বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ আর উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষিতে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সামনে একুশ শতকের যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেসব মোকাবিলা করার জন্য জাতির বিবেক বলে খ্যাত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
![]() |
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা |
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা
নিম্নে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুশীল সমাজের ভূমিকা আলোচনা করা হলোঃ
দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকার উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ আবশ্যক। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজের অন্যতম প্রধান অংশ এন.জি.ও গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সুশীল সমাজ বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষা বিস্তার
এদেশের শতকরা প্রায় ৪০% লোক নিরক্ষর। এই বিশাল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন NGO, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজ নামে খ্যাত নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে
বিদ্যমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অবসানে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস, অনৈক্য ও ভুল বুঝাবুঝি এমতাবস্থায় দেশের প্রাণীল সমাজ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্রমাগত সংলাপ আয়োজন ও জনগণকে সচেতন করে রাজনীতিবিদদের উপর চাপ সৃষ্টি করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গণতান্ত্রিক বিকাশ
গণতন্ত্রের বিকাশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। আর গণতন্ত্র বিকাশে সুশীল সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা সুশীল সমাজ আর গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণের সাথে সুশীল সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। দুর্নীতির জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গায়ে যে কালিমা লেগে গেছে তা মোচনের জন্যও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচনে স্বচ্ছতা বিধান
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একে -অপরের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনেছে। এ দেশের সুশীল সমাজ নির্বাচনে স্বচ্ছতা বিধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছে। সুশীল সমাজের আন্দোলনের সাথে সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের ফসল হচ্ছে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ভোটার বাক্স।
প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাবে বাংলাদেশের জনগণ সহজে কোনো সরকারি অফিসে গিয়ে তার প্রয়োজন ও অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয় না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেবক না হয়ে প্রশাসক এবং অভিভাবক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করে। সুশীল সমাজ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
পরিবেশ সুরক্ষা
বাংলাদেশে অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা ও নগরায়ন হয়েছে। ফলে নগর ও শিল্পগুলোর পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। সুশীল সমাজ পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সাথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সুশীল সমাজের আন্দোলনের ফলে ঢাকার ওসমানী উদ্যানে বৃক্ষ নিধন বন্ধ হয়েছে।
যানজট ও দুর্ঘটনা নিরসন
বর্তমানে ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি বড় শহরে যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ট্রাফিক আইন না মানার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুশীল সমাজ সরকারের পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করছে। তাছাড়া সড়ক দুর্ঘটনারোধে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলন গড়ে উঠেছে। সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
নদীভাঙন ও নদী দখল প্রতিরোধ
বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা নদীভাঙন। নদীভাঙনের ফলে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। নদীর তীরে ব্যাপক ভিত্তিতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে এবং বনভূমি তৈরির মাধ্যমে নদী ভাঙনরোধ করা যায়। সুশীল সমাজ সরকারের পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করে তোলে। তাছাড়া সুশীল সমাজ নদী দখল প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিশেষে
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রেখে অধিকার আদায়ের দেরে জনমত গড়ে তুলতে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি তথা জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে, সুশীল সমাজকে তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালনের জন্য আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।