গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা। সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক। সুশীল সমাজ কিভাবে সরকারকে প্রভাবিত করতে পারে?
(ক). প্রশ্নঃ সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক বর্ণনা কর।
গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হলেও অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ কোনো শক্তির দ্বারা এ সকল দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সব দেশের গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
![]() |
গনতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা। সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক। সুশীল সমাজ কিভাবে সরকারকে প্রভাবিত করতে পারে? |
সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক
সুশীল সমাজ বাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশ। রাষ্ট্রের যথার্থ প্রতিনিধিত্বে সুশীল সমাজের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা চেতনা ও মতাদর্শের প্রকাশ ঘাট থাকে। আধুনিক রাষ্ট্র মানেই বাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর সুশীল সমাজ যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিভিন্নমুখী উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে। রাষ্ট্রের মানুষের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ হাবস্থায় সুশীল সমাজ র্যাষ্ট্রের মাথা বা মস্তিষ্ক (Brain of the state) হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা এটি রাষ্ট্রের যে কোনা খারাপ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার তথা জাতিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সুশীল সমাজ জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় অত্যন্ত সোচ্চার। তাছাড়া সুশীল সমাজ সবসময় গণতন্ত্রমনস্ক হয়। এরা লণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য সবসময় কাজ করে চলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়নশীল দেশের সম্ভাবনাময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি সমাজ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
(খ). প্রশ্নঃ গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা আলোচনা কর।
গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হলেও অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ কোনো শক্তির দ্বারা এ সকল দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সব দেশের গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা
নিম্নে গণতন্ত্রায়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা আলোচনা করা হলো
১. সামরিক সরকারের বিরুদ্ধাচরণ
পাকিস্তান, মিয়ানমার, লিবিয়া, বলকান অঞ্চলসহ এশিয়া-আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে সামরিক শাসনের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। সুশীল সমাজ জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য সব সময় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে দেশ পরিচালনায় প্রয়াসী হয়। সুশীল সমাজের কোনো বক্তব্য তারা আমলে নেয় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুশীল সমাজের লোকজন তাদের রোষানলের শিকার হয়। সুতরাং গণতন্ত্রায়নের স্বার্থে সুশীল সমাজ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে।
২. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত মজবুতকরণ
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সুশীল সমাজ নানাভাবে মত প্রকাশের মাধ্যমে সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে বাধ্য করে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত আরো মজবুত হয়। সুশীল সমাজের আন্দোলন-সংগ্রাম, অধিকার সচেতনতা, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা প্রভৃতি কার্যাবলি গণতন্ত্রায়নকে ত্বরান্বিত করেছে।
৩. জনমত গঠন
১৯৭৪ সাল থেকে যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে তখন থেকেই স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সুশীল সমাজ সোচ্চার হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং তার পক্ষে জনমত গঠনের পিছনে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
৪. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
সুশীল সমাজ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে ১ নভেম্বর ২০০৭ থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করা শুরু করেছে এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে কার্যকরী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে এ সকল প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে কার্যকরী করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়নশীল দেশের সম্ভাবনাময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি সমাজ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
(গ). প্রশ্নঃ রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের সম্পর্ক আলোচনা কর।
সুশীল সমাজ হচ্ছে মূলত প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান, যা সরকারের জবাবদিহিতা, রাজনৈতিক সংগ্রহণ এবং রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জনগণের মতামত প্রতিফলনের মাধ্যমে স্বীকৃতি পায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুশীল সমাজের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক ইতিবাচক।
রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের সম্পর্ক
নিম্নে সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কসমূহ আলোচনা করা হলো।
রাষ্ট্রে সুশীল সমাজের মূল্য স্বীকৃতি পায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক প্রচার, প্রচারণায় সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে প্রতিনিধিত্বমূলক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জনস্বার্থে নিয়োজিত সামাজিক সংগঠন সশীল সমাজের একটি উপাদান। সুশীল সমাজের বাসিন্দারা এমন ব্যক্তি যারা জনসেবা হিসেবে অধিকার ভোগ করে এবং তা সংরক্ষণ করে। আর এসব অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত। বলাবাহুলা এসব অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গণ্য।
স্বাধীনতা, সাম্য, অধিকার-কর্তব্য, নাগরিকত ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সুশীল সমাজ রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থা অর্জন করতে পারে। যে কারণে কর্ততবাদী রাষ্ট্র সশীল সমাজকে সবসময় দমন করার জন্য সচেষ্ট থাকে। রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা স্বয়ং সুশীল-সমাজের আত্মসচেতনতা, আন্দোলন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উপর নির্ভরশীল।
রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ হয় সংলাপের মাধ্যমে। সুশীল সমাজের কাছে যা গ্রহণযোগ্য নয় তা যদি রাষ্ট্র চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে শক্তিশালী সুশীল সমাজের সাথে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র যেখানে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে, মানুষকে অরাজনৈতিক করে তুলতে চায় সেখানে শক্তিশালী সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। কারণ একমাত্র শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সুশীল সমাজই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে স্বার্থকভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। কেননা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমানা ও নিয়ন্ত্রণ রেখাকে নির্দিষ্ট করতে গিয়েই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুশীল সমাজের বিকাশ ঘটে। একটি দেশের সুশীল সমাজ যত বেশি গণতান্ত্রিক মানুষিকতা সক্রিয় হবে ততই সে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা ও রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে তার প্রকাশ প্রতিফলিত হবে।
(ঘ). প্রশ্নঃ সুশীল সমাজ কিভাবে সরকারকে প্রভাবিত করতে পারে?
সরকারকে প্রভাবিত করতে সুশীল সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। সুশীল সমাজ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। সরকারের কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ বিচার করে সরকারকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
সরকারকে প্রভাবিত করার উপায়
নিম্নে সুশীল সমাজ কিভাবে সরকারকে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করা হলোঃ
১. সরকার পরিচালনা
সুশীল সমাজের একটি বিরাট অংশ প্রশাসনিক ও সরকার গৃহীত নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকে সরকার পরিচালনা করে। যার ফলে সরকার কর্তৃক কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড গৃহীত হলে তা প্রথমে সুশীল সমাজের বাইরের অংশ কর্তৃক সমালোচিত হয়ে থাকে এবং সরকারের ভেতরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সহজে মেনে নেয় না। যার ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশীল সমাজ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারকে পরিচালনা করে।
২. সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি
আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যান্ত ব্যাপক। কারণ সুশীল সমাজের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশাসন অত্যন্ত প্রায়োজন। আবার জনগণের সাথে সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক শাসনের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সরকার ও জনগণের মধ্যো সেতুবন্ধ তৈরিতে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
সরকার যেন কোনো বিশেষ শ্রেণী বা দলের স্বার্থে কাজ না আয়া এবং জাতীয় সম্পদের যাতে অপব্যবহার করতে না পারে পাশাপাশি সরকারের সকল কাজকর্ম সম্পর্কে জনগণ যেন মার্ডায় থাকে, সরকার যাতে জনসাধারণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে সে জন্য সুশীল সমাজ কাজ করে বালার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সুশীল সমাজ বিভিন্নমুখী প্রচারণা ও আন্দোলন অব্যাহত রাখে।
পরিশেষে
পরিশেষে বলা যায় যে, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক তিন পিরীত্যার মাধ্যামে সুশীল সমাজ সরকারের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাছাড়া সুশীল সমাজ তয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।