কবিতা: যদি হারিয়ে যাই? লেখক আল আব্বাস রবিন

প্রিয় পাঠক, নবীন লেখক আল আব্বাস রবিন এর লেখা কবিতা "যদি হারিয়ে যাই"। কবি যখন 'যদি হারিয়ে যাই' বলছেন, তখন তা কেবল দৈহিক অনুপস্থিতি নয়, বরং স্মৃতির আড়ালে চলে যাওয়া বা সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়ার এক অন্তর্নিহিত ভয়কে ইঙ্গিত করে। বৈশাখী ঝড়ের রুক্ষতা, আষাঢ়ের বারিধারা, শ্রাবণের প্রখর রোদ - প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্য দিয়ে কবি জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রিয়জনের মনে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটি কেবল একজন ব্যক্তির জিজ্ঞাসা নয়, বরং প্রতিটি সম্পর্কের গভীরতা পরিমাপের এক সংবেদনশীল প্রচেষ্টা।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা পেলে আরও সুন্দর সুন্দর ও হৃদয় ছুয়ে যাওয়া গল্প এবং কাহিনী নিয়ে আপনাদেরকে গল্প, কবিতা, ছন্দ ও উপন্যাস উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নবীন লেখক আল আব্বাস রবিন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

বাংলা কবিতা: যদি হারিয়ে যাই
কবিতা: যদি হারিয়ে যাই?

যদি হারিয়ে যাই?

-লেখক আল আব্বাস রবিন 



আমি যদি হারিয়ে যাই

কোন এক বৈশাখী ঝড়ে,

তুমি কি খুজবে আমায়

জৈষ্ঠের খরশ্রোতা সকাল ভোরে?

যদি আর কখনো না আসি

আষাঢ়ের বৃষ্টি ভেজা প্রহরে,

মনে পড়বে কি শ্রাবনের

রোদে পোড়া ক্লান্ত দুপুরে?


ভাদ্রের দিনগুলোতে যদি

না দেখতে পাও মোরে,

আশ্বিনের কোকিলের মত কি

অভিমান করবে আমার উপরে?

কার্তিক যদি নিয়ে যায় আমায়

আকাশে তারার ভিড়ে,

তুমি কি অপেক্ষা করবে

অগ্রায়নের একদিন নদীর তীরে?


তোমার কাথার নিচে যদি না পাও

পৌষের এক রাতে,

থাকবে কি একা জেগে

মাঘের স্মৃতিপটে?

যদি আর না ভাসি

ফাল্গুনের দক্ষিনা বাতাসে,

খুজবে কি আমায়

চৈত্রের বিকালের লাল আকাশে?


"যদি হারিয়ে যাই" কবিতার মুল ভাব বিশ্লেষণ:

কবিতাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ঋতুচক্রের প্রতীকী ব্যবহার। বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত বাংলা বছরের প্রতিটি মাসকে কবি তার অনুভূতির সাথে নিপুণভাবে বুনে দিয়েছেন।

  • বৈশাখী ঝড় ও জৈষ্ঠ্যের সকাল: বৈশাখী ঝড় সাধারণত আকস্মিক এবং ধ্বংসাত্মক হয়। কবি এখানে এমন একটি আকস্মিক বিচ্ছেদ বা হারিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এর বিপরীতে জৈষ্ঠ্যের খরস্রোতা সকালের উল্লেখ করে তিনি জানতে চেয়েছেন, এই আকস্মিক বিচ্ছেদের পরেও প্রিয়জন কি তাকে খুঁজে বেড়াবে? এটি ভালোবাসার স্থায়িত্বের এক গভীর প্রশ্ন। ঝড় যেমন সবকিছু ওলটপালট করে দেয়, তেমনই সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আকস্মিক পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু তার পরেও কি সেই সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা থাকবে?
  • আষাঢ়ের বৃষ্টি ও শ্রাবণের দুপুর: আষাঢ়ের বৃষ্টি ভেজা প্রহর এক নতুন শুরুর ইঙ্গিত দেয়, সতেজতা ও নমনীয়তা নিয়ে আসে। যদি এমন দিনেও কবি ফিরে না আসেন, তবে শ্রাবণের রোদে পোড়া ক্লান্ত দুপুরে প্রিয়জনের মনে তার স্মৃতি কতটা সজীব থাকবে? শ্রাবণের তীব্র রোদ জীবনের কঠিন সময়ের প্রতীক, যখন মানুষ ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত বোধ করে। সেই সময়েও কি প্রিয়জনের স্মৃতি সান্ত্বনা হয়ে আসবে?
  • ভাদ্রের দিন ও আশ্বিনের কোকিল: ভাদ্র মাসের দিনগুলি গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষার বিদায়ের সূচক। যদি এই দিনগুলোতেও প্রিয় মানুষটি দৃষ্টির আড়ালে থাকেন, তবে আশ্বিনের কোকিলের মতো কি অভিমান জন্মাবে? কোকিলের ডাক বিরহ এবং প্রতীক্ষার প্রতীক, বিশেষ করে বসন্তে। এখানে আশ্বিনে কোকিলের উল্লেখ প্রিয়জনের মনে কবির জন্য এক ধরনের আবেগপ্রবণ অভিমান বা মিস করার অনুভূতিকে বোঝায়।
  • কার্তিকের তারা ও অগ্রায়ণের নদীর তীর: কার্তিক মাস রাতের আকাশের তারাদের মেলা দেখায়। কবি যেন এই তারাদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, যা এক ধরনের শান্ত এবং চিরন্তন বিলীন হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। এই বিলীনতার পরেও কি প্রিয়জন অগ্রায়ণের এক শান্ত দিনে নদীর তীরে তার জন্য অপেক্ষা করবে? নদীর তীর প্রায়শই অনন্ত অপেক্ষা এবং মিলন বা বিচ্ছেদের প্রতীক।
  • পৌষের রাত ও মাঘের স্মৃতিপটে: পৌষের তীব্র শীতে কাথার উষ্ণতা এক গভীর নির্ভরতা ও নৈকট্যের প্রতীক। যদি প্রিয়জন সেই উষ্ণতার পাশে না থাকেন, তবে মাঘের হিমশীতল রাতে তিনি কি একাকী জেগে থাকবেন, স্মৃতির পটে হারানো ভালোবাসার ছবি আঁকবেন? এটি ভালোবাসার এক গভীর টান এবং একাকীত্বের যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে তোলে।
  • ফাল্গুনের বাতাস ও চৈত্রের আকাশ: ফাল্গুনের দক্ষিণা বাতাস ভালোবাসা ও নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আসে। যদি সেই বাতাসের সাথে কবি আর ভেসে না বেড়ান, তবে চৈত্রের বিকালের লাল আকাশে প্রিয়জন কি তাকে খুঁজবে? চৈত্রের লাল আকাশ দিনের শেষ এবং এক বিদায়ী মুহূর্তের প্রতীক। এই সময়েও কি ভালোবাসার রেশ খুঁজে ফেরা হবে?

গভীর প্রশ্ন ও মানবিক আবেদন

এই কবিতাটি কেবল এক বিচ্ছিন্ন প্রেমের কবিতা নয়, এটি মানব মনের এক গভীর জিজ্ঞাসাকে উন্মোচন করে: আমরা কি আসলেই কারো স্মৃতিতে এতটা গভীরভাবে বেঁচে থাকি? সময়ের সাথে সাথে মানুষ কি সত্যিই সবকিছু ভুলে যায়, নাকি কিছু সম্পর্ক এতটাই গভীরে প্রোথিত থাকে যে কোনো ঋতুই তাকে মুছে ফেলতে পারে না?

কবিতাটি পাঠককে নিজেদের সম্পর্কের গভীরে তাকাতে বাধ্য করে। আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের অনুপস্থিতি আমরা কতটা অনুভব করি? আমাদের প্রিয়জন যদি হারিয়ে যায়, আমরা কি সত্যিই তাদের খুঁজি, নাকি সময়ের স্রোতে সব স্মৃতি ফিকে হয়ে যায়?

ভাষার সরলতা ও অনুভূতির গভীরতা

কবি অত্যন্ত সরল এবং সাবলীল ভাষায় তার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। কোনো জটিল শব্দ বা অলংকার ছাড়াই তিনি প্রতিটি ঋতুর সাথে মানানসই চিত্রকল্প তৈরি করেছেন, যা পাঠকের মনে এক স্নিগ্ধ আবেদন তৈরি করে। এই সরলতাই কবিতাটিকে আরও বেশি হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে, কারণ এটি সরাসরি হৃদয়ে আঘাত করে। প্রতিটি প্রশ্নই যেন পাঠকের নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি।

কবিতাটি কেবল হারিয়ে যাওয়া নিয়ে নয়, এটি অপেক্ষা, স্মৃতি, অভিমান, এবং ভালোবাসার চিরন্তনতার এক মর্মস্পর্শী আর্তি। এটি মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসা কেবল বর্তমানের নয়, এটি অতীতকে ধারণ করে এবং ভবিষ্যতের জন্য এক অনন্ত অপেক্ষার জন্ম দেয়। প্রতিটি ঋতুর পরিবর্তন যেমন প্রকৃতির নিয়ম, তেমনি ভালোবাসার টানাপোড়েনও জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।


শেষ কথাঃ

এই কবিতাটির মাধ্যমে কবি যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা এবং যান্ত্রিকতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া মানবিক অনুভূতিগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এটি এক নীরব জিজ্ঞাসা, এক গভীর আবেদন, যা ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ এবং তার স্থায়িত্ব নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে।

প্রিয় পাঠক, আল আব্বাস রবিন একজন নবীন লেখক। তিনি গল্প, কবিতা, ছন্দ ও উপন্যাস লিখতে ভালোবাসেন। আপনাদের সহানুভূতি ও ভালোবাসা পেলে ভবিষ্যতে আরও লেখা প্রকাশ করা হবে। আপনারা যদি কেউ আল আব্বাস রবিন এর লেখা গল্প ও কবিতার সমাহার বইয়ের পিডিএফ বই নিতে চান তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url