কবিতা: যুবতীর পরিনতি। লেখক আল আব্বাস রবিন

প্রিয় পাঠক, নবীন লেখক আল আব্বাস রবিন এর লেখা কবিতা "যুবতীর পরিনতি"। মেয়েদের বর্তমান বাস্তবতার জীবন চরিত্রকে কেন্দ্র করে এই কবিতাটি লেখা হয়েছে। এখানে একটি মেয়ের যৌবনে পদার্পণ থেকে শুরু করে বৈবাহিক, সাংসারিক এবং জীবনের শেষ সময় পর্যন্তকে ঘিরে প্রতিটি সময় ও ঘটনাকে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সুর ও ছন্দের মায়ায়।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা পেলে আরও সুন্দর সুন্দর ও হৃদয় ছুয়ে যাওয়া গল্প এবং কাহিনী নিয়ে আপনাদেরকে গল্প, কবিতা, ছন্দ ও উপন্যাস উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নবীন লেখক আল আব্বাস রবিন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

মেয়েদের জীবন নিয়ে লেখা কবিতা: যুবতীর পরিনতি।
একটি মেয়ের জীবন চরিত্র নিয়ে লেখা; কবিতা: যুবতীর পরিনতি। লেখক আল আব্বাস রবিন। 


কবিতার নাম: যুবতীর পরিণতি

লেখক: আল আব্বাস রবিন



এইতো কদিন আগেও হাজার যুবকের বুকে তীর ছিদ্র করার মতো রূপে রূপবতী ছিলো,

তার মায়াবীনী কন্ঠে কত পথিক মগ্ন হয়ে সাত পাঁচ না ভেবে সহসাই তার পিছু নিলো।

তার কালো পাপড়ী বিশিষ্ট হরিণী চোখের দিকে তাকিয়ে কত উন্মত্ত প্রাণ হারিয়ে গেলো জেগে দেখা স্বপ্ন বিলাসীর মতো!

তার ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা পূরণে মৃত্যুঞ্জয়ী এক রাজপুত্র কোন আধাঁরেই গড়ে ফেলতো বিলাসী মহল কত,

তার কালো চুলের ভাজে একটা গোলাপ গুজে দিতে বাড়ীর আঙ্গিনায় ভীর ছিলো শত।

পারার ঘরে বউ করে নিতে ঘটক মশাই বিয়ের কথা বলিত অবিরত।

তার দেহের মাংসের গন্ধে একেকজন কবি লিখে ফেলতো ডায়েরীর না হিসাবের পাতায় পাতায় কত কবিতা গল্প গান,

একটু চোখ ফিরে তাকিয়ে দেখার আশায় কত বীর সাহসী যোদ্ধা ধূলোয় উড়িয়ে দিত প্রাণ।

কত জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞানী একটিবার তাকে দেখার জন্য ধরিল পাগল বেশ,

কত ঝল্পনা কল্পনা আশা ভরসা সব সময়ের ব্যাবধানে আজ শেষ।

একদিন তিনি চাইলেই হয়ে যেত রাজার আসন শুন্য,

কত ধার্মিক দেবতা তাহার নেশায় ভুলে যেত পাপ পুণ্য।

তাহার ডাকেও ধরার বুকে বাজিয়া উঠিত কলরব,

তিনিও কখনো বাহুর ভাজে রাখিতে পারিতেন সব।

অতঃপর তিনি আবদ্ধ হইলেন কারো গৃহসঙ্গীর রূপে,

মগ্ন থাকিতেন কোন আলিশান কক্ষে দেহমন সপে।

দিনে রাতে দুজন দুজনে হারিয়ে যেতো কত দূর অজানায়,

একে অপরে ডুবে থেকে তৃপ্ত হতো দেহের প্রতিটি কানায় কানায়।

সেখানেও পড়িলো ভাটা সময় বাড়ার সাথে,

দু-চারটা গেলে যায় আবার নতুনেরা ধরে হাতে।

আহা যুবতী ভাবিছে কখনো এমনও কাটিবে দিন?

কত জন আসবে যাবে জীবনটা বড় রঙ্গিন।

রং বেরঙ্গের মানুষ দ্বারা স্বাদে পূর্ণ জীবনখানি,

নতুন মুখ ধরায় আসিলো মাতৃস্বাদে রানী।

ডুবিল ধরা সুখ আমোদে কে রুখে আর তারে?

কেউনা কেউ আবার ধরে যদি একজনে হাত ছাড়ে।

কিছুদিন পরে সাদা চামড়ার ফ্যাকাসে বর্ণে, যুবতীর যৌবনে পড়িয়াছে ভাজ।

কেউ চলে গেলে আর নতুন আসে না ভাঙ্গিলো বুঝি এ মহাসুখের তাজ।

আহা তবুওতো পরিণত যুবতী মাতৃসুখে জীবন কাটাইতে পারে,

ছেলেটারে পেলেপুষে করবে আয়ু পাড় কত পথ আছে চারিধারে।

এমনি করিয়া কাটাইলো খানিকদিন হয়েছিল এক মহা যোগ্য মমতাময়ী মা,

বিধাতার খেলা দেখো জীবনের শেষ কালে এইটুকু সুখ কপালে সহিল না।

ছেলে বউ এনে দিলো, কত শখে মায়ের চোখ স্বপ্নে থাকতো ভেজা,

বউ সেটা বুঝেনি অলস মায়ের কাজে দিলো সাজসন্ধ্যা সাজা।

কে দেখে কার সুখ কেই বা ভাগ করে দুঃখ, যখন যার যা মনে চায় করে,

শত রূপযৌবন সময় ফুরাইলে এমনি করে লুটায় পথের পরে।

এভাবেই কেটে যায় কত রূপবতী যুবতীর সুখের জীবন দিন,

কেউ ভেবে দেখে না শেষ কালে কি হবে কি লিখেছে রব্বুল আলামিন।

ভেবে দেখো ওহে মন কোথা যায় যৌবন কোথায় হইবে শেষ?

না ভাবিয়া পাপে মত্ত তোমার পরকাল নিরুদ্দেশ।

তিনিও কাহারো মেয়ে বউ মা ছিলো তবু জীবন ছাড়িলো না তারে?

এমনি করিয়া দুঃখ নদে ডুবিয়া পাড়ি দিলো ঐ পাড়ে।


'যুবতীর পরিনতি' কবিতাটির সারমর্ম:

প্রিয় পাঠক, আল আব্বাস রবিনের লেখা "যুবতীর পরিনতি" কবিতাটির সারমর্ম পয়েন্ট আকারে নিম্নে প্রদত্ত করা হলো:

জীবনের ক্ষণস্থায়ী রূপ ও অনিবার্য পরিণতি

এই কবিতাটি জীবনের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য, যৌবনের অহংকার এবং সময়ের সাথে সাথে সবকিছু হারানোর এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা। এটি একজন নারীর জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়কে তুলে ধরে, যেখানে যৌবনের ঔজ্জ্বল্য, প্রেম, মাতৃত্ব এবং পরিশেষে বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা ও অবহেলা চিত্রিত হয়েছে।

মূল বিষয়বস্তুগুলি নিচে তুলে ধরা হলো:

  • যৌবনের উন্মত্ত আকর্ষণ: কবিতার শুরুতে যুবতীর অপরূপ সৌন্দর্য, মায়াবী কণ্ঠ এবং হরিণী চোখের আকর্ষণ বর্ণিত হয়েছে। তার রূপে হাজারো যুবক মুগ্ধ হতো, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা পর্যন্ত পাগলপ্রায় হতো, এবং রাজপুত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত তার ভালোবাসার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। তার সান্নিধ্য লাভের আশায় অসংখ্য মানুষ ভিড় করত।
  • প্রেম ও দাম্পত্য জীবন: একসময় সে কারো গৃহসঙ্গিনী হয় এবং দাম্পত্য জীবনে সুখ ও পরিতৃপ্তিতে মগ্ন থাকে। এই পর্যায়টি ভালোবাসার পূর্ণতা এবং একে অপরের প্রতি নিবেদিত থাকার এক চিত্র তুলে ধরে।
  • সময়ের প্রভাব ও আকর্ষণ হ্রাস: সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের সতেজতা কমে আসে এবং যৌবনের উন্মাদনা ফিকে হয়ে যায়। একসময় যারা পিছু নিত, তারা চলে যেতে শুরু করে এবং নতুন মুখ আসে। এই অংশটি জীবনের প্রতি আসক্তি এবং ক্ষণস্থায়ী আনন্দের ধারণাকে তুলে ধরে।
  • মাতৃত্ব ও বার্ধক্য: একসময় নারীটি মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে এবং একজন মমতাময়ী মা হিসেবে জীবন কাটাতে শুরু করে। তবে বিধাতার পরিহাসে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই সুখও তার কপালে সয় না। ছেলে এবং পুত্রবধূ তাকে অবহেলা করে, যা তার জীবনে এক নতুন দুঃখের জন্ম দেয়।
  •  যৌবনের অবসান ও পরকালের ভাবনা: কবিতাটি প্রশ্ন তোলে যৌবনের শেষ কোথায় এবং পরকালে কী হবে। এটি মানুষকে পাপ থেকে বিরত থেকে পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানায়, কারণ পার্থিব সৌন্দর্য ও সুখ ক্ষণস্থায়ী।
  • জীবনের চক্র: পরিশেষে, কবিতাটি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য চক্রের কথা বলে - জন্ম, যৌবন, প্রেম, মাতৃত্ব, বার্ধক্য এবং মৃত্যু। এটি বোঝায় যে রূপ, যৌবন এবং পার্থিব সুখ সবই সময়ের সাথে সাথে ফুরিয়ে যায়, এবং মানুষ একাকী দুঃখের নদী পাড়ি দিয়ে পরকালের দিকে এগিয়ে যায়।


সবশেষে: 

সংক্ষেপে, কবিতাটি মানব জীবনের ভঙ্গুরতা, সময়ের অনিবার্য প্রভাব এবং পার্থিব আকর্ষণের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি সম্পর্কে এক গভীর প্রতিফলন। এটি পাঠককে জীবনের শেষ পরিণতি এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে।

প্রিয় পাঠক, আল আব্বাস রবিন একজন নবীন লেখক। তিনি গল্প, কবিতা, ছন্দ ও উপন্যাস লিখতে ভালোবাসেন। আপনাদের সহানুভূতি ও ভালোবাসা পেলে ভবিষ্যতে আরও লেখা প্রকাশ করা হবে। আপনারা যদি কেউ আল আব্বাস রবিন এর লেখা গল্প ও কবিতার সমাহার বইয়ের পিডিএফ বই নিতে চান তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url