বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
মাস্টার্স শেষ পর্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয় কোড : ৩১১৯০৯
নিরাপত্তা অধ্যয়ন (Security Studies)
রচনামূলক প্রশ্নবলি
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লিখ।
অথবা
বাংলাদেশে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের সার্বিক কূটনৈতিক, খাদ্য, জ্বালানি, সামরিক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ারোধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক ও বিস্তৃত। নিরাপরা অধ্যয়ন একটি বহুমাত্রিক শব্দ, যার ব্যবহার ও তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও বিশাল। সুতরাং বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে বিভিন্ন রকম নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:
১. ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। নিরাপত্তা অধ্যয়নের বহুমাত্রিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
২. প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধঃ
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সবচেয়ে সংকটপূর্ণ শব্দ হলো নিরাপত্তা। সুতরাং নিরাপত্তা অধ্যয়নের নানাবিধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ ও মোকাবিলা করা যায়।
৩. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনঃ
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তা অধ্যয়নের বৈষয়িক জ্ঞানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
৪. জ্বালানি নিরাপত্তাঃ
জ্বালানি সংকট নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গবেষণালব্ধ ও বাস্তবিক জ্ঞানের প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের জ্বালানির যেসব উপকরণ বিদেশে পাচার হয় এবং বিদেশি জ্বালানির নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়ন প্রয়োজন।
৫. খাদ্য নিরাপত্তাঃ
একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় খাদ্য নিরাপত্তায় নিরাপত্তা অধ্যয়নের বৈষয়িক জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে।
৬. অর্থনৈতিক আগ্রাসন প্রতিরোধঃ
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় বাজার দখল করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করার জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
৭. ঘাতক ব্যাধি রোধঃ
বিশ্বায়নের সুফলের কারণে এক দেশের মানুষ সহজেই অন্যদেশে যাতায়াত করতে পারে। অবাধ যাতায়াতের কারণে রোগ ও মরণব্যাধি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। সুতরাং বাংলাদেশের নিরাপত্তা অধ্যয়নের মাধ্যমে ঘাতক ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
৮. বৈদেশিক সাহায্যের কুফল জানাঃ
স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র থেকে বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু কিছু উন্নত রাষ্ট্র সাহায্য ও অনুদানের নামে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই বৈদেশিক সাহায্যের কুফল সম্পর্কে জানতে নিরাপত্তা অধ্যয়ন খুবই জরুরি।
৯. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনঃ
বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। মূলত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও জৈবিক নিরাপত্তার অভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা অধ্যয়নের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব।
১০. ভূরাজনৈতিক জ্ঞান বুদ্ধিঃ
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার অধীনে থাকার ফলে এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশ ও চর্চার সুযোগ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম, যার প্রভাব ভূরাজনৈতিক জ্ঞানের উপর পড়ে। সুতরাং নিরাপত্তা অধ্যয়নের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক জ্ঞান লাভ করা যায়।
১১. মানব পাচার রোধঃ
বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় বাধা মানব পাচার। মূলত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক নিরাপত্তার অভাবে এ মানব পাচার করা হয়ে থাকে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। সুতরাং মানব পাচার রোধে বাংলাদেশে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
১২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ব্যবহারঃ
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিরাপত্তা অধ্যয়নের তাৎপর্য অপরিমেয়। নিরাপত্তা অধ্যয়নের বহুমাত্রিক জ্ঞান দিয়ে যেমন অধিক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি তাদের নিরাপত্তা প্রদান করে জনসম্পদে পরিণত করা যায়।
১৩. রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা অর্জন
রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার অভাবে রাজনৈতিক অঙ্গন যেমন কলুষিত হয়, তেমনি এ দেশের সার্বিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের জ্ঞান অনেক কার্যকরী।
১৪. আঞ্চলিক হুমকি প্রতিহতঃ
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য দেশের অভ্যন্তরে এক ধরনের হুমকি সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যায়। তাই নিরাপত্তা অধ্যয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের আঞ্চলিক হুমকি প্রতিহত করা যায়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একুশ শতকের বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রক্ষায় নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিক বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানকল্পে নিরাপত্তা অধ্যয়ন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন যেমন- ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়ন প্রয়োজন।
