বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

বর্তমান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও কল্যাণকামী শাসনব্যবস্থা হচ্ছে গণতন্ত্র। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার প্রতি সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বস্তরে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি করে পরোক্ষভাবে শাসন কাজে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা 

বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ:

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে উপর্যুক্ত বাছাই-এর জন্য নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচনকে সরকার গঠনের সাংবিধানিক উপায় বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগের ১১নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে উল্লেখ রয়েছে, "প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।" সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বা ধারা, উপধারায় নির্বাচনের আয়োজন, নির্বাচন কমিশন গঠন, মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ, প্রার্থীর যোগ্যতা ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোর আইনগত অধিকার দেওয়া হয়েছে। নিচে বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখা হলো-


১. সর্বজনীন ভোটাধিকার 

সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার নীতি বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর) নাগরিক ভোটদানের অধিকারী। বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী।।

২. সমভোটাধিকার 

বাংলাদেশ সংবিধানের ১২১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিকের ভোটদানের সমান অধিকার রয়েছে। এখানে সকল নাগরিকের জন্য 'এক ভোট এক নীতি' প্রচলিত। প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার জন্য একটি মাত্র ভোটার তালিকা থাকবে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণভেদে আলাদা ভোটার তালিকা থাকবে না।

৩. নির্বাচন পদ্ধতি

বাংলাদেশে দু'ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে। যথাঃ-

(ক) প্রত্যক্ষ নির্বাচন এবং

(খ) পরোক্ষ নির্বাচন।

এখানে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের এবং জাতীয় সংসদের সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ (২) অনুযায়ী।

আবার ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে মহিলা সদস্যগণ পরোক্ষভাবে ৩০০ জন সংসদ সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হন। [অনুচ্ছেদ ৬৫ (৩) অনুযায়ী।।

৪. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন।

৫. প্রার্থীর বয়স

বাংলাদেশে নির্বাচনি ব্যবস্থায় বিভিন্ন নির্বাচনে সদস্যপদে প্রার্থী হতে চাইলে ব্যক্তিকে কমপতে ১৮ বছর, প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে কমপক্ষে ২৫ বছর এবং রাষ্ট্রপতি হতে চাইলে কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।

৬. একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বাংলাদেশে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন বাক্তি একই সাথে একাধিক (সর্বোচ্চ পাঁচটি) আসনে নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন। তবে এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি একাধিক আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তিনি কোন আসনে প্রতিনিধিত্ব করতে চান তা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করতে হবে। নতুবা তার সকল আসন শূন্য বলে গণ্য হবে।

৭. একক প্রতিনিধি নির্বাচনি এলাকা

সমগ্র বাংলাদেশ জনসংখ্যার সমতার ভিত্তিতে ৩০০টি একক প্রতিনিধি নির্বাচনি এলাকায় বিভক্ত। এক একটি নির্বাচনি এলাকা থেকে একজন করে প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য) জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।

৮. ইভিএম-এর ব্যবহার

ইভিএম বা (Electronic Voting Machine EVM)-এর সাহায্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অতি সম্প্রতি কয়েকটি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার কাজ করা হয়েছে।

৯. নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠান

বাংলাদেশের সংবিধানে নিয়মিতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে।

১০. গোপন ভোটদান পদ্ধতি

বাংলাদেশের সকল ধরনের নির্বাচনে গোপন ভোটদান পদ্ধতি চালু রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটারগণ ব্যালট পেপারে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবাহকৃত সীলমোহর প্রয়োগ করে গোপনে ভোটদান করে থাকেন।

১১. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন 

বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার একমাত্র সাংবিধানিক সংস্থা।


উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্রের একটি মৌলিক এবং অপরিহার্য দিক হচ্ছে নির্বাচন। বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের মাধ্যমে এখানে নির্বাচন পরিচালনা হয়ে থাকে। এখানে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে দেশের শাসনকার্যে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। এভাবে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url