনীতির এই পরিবর্তনকে অনেকে কূটনীতির অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
২৬. সাম্রাজ্যবাদ কি?
উত্তরঃ উনবিংশ শতাব্দীর তিনের দশকে নেপোলিয়নের অনুগামীদের সনাক্ত করার জন্য ফ্রান্সে 'Imperialite শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। প্রথমে এটিকে নিন্দাসূচক অর্থে ব্যবহার করা হত কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজ লেখক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এর নিন্দাসূচক দিকটি পরিহার করে বৃহত্তর ব্রিটেন গঠনের নীতিরূপে প্রয়োগ করেন। T. Moon-এর মতে, "অ-ইউরোপীয় দেশীয়দের উপর সম্পূর্ণ বিজাতীয় ইউরোপীয় জাতিসমূহের প্রাধান্যই হলো সাম্রাজ্যবাদ।" স্যুমান-এর মতে, "একটি দেশের জনগণের উপর বল প্রয়োগ ও হিংসার মাধ্যমে বৈদেশিক শাসন চাপিয়ে দেয়াকে সাম্রাজ্যবাদ বলে।" উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করাকে সাম্রাজ্যবাদ বলা যায়।
২৭. সাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্য কি?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- অর্থনৈতিক লাভ
- অন্য রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণে আনা
- উৎপাদন ব্যবস্থা ও পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ
- মহাজনি মূলধনের সৃষ্টি।
- পুঁজি রপ্তানি
- বৈদেশিক বাজার নিয়ন্ত্রণ ও
- বিশ্বের ভূ-খণ্ড বণ্টন।
২৮. সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ কি?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ হলো-
- অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়
- জাতীয় সভ্যতাকে গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি
- জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- বিশ্বের অনুন্নত সভ্যতাকে উন্নত করার প্রয়াস
- নিজ রাষ্ট্রের জনগণকে অন্য রাষ্ট্রে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
২৯. সাম্রাজ্যবাদের পতনের কারণ কি?
উত্তরঃ স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থানই সাম্রাজ্যবাদের পতনের অন্যতম কারণ।
৩০. সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান অবস্থান কি?
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ টিকে আছে। বর্তমান সাম্রাজ্যবাদকে টিকে রাখার জন্য নতুন কৌশল হিসেবে অর্থনীতিকে পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের জের হিসেবে বিভিন্ন জোট গঠিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, সাম্রাজ্যবাদ এখন অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে টিকে আছে।
৩১. উপনিবেশবাদ কি?
উত্তরঃ ল্যাটিন শব্দ কলোনিয়া থেকে ইংরেজি 'কলোনী' বা উপনিবেশ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে। সাধারণভাবে উপনিবেশবাদ বলতে বুঝায় রাষ্ট থেকে বিচ্ছিন্ন কোন একটি ভূ-খণ্ড উক্ত রাষ্ট্রের কাছে নির্দিষ্টভাবে আনুগত্য প্রকাশ করে। উপনিবেশবাদ বলতে Repert Emerson বলেন, "উপনিবেশবাদ হলো কোন বিদেশী জনসাধারণের উপর দীর্ঘ সময় ধরে শাসন প্রতিষ্ঠা এবং তা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা।
৩২. নব্য উপনিবেশবাদ কি?
উত্তরঃ নব্য উপনিবেশবাদ বলতে এক নতুন ধরনের পরিস্থিতিকে বুঝায়। যেখানে নতুন কৌশলের মাধ্যমে সাবেকি সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ নিজের আধিপত্য এবং শোষণ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। নব্য উপনিবেশবাদ হলো নতুন পথে পূর্বের সাম্রাজবাদী শোষণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা বিশেষ। সাম্রাজ্যবাদ যতটা উপলব্ধি করা যায়, নয়া উপনিবেশবাদ ততটা উপলব্ধি করা যায় না। নয়া উপনিবেশবাদ স্থাপিত হয় একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা স্বীকার করে, গোপনে লোকচক্ষুর আড়ালে অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে।
৩৩. "Dollar and gun boat diplomacy" কি?
উত্তরঃ ল্যাটিন আমেরিকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক শতকেরও বেশি সময় ধরে অর্থ, ঋণ, অস্ত্র-শস্ত্রের সাহায্যের নামে নব্য উপনিবেশ কায়েম করেছে। এ নীতিকে অনেক সমালোচক 'Dollar and gun boat diplomacy বলে অভিহিত করেছেন।
৩৪. নব্য উপনিবেশবাদের আধিপত্য বিস্তারের পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর?
উত্তরঃ আজকের দিনে নব্য উপনিবেশবাদী দেশ কেবল সামরিক শক্তির সাহায্যেই নিজের স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করে না, বরং অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ, মতাদর্শগত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা, সামরিক জোট গঠন, সামরিক ঘাঁটি স্থাপন, উপজাতীয় বিরোধ সৃষ্টি, অসম বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন, সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতামণক কাজে উৎসাহ দান, কঠোর শর্তে ঋণ প্রদান, আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ, কলা-কৌশলগত দিক থেকে দরিদ্র দেশগুলোকে পরনির্ভরশীল করে তোলা এবং সর্বোপরি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব জায় রাখার চেষ্টা করে।
৩৫. উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ উদ্দেশ্যগত দিক থেকে উপনিবেশবাদ এবং নব্য উপনিবেশবাদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। দুটোরই উদ্দেশ্য হলো শোষণ। উপনিবেশবাদ এবং নব্য উপনিবেশবাদের মূল পার্থক্য হলো পদ্ধতিগত। মূলত উপনিবেশবাদ এবং নব্য উপনিবেশবাদ দুটোই স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রকে শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের দুটো পদ্ধতি, যাদের একটি পূর্বে প্রচলিত ছিল (অর্থাৎ উপনিবেশবাদ) এবং বর্তমানে এটি পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে নব্য উপনিবেশবাদ হিসেবে পরিচিত।
৩৬. কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের নাম বল?
উত্তরঃ আমরা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের তালিকায় নিম্নলিখিত দেশগুলোর নাম উল্লেখ করতে পারি গ্রেটব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন, জাপান, বেলবিজয়াম, নেদারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি।
৩৭. কিভাবে নব্য উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠা পায়?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশিকতার বিলুপ্তি ঘটলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পূর্বের উপনিবেশগুলোকে কৌশলে আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে তাদের উপর নির্ভরশীল করে তোলে এবং ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা প্রাপ্ত রাষ্ট্রসমূহের উপর পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। এভাবেই নব্য উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠা পায়।
৩৮. যৌথ নিরাপত্তা বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ সকল রাষ্ট্রের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং শান্তির অনিবার্যতার ধারণা থেকেই যৌথ নিরাপত্তার উদ্ভব ঘটেছে। সেলেইচারের মতে, "প্রকৃতপক্ষে যৌথ নিরাপত্তা হলো রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে কোন রাষ্ট্র অন্য কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন নিষিদ্ধ কার্যকলাপে লিপ্ত হলে অন্য সকলে ঐ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং আক্রান্ত রাষ্ট্রের অনুকূলে অগ্রসর হয়।" সংক্ষেপে যৌথ নিরাপত্তা হলো প্রচলিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য এবং তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার জন্য পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
৩৯. যৌথ নিরাপত্তার ধারণা কখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংযোজিত হয়?
উত্তরঃ যৌথ নিরাপত্তার ধারণা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংযোজিত হয়েছে। জাতিসংঘের চুক্তিপত্রের মাধ্যমে যৌথ নিরাপত্তা একটি তাত্ত্বিক রূপ অর্জন করেছিল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদেও যৌথ নিরাপত্তার মৌল বৈশিষ্ট্যসমূহের গুরুত্ব রয়েছে।
৪০. যৌথ নিরাপত্তর ধারণা কখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি উইলসনের বক্তৃতা বা চৌদ্দ দফা কর্মসূচি থেকেই যৌথ নিরাপত্তা ধারণার উদ্ভব হয় এবং তখন থেকেই যৌথ নিরাপত্তার ধারণা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
৪১. যৌথ নিরাপত্তার একটি সার্থক প্রচেষ্টার উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ নেপোলিয়নের অধীনে ফ্রান্স ইউরোপীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে শক্তিসাম্য বিনষ্ট করে যে অভাবনীয় ও অর্ভূতপূর্ব শক্তি অর্জন করেছিল তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্যে গঠিত হয়েছিল "The concert of Europe." ফ্রান্সের পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ে বাঁধা দান করা এবং কোন রাষ্ট্রই যাতে অপর রাষ্ট্র অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী হতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখাই ছিল এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য। সুতরাং Concert of Europe গঠনের মাধ্যমে আমরা যৌথ নিরাপত্তার একটি সার্থক প্রচেষ্টা দেখতে পাই।
৪২. শান্তিরক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবে যৌথ নিরাপত্তার সাফল্যের শর্ত কি?
উত্তরঃ শান্তি রক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবে যৌথ নিরাপত্তার সাফল্যের শর্তগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- যৌথ নিরাপত্তা বিপুল পরিমাণ শক্তি ও সামর্থ্যকে এক জায়গায় সমবেত করতে হবে।
- যৌথ নিরাপত্তার রাষ্ট্রকে জাতীয় স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে আন্তর্জাতিক স্বার্থ বা জনকল্যাণের কথা ভাবতে হবে।
- যৌথ নিরাপত্তার সাফল্যের জন্য প্রয়োজন নিরস্ত্রীকরণ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের সংকোচন।
- যৌথ নিরাপত্তার সাফল্যের জন্য সার্বজনীনতা প্রয়োজন।
- যৌথ নিরাপত্তার সাফল্যের অন্যতম শর্ত হলো যৌথ নিরাপত্তার ভিত্তি, ন্যায়বোধ ও আদর্শবাদ।
৪৩. কখন, কেন লিগ অব নেশনস নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে উঠে?
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে উঠে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সমবেতভাবে পৃথিবীর নিরাপত্তা ও শাস্তি রক্ষা করা।
৪৪. জাতিসংঘ কেন গড়ে উঠে?
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে উঠে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সমবেতভাবে পৃথিবীর নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা করা। রাজনৈতিক কারণে লিগ অব নেশনস ব্যর্থ হলে মানবতার কল্যাণে যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব গঠনে বিশ্বমহল উদগ্রীব হয়ে উঠে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করে ১৯৪৫ সালে আবার প্রতিষ্ঠিত হয় 'জাতিসংঘ'।
৪৫. ভেটো কি?
উত্তরঃ জাতিসংঘ সনদের ২৭ (৩) নং ধারায় বলা হয়েছে যে অন্যান্য বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের জন্য নয় জন সদস্যের হ্যাঁ সূচক সম্মতি প্রয়োজন। এর মধ্যে ৫ জন স্থায়ী সদস্যের হ্যাঁ সূচক অবশ্যই থাকতে হবে। ফলে পাঁচ জন স্থায়ী সদস্যের যে কোনো একজন যদি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় তাহলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে না। এই অসম্মতি জানানোই হলো 'ভেটো'।
৪৬. জাতিসংঘের অধীনে যৌথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা কি সর্বত্র সমানভাবে কার্যকর হয়েছে?
উত্তরঃ জাতিসংঘের অধীনে যৌথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা সর্বত্র সমানভাবে কার্যকর হয়নি। যেখানে বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থ রয়েছে সেখানে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
৪৭. শক্তি-সাম্য তত্ত্ব কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তির সমতা বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাকে 'শক্তির ভারসাম্য' বা Balance of power বলে। অধ্যাপক Fay বলেন, "এটা বিভিন্ন জাতির শক্তির এমন একটি ভারসাম্য। যার দ্বারা কাউকেই এমন শক্তিশালী হতে দেয়া হয় না, যাতে অন্যের উপরে সে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস পায়।"
৪৮. শক্তি-সাম্য রক্ষার কৌশলগুলো কি?
উত্তরঃ শক্তি-সাম্য রক্ষার কতকগুলো কৌশল রয়েছে। যেমন-
- জোট ও প্রতিদ্বন্দ্বী জোট গঠন
- ক্ষতিপূরণ
- হস্তক্ষেপ ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত
- গোপনে শত্রু পক্ষের ক্ষমতা হ্রাস
- বিভাজন ও শাসননীতি
- বাফার স্টেট বা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গঠন এবং
- অস্ত্র উৎপাদন ও নিরস্ত্রীকরণ।
৪৯. কখন থেকে শক্তি-সাম্য নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে?
উত্তরঃ যিশুখ্রিস্টের জন্মের বহুপূর্ব থেকে শক্তি-সাম্য সম্পর্কে রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা পরিচিত হলেও ১৬৪৮ সালে Treaty of west phalia স্বাক্ষরের পর যখন আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠে, তখন থেকেই শক্তি-সাম্য নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
৫০. শক্তি-সাম্য তত্ত্ব কি পূর্বের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে?
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত শক্তি-সাম্য তত্ত্বটি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। তবে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অবসানে সাবেকি শক্তি-সাম্য তত্ত্বের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ১৯১৯-১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ঐ তত্ত্বের প্রভাব ছিল খুবই ক্ষীণ। জাতিসংঘের উদ্যোগে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ায় এ তত্ত্বের প্রভাব হ্রাস পায়। কাজেই শক্তি-সাম্যের সাবেকি ধারণা বর্তমানে আর প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
৫১. পরাশক্তি কি?
উত্তরঃ পরাশক্তি বলতে এমন একক শক্তিশালী রাষ্ট্রকে বুঝায়, যে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের উপর নিজের ইচ্ছা আরোপ করতে পারে। অনেকের মতে, বৃহৎ শক্তি বলতে এমন রাষ্ট্রকে বুঝায় যার নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে একমাত্র তাদের রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সারকথা হলো বৃহৎ শক্তি বলতে এমন শক্তিকে বুঝায় যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উপর নিজের ইচ্চা আরোপের সামর্থ্য অর্জন করেছে।
৫২. শক্তি ও সামর্থ্যের বিবেচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তরঃ শক্তি ও সামর্থ্যের বিবেচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. বৃহৎ বা পরাশক্তি, ২. মধ্যবর্তী শক্তি এবং ৩. ক্ষুদ্র শক্তি।
৫৩. দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর কোন দু'টি পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটে?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দু'টি মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। যার একটি হলো পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অপরটি হলো সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া।
৫৪. বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একক পরাশক্তি দেশ কোনটি?
উত্তরঃ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙ্গণের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক এবং একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হিসেবে পরিগণিত।
৫৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে দু'টি ক্ষমতার জোট গঠিত হয়েছিল সে দু'টি জোটের নাম বল?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র শক্তি ও অক্ষশক্তি নামে দু'টি ক্ষমতার জোট সৃষ্টি হয়েছিল।
৫৬. রায়ু যুদ্ধ বা Cold war এর অবসান ঘটে?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এ দু'টি রাষ্ট্রই ছিল সবচেয়ে শক্তিধর। তখন তাদের মধ্যে যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয় তা Cold war বা ঠাণ্ডা লড়াই হিসেবে পরিচিত।
৫৭. কখন ব্রায়ু যুদ্ধ বা Cold war এর অবসান ঘটে?
উত্তরঃ আশির দশকের মধ্যভাগে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতায় গরবাচেভের আগমন, পেরেস্ত্রোয়কা ও গ্লাসনস্ত-এর নীতি গ্রহণ, একতরফা নিরস্ত্রীকরণের ঘোষণা, পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে ঐতিহ্যগত সম্পর্ককে নতুনভাবে মূল্যায়ন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রায়ুযুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতনও ফেডারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বি-মেরু ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। পরিসমাপ্তি ঘটে অর্ধশতাব্দীর রায়ু যুদ্ধ পর্বের।
৫৮. কখন থেকে স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা হয়?
উত্তরঃ ১৯১৭ সালে বল শেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই রায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়।
৫৯. দ্বি-মেরুবাদ বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক বিশ্বে দ্বি-মেরুবাদের জন্ম হয়। একদিকে পুঁজিবাদী বিশ্বের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত বিশ্ব দু'টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একেই দ্বি-মেরুবাদ বলা হয়।
৬০. বহু মেরুকরণ বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ ১৯১৫ সালে Holly Allience-এর পর আন্তর্জাতিক ক্ষমতা ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই পাঁচটি শক্তির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণকে বহু মেরুকরণ বলে।
৬১. বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোন মেরুর পর্যায়ভুক্ত?
উত্তরঃ বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অর্থনৈতিক জোট গঠনের মাধ্যমে (মাসট্রেকট, আকটা, নাফটা) বহু মেরুকরণ চলছে।
৬২. আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার শান্তিপূর্ণ উপায়গুলো কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার শান্তিপূর্ণ উপায়গুলো হলো-
- আলাপ-আলোচনা,
- শুভেচ্ছা ও মধ্যস্থতা,
- অনুসন্ধান এবং আপোষ-মীমাংসা এবং
- সালিশি ও বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি।
৬৩. বাফার স্টেট বা সংঘর্ষ নিবারক রাষ্ট্র কি?
উত্তরঃ দুটি বৃহৎ শক্তির মাঝখানে অবস্থিত কোন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটিকে বাফার স্টেট হিসেবে পরিগণিত করা হয়।
৬৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাফার স্টেট রাষ্ট্র ছিল কোনটি?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাফার স্টেট রাষ্ট্র ছিল বুলগেরিয়া।
৬৫. কোন কোন রাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা আছে?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও চীনের ভেটো ক্ষমতা আছে।
৬৬. যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা কি কি?
উত্তরঃ যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে আমরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত জাতিপুঞ্জ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত জাতিসংঘের কথা বলতে পারি।
৬৭. কখন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।
৬৮. কখন লিগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সমগ্র মানব জাতিকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। কাজেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রোউইলসন বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য বিখ্যাত ১৪ দফা পেশ করেন যার শেষ দফার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের উল্লেখ ছিল। এরই প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের ২০ই জানুয়ারি অব নেশনস প্রতিষ্ঠিত হয়।।
৬৯. জাতিপুঞ্জ বা লিগ অব নেশন্স-এর সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উত্তরঃ জাতিপুঞ্জের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১টি।
৭০. জাতিপুঞ্জ কত বছর স্থায়ী ছিল?
উত্তরঃ জাতিপুঞ্জ (১৯১৪-১৯৪৪) প্রায় ৩০ বছর স্থায়ী ছিল।
৭১. জাতিসংঘ কখন গঠিত হয়?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসলীলার প্রেক্ষিতে পৃথিবীর মানুষ আরেকটি আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট-এর প্রস্তাবনায় ১৯৪৫ সালের ২৪ শে অক্টোবর ৫১টি দেশের সমন্বয়ে জাতিসংঘ গঠিত হয়।
৭২. জাতিসংঘের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?
উত্তরঃ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কতিপয় উদ্দেশ্য আছে, যা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে মেনে চলতে হয়। যেমন-
- আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
- আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করে যৌথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- প্রত্যেক রাষ্ট্রের সমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করে নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবর্গের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা।
- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী সমগ্র মানব গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, বৈজ্ঞানিক ও কৃষ্টিগত সমস্যার সমাধান করা।
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও শ্রমিক কল্যাণের উন্নতি সাধন করা।
- জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবিক মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ভাব গড়ে তোলা।
৭৩. পররাষ্ট্র নীতি কি?
উত্তরঃ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত ক্রিয়াকলাপ এবং আচরণের ধরন নিয়েই পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠে। চার্লস বার্টন মার্শাল বলেন, পররাষ্ট্র নীতি বলতে রাষ্ট্র যে সকল ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করছে অথবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা করতে চাইছে তাদের সমষ্টিকে বোঝায়। অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতি হলো কোন রাষ্ট্রের সেসব কার্যাবলির ধারা যা সে দেশ তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তার সীমারেখার বাইরে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সম্পাদন করে থাকে।
৭৪. পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে নিহিত থাকে দীর্ঘকাল মেয়াদী ও স্বল্পকাল মেয়াদী স্বার্থ, যা কোন দেশ সব সময়ই সংরক্ষণ করতে এবং সেই সাথে বাড়াতে চেষ্টা করে।
৭৫. বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র নীতির মূল কথা কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা হচ্ছে সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।
৭৬. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন কি?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই পরাশক্তির দাপটে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার মানসে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো সম্মিলিতভাবে নিজেদের রক্ষার জন্য যে আন্দোলনের সূচনা করে তাকেই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলে। প্রকৃতপক্ষে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন হলো সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশিকতাবাদ ও বর্ণ-বৈষম্য বিরোধী একটি আন্দোলন।
৭৭. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা কারা?
উত্তরঃ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তাগণ হলেন-
- ভারতের পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু
- যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো
- ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ ও
- মিসরের নাসের।
৭৮. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম সম্মেলন কোথায়, কখন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৬১ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত হয়।
৭৯. বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশ্য কি কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে। যেমন-
- নিজস্ব আত্মরক্ষা
- অন্য ভূ-খণ্ডের উপর হস্তক্ষেপ না করা
- নিজস্ব সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং
- অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়ক হওয়া ইত্যাদি।
৮০. বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি কি জোট নিরপেক্ষ?
উত্তরঃ জোট নিরপেক্ষ নীতির সকল বৈশিষ্ট্যই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে বিদ্যমান। তথাপিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে আমরা সম্পূর্ণভাবে জোট নিরপেক্ষ বলতে পারি না। কেননা, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশের সাথে জোটভুক্ত হয়েছে।
৮১. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য চুক্তিগুলো কি কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের সাথে সম্পাদিত ভারতের উল্লেখযোগ্য চুক্তিগুলো হলো-
- ১৯৭২ সালে মৈত্রী ও শান্তিচুক্তি
- ১৯৮১ সালে তালপট্টি চুক্তি
- ১৯৯২ সালের ২৬ শে জুন তিনবিঘা করিডোর চুক্তি
- ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা পানি চুক্তি উল্লেখযোগ্য।
৮২. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা কত?
উত্তরঃ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা ১১৩।
৮৩. জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব কততম এবং তাঁর নাম কি?
উত্তরঃ বর্তমানে জাতিসংঘের মহাসচিবের নাম বানকি মুন। তিনি জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব। তিনি আফ্রিকা মহাদেশের ঘানার অধিবাসী।
৮৪. জাতিসংঘের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত?
উত্তরঃ জাতিসংঘের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৮৫টি স্বাধীন দেশ।
৮৫. জাতিসংঘের শাখা কয়টি এবং কি কি?
উত্তরঃ জাতিসংঘের ৬টি শাখা আছে। সেগুলো হল-
- সাধারণ পরিষদ
- নিরাপত্তা পরিষদ
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
- অছি পরিষদ
- আন্তর্জাতিক আদালত ও
- সচিবালয়।
৮৬. বাংলাদেশ কখন জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে?
উত্তরঃ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।
৮৭. সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কখন বসে?
উত্তরঃ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার বসে।
৮৮. নিরাপত্তা পরিষদ কতজন সদস্য নিয়ে গঠিত?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ ৫টি স্থায়ী সদস্য এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসহ মোট ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়।
৮৯. নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহ কি কি?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো-
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
- ফ্রান্স
- রাশিয়া
- যুক্তরাজ্য ও
- চীন।
৯০. আন্তর্জাতিক আদালত কত জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত?
উত্তরঃ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত ১৫ জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত। বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদ ৯ বছর।
৯১. আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর নেদারল্যাণ্ডের হেগ শহরে অবস্থিত।
৯২. কমনওয়েলথ কি?
উত্তরঃ জাতিসংঘের পর বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র সমিতি হলো কমনওয়েলথ। ১৯৬৫ সালে কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় বিশ্বের যেসব দেশ ও অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনাধীনে ছিল তারাই এর সদস্য। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৫৩টি। ইংল্যান্ডের রাজা বা রানী কমনওয়েলথ-এর প্রতীক প্রধান।
৯৩. বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-এর কততম সদস্য?
উত্তরঃ বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-এর ৩২-তম সদস্য।
৯৪. ন্যাটো কি?
উত্তরঃ ন্যাটো একটি সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, কানাডা, ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে, পর্তুগাল, নেদারল্যাণ্ড ও আইসল্যাণ্ড নিয়ে 'NATO' বা North Atlantic treaty organization.
৯৫. ওয়ারশ (WARSAW) কি?
উত্তরঃ সামরিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের একটি পাল্টা ব্যবস্থা। ১৯৫৫ সালের ১৪ই মে ওয়ারশ জোটের জন্ম হয়েছিল।
৯৬. সিয়াটো (SEATO) কি?
উত্তরঃ সিয়াটো (SEATO) হলে South East Asia Treaty Organization. ইহা একটি সামরিক জোট। ১৯৫৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর সিয়াটো গঠিত হয়।
৯৭. সিয়াটোর সদস্য দেশগুলো কি কি? এর সদর দফতর কোথায়?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও থাইল্যাণ্ড-এর স্বাক্ষরকারী সদস্য। এর সদর দফতর থাইল্যাণ্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত।
৯৮. সাফটা কি?
উত্তরঃ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান শুল্ক প্রতিবন্ধকতার অপসারণ এবং শুল্ক রেয়াতের মাধ্যমে বাণিজ্য উদারিকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাপটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৯৯. আসিয়ান কি?
উত্তরঃ আসিয়ান (ASEAN) হলো Association of South East Asian Nation, আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো-ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ফিলিপাইন ও থাইল্যাণ্ড। বর্তমান এর সদস্য সংখ্যা ৭। ১৯৬৭ সালের ৮ই আগস্ট এর জন্ম হয়।
১০০. G-৪ (জি-৮) কি?
উত্তরঃ ৭ জাতি গোষ্ঠী বা জি-৭ শিল্পোন্নত দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক জোট। ১৯৮৫ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, জার্মানি ও ব্রিটেনের সমন্বয়ে এ জোট গঠিত হয়।
১০১. অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কি?
উত্তরঃ অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মানবিক সংস্থা। এর কাজের পরিধি বিশ্বব্যাপী। এ সংস্থা ১৯৬১ সালে গঠিত হয়। এর সদর দফতর লন্ডনে অবস্থিত।
১০২. সার্ক কি?
উত্তরঃ সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। ১৯৮৫ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ নিয়ে সার্ক গঠিত হয়।
১০৩. সার্কের প্রথম ও শেষ শীর্ষ সম্মেলন কখন, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ঢাকায় ১৯৮৫ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এবং ১০ম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শ্রীলংকায় ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
১০৪. সার্ক সচিবালয় কোথায় অবস্থিত?
উত্তর। সার্ক (SAARC) সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমুণ্ডে অবস্থিত।
১০৫. পার্বত্য শান্তি চুক্তি কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাই পার্বত্য শান্তিচুক্তি নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সবশেষেঃ প্রিয় পাঠক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় পত্র "আন্তর্জাতিক রাজনীতি" বইয়ের আলোকে আজ প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স মৌখিক পরীক্ষার জন্য উপরোক্ত সাধারণ জ্ঞান কুইজ প্রশ্ন ও উত্তর উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনারা যদি উপরোক্ত অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আশাকরি আপনাদের প্রিলিমিনারি ভাইভা পরীক্ষার জন্য খুবই উপকার হবে।