বুক রিভিউ: "রাসুলের চোখে দুনিয়া"। Book Review Rasuler Chokhe Duniya
আসসালামু আলাইকুম ভিউয়ার, কেমন আছেন সবাই? আশাবাদী সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানীতে আমিও ভালো আছি।
প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরবো, আর সেটা হচ্ছে- "রাসুলের চোখে দুনিয়া" এই বইটি সম্পর্কে। আজকে আমার আলোচনার বিষয় 'বুক রিভিউ রাসুলের চোখে দুনিয়া'। আজ আমি স্টেপ বাই স্টেপ "রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে একদম গভীর থেকে প্রত্যেকটি পয়েন্ট ধরে ধরে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ, আশা করি শেষ পর্যন্ত আপনারা মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেলটি পড়বেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
![]() |
বুক রিভিউ: রাসুলের চোখে দুনিয়া |
আপনারা সবাই জানেন "রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটি ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) রচিত "কিতাবুয যুহদ" গ্রন্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ। এই বইটি মুসলিমদের জন্য দুনিয়ার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী একটি বই। নিচে এই বইটির পরিচয় দেওয়া হলো:
বইয়ের নাম: রাসুলের চোখে দুনিয়া
বইটির মূল লেখক: ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদক: বইটি আরবি হতে বাংলায় অনুবাদ করেছেন 'জিয়াউর রহমান মুন্সী'।
বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা: বইটিতে সর্বমোট ১৯৮ টি পৃষ্ঠা রয়েছে।
বইটির প্রকাশকাল: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ সাল
বইটির প্রকাশনী: অন্যরকম প্রকাশনী (বর্তমানে বইটি রকমারি.কম এ পাওয়া যাচ্ছে)
বইটির সূচীপত্র: বইটিতে যেসকল বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা হয়েছে তা নিচে দেওয়া হলো:
- দ্বিতীয় সংস্করণের কথা
- অনুবাদকের কথা
- লেখক পরিচিতি
- বহুল-ব্যবহৃত আরবি বাক্যাংশের অর্থ
- মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও দুনিয়া
- আদম (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- নূহ (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- ইউনুস (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- মূসা (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- দাউদ (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
- ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও দুনিয়া
বইটির বিষয়বস্তু: এই বইটিতে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি একজন মুসলিমের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, যুহদ (দুনিয়াত্যাগ) এবং রাসূল (সা.) ও অন্যান্য নবী-রাসূলদের দুনিয়াবিমুখ জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
"রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটির রিভিউ/পর্যালোচনা:
১. লেখকের পরিচয় ও গুরুত্ব:
"রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটির মূল লেখক হচ্ছেন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) তিনি একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকিহ। তাঁর নামটাই বইটির গুরুত্ব ও প্রামাণিকতা তুলে ধরে। মুসলিম বিশ্বে তাঁর জ্ঞান ও তাকওয়া প্রশ্নাতীত। তাঁর রচিত কিতাবুয যুহদ এক কালজয়ী গ্রন্থ, যা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
২. "রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটির মূল বিষয়:
"রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটিতে এই রহস্যময় দুনিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। দুনিয়াতে মানুষ আসে, শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের সিঁড়ি বেয়ে বার্ধক্যে পৌঁছায় এবং আবার হঠাৎ করে একদিন চলে যায়। এই স্বল্প সময়ে মানুষ পরকালের কথা চিন্তা না করে দুনিয়াবি সফলতার পেছনে ছুটে চলে সার্বক্ষণিক, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে জানে না যে, সে কতটা নিচে নেমে যাচ্ছে। বইটি আমাদেরকে প্রশ্ন করে, দুনিয়ার সাথে আমাদের সত্যিকার সম্পর্ক কী? দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত? প্রকৃত সফলতা কিসে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নবী-রাসূলদের জীবন ও বক্তব্য থেকে, যা হচ্ছে এই বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
৩. হাদিসের অনন্য সংকলন:
বইটির সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো এটি হাদিসের এক অনন্য সংকলন। এখানে রাসূল (সা.)-এর চোখে দুনিয়ার গুরুত্ব ও মর্যাদা কেমন ছিল, তা বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যে রাসূল (সা.)-কে মক্কার কুরাইশরা অঢেল সম্পদ ও আরবের আধিপত্যের প্রস্তাব দিয়েছিল, সেই রাসূল (সা.) কীভাবে দুনিয়াকে তুচ্ছ জ্ঞান করে খন্দকের যুদ্ধে পেটে পাথর বেঁধেছিলেন – এসব দৃষ্টান্ত হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে। শুধু শেষ নবী (সা.) নন, অন্যান্য নবী-রাসূলদের কাছে দুনিয়ার চাকচিক্য কতটা নগণ্য ছিল, তাও অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৪. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক:
বইটি মূলত একজন মুসলিমের 'দৃষ্টিভঙ্গি' কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে কাজ করে। এটি দুনিয়ার মোহাবিষ্টতা, অগাধ প্রাচুর্যের প্রতি অনীহা তৈরি করে এবং আখিরাতের জন্য পাথেয় অর্জনের গুরুত্ব অনুধাবনে সাহায্য করে। বইটি পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন যে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাস কীভাবে অনন্ত অসীম জীবনের পরম পাথেয় উপার্জনের শক্তি কেড়ে নেয়।
৫. বইটি মুলত কাদের জন্য:
বইটি প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য অবশ্যপাঠ্য। যারা দুনিয়াবি ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের আখিরাতের সফলতার পথ খুঁজে ফিরতেছেন, যারা দুনিয়ার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে চান, তাদের জন্য এটি একটি অনবদ্য পাথেয়। এটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই, যা বারবার পাঠ করে আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব।
৬. পরিশেষে:
"রাসুলের চোখে দুনিয়া" বইটি কেবল একটি পাঠ্যপুস্তক নয়, এটি একটি আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণের একটি গাইড লাইন মাত্র। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) এর মতো মহৎ ব্যক্তিত্বের রচিত এই গ্রন্থ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। এটি পড়লে একজন পাঠক দুনিয়ার ফিতনা থেকে নিজেদের রক্ষা করে পরকালের সফলতার জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।