কবর কবিতার পরের কবিতা অর্থাৎ "কবরের পর কবর"। লেখক আল আব্বাস রবিন

প্রিয় পাঠক, এটা হচ্ছে কবি জসীমউদ্দিনের লেখা "কবর কবিতা"র পরের কবিতা অর্থাৎ "কবরের পর কবর"। আপনারা যদি কেউ কবি জসীম উদ্দিনের "কবর কবিতা"টি না পড়ে থাকেন তাহলে আগে এই লিংক থেকে কবর কবিতাটি পড়ে আসুন এবং তারপর "কবর কবিতার পরের কবিতা"টি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের কবর কবিতাটির অনুকূলে নাতনির পরবর্তী জীবন অর্থাৎ নাতনি এবং নাতনির ছেলের জীবন সম্পর্কে এই কবিতাটি অর্থাৎ "কবরের পর কবর" কবিতাটি লিখেছেন "লেখক আল আব্বাস রবিন"। কবিতাটি পরে আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করে দিবেন। আল আব্বাস রবিন একজন নতুন লেখক আপনাদের সহানুভূতি ও ভালোবাসা পেলে ভবিষ্যতে আরও গল্প, কবিতা এবং উপন্যাস লেখার আগ্রহ আছে তার। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

কবরের পর কবর কবিতা। আল আব্বাস রবিন
করব কবিতার পরের কবিতা অর্থাৎ "কবরের পর কবর"

কবিতার নাম: কবরের পর কবর

লেখক: আল আব্বাস রবিন



বাজান তুমি এ কবরে বসিয়া কাঁদছো কখন ধরে,

চোখের জলের বাধহীনতায় কাঁপিছো থরেথরে।

কি হইয়াছে কওনা মোরে ভয় কেন পাও তুমি?

কবরের এই বাগান তোমায় করিয়াছে মরুভুমি।

প্রায় রাতেরই মাঝবেলা দেখি বিছানায় তুমি নাই,

কৌতুহলে খুজিতে খুজিতে এইখানে তোমায় পাই।

কি এমন আছে ডালিম শাড়ীর এ মাটির ঢিবির তলে?

বাজান তোমার দোহাই লাগে দাওনা এবার বলে।

তোমার চোখের জলও ধারায় হৃদয় পুড়ে মোর,

মায়ের কথা জানিতে চাহিলে কেন পালাও অগোচর?

পিড়াপিড়ি করিওনা পুত্র আমার অন্তর জ্বলে যায়,

যে ব্যথা পুষে বাঁচায়ে রেখেছি তাহা কে এসে নিভায়?


বাছা এত যদি শুনিতেই চাও বলি তবে শোন সব,

শোনার পর তবু যদি কমে তোমার হৃদয়ের কলরব।

দাদাজান মোর কহিয়াছেন এক কবর দেশের কথা,

কেজানে এমন জড়ায়ে ধরিবে আমারেও সেই মমতা।

পাখিদের গানে বেজে উঠে বাছা দুঃখের মর্মর ধ্বনি।

কে জানিতো এ ডালিম তলাতেই পুতে রবে মুক্তামনি।

সেদিন সাঁজেতে দাদাজান মোর শয়ন পাশে এসে,

কহিল আমারো সময় এসেছে যাবো ওপাড়ের দেশে।

ছোট্ট একখানা ভুমি দেখাইয়া চোখের ইশারা করে,

বলিল দাদু, এই জায়গাটায় কবর দিও মোরে।

এত কবরের মাঝেতে আমার প্রশান্তি মিলিবে ভাই?

কত আপনজন পড়ে আছে এথা আমিও সেথা যাই।


শীতের রাত্রিতে চাদরমুড়ি দিয়ে বসেছিনু উনুন পাড়ে,

চাঁদের আলো ডুবিয়া ছিল, না দেখা অন্ধকারে।

দাদাজান আমার পানি চাহিল কাঁশিতে কাঁশিতে খুব,

পানি আনিয়া দেখি দাদাজান পরোপারে দিল ডুব।

এত জোড়ে তারে ডাকিয়াও তব সাড়া নেই ওই মুখে,

সাদা দাড়ি পাকা চুলের মাথা চাপিয়া ধরিলাম বুকে।

ছিন্নভিন্ন হৃদয় দিয়ে মোর শেষ সম্বল খানি।

এইখানে কবর দিয়াছি দেখ জড়ায়ে চোখের পানি।

শোন বাছা মোর ডাকিয়া বলো খোদার আরশ পানে,

কি হালে আছে এ কবর বাসীরা সবিতো তিনি জানে।


দাদার বিছানো পাশে দেখ বাছা ছোট্ট একটা কবর,

এখানেও কে শুয়ে আছে জানো রাখেকি কেউ খবর?

বিধাতার দেয়া প্রথম সন্তান কন্যা আসিল কোলে,

চোখ দেখিয়াই পরান জুড়াইতো দেবীর মতন চলে।

হাটের দিনে বাড়ী ফিরিবার অপেক্ষায় থাকিতো কত,

সদায় দেখিয়া মায়ের কাছে অভিযোগ করিত শত।

তোমার মাতা বুঝাইয়া তারে শান্ত কি করিতে পারে?

ঘরখানা মোর ভরিয়া থাকে সদা অনুরোধ আবদারে।

একদিন হলোকি শোন হে বাছা বলিবো কিভাবে হায়,

পড়ালেখার তড়েতে মেয়েরে পাঠাইয়া পাঠশালায়,

হরিণী চোখের মেয়েটা আমার ফিরিলোনা আর ঘরে,

থানার দাড়োগা নিয়ে এলো তারে মোড়াইয়া চাদরে।

পথে দুজন বখাটে যুবক তোমার বড় বুঝির কাছে,

প্রেমেরকথা শোনাইবার তরে নিয়াছিলো নাকি পাছে।

সরলা মা আমার বুঝিলো না কিছুই কি করিতে হয়,

তাইতো তাহার কপালে এমন নিঠুর পরিণাম বয়।

বেচারি মেয়েটা ভ্যানের উপড়ে কেমনে শুইয়া ছিল,

কাঁচের চুড়ির ভাঙ্গা আওয়াজে বুকটা ছিড়িয়া দিল।

তোমার মা জান চিৎকার দিয়ে লইল আমার পিছু,

তুমি বাছা মায়ের পেটে ছিলে যে বুঝিতে নাতো কিছু।

সুদর্শনেরা উড়ে বেড়ায় এই গোয়ালের আঙ্গিনায়,

খেলার সাথীরে হারায়ে তাহারা বিরহের গান গায়।

বেস্তের বাগানে গেলে বাছা তখন দেখিয়া নিস তারে,

কেমন মায়াবী চুক্ষ বিধাতা দানিয়াছিলো মোর ঘরে।

কবর খানার নির্মল জ্যোতি ছড়াইয়া পড়িলো আবার,

খোদা যেন মরে পুর্ণ করিল সুখ দিল কিছু পাবার।

তুমি বাছা মায়ের কোলে আসিলে ফুটফুটে চাঁদ মুখ,

আহা কি আনন্দ ধরার বুকে এই বুঝি গুচিলো দুঃখ।


সহিলো না বাছা মাটির লোভে আরো কিছু চায় সে,

জলের ধারা সহ্য হয়না এসে খানে চক্ষুটা মুছিয়া দে।

দাইমা তোমারে বুকে দিল মোর কপাল চুমিতে বলে,

ঘরে কিছু কাজ বাকীআছে নাকি সেদিকে গেল চলে।

মা জান তোমার ডাকিলো মোরে জোড় গলার স্বরে,

গিয়া তার পাশে বসিলাম কিছু হাল জানিবার তরে।

আহা কি বলিব আর এত বোঝা কি ছোট্ট প্রানে সয়?

চোখের নিচের কালো দাগ গুলো শোকের কথা কয়।

মেয়ের তরে মা জান তোমার বড় আবেগ প্রবণ হয়ে,

তাহার সাথেই মিলিত হইল গেলোনা কিছু আর কয়ে।

যাহারে আমি পরানে বাধিয়াছি পাশে থাকিব বলে,

সেই মায়াবীনী রাখিয়া আমারে চিরতরে গেল চলে।

আমি বাছা তোমায় বুকেনিয়ে বলো কি করতে পারি?

কাঁদিয়া উঠিল ভোর সকালের ডালিম গাছের শাড়ী।

তুমিতো শুধুই কাঁদিতে ছিলে ক্ষুধার জ্বালা বয়ে,

কি করিব প্রভু আর পারিনা যাওনা একটু কয়ে।


দাইমা তোমায় কোলে নিয়ে সুধায় বাছারে বাঁচা ভাই,

দুধ না পাইলে মরিবে সে তো উপায় কিছু আর নাই।

পারা খুজিয়া কয়েক প্রহরে আনিলাম এক রারী,

দুধমা তোমার ভার নিতে বাছা আসিল মোদের বাড়ী।

এত ব্যথায় ব্যথিত হৃদয় সুখ খুজে না আর,

কোন মতে বাছা করিলেই হয় জীবন খানি পাড়।

ভোরের সুর্যের আশায় উঠে পাখি আহার পানে যায়,

মেঘ এসে তারে ঢাকিয়া লইলে আরকি আহার পায়?

তোমার দুধমাকে মেঘে ঢাকিলো পড়া বিকাল বেলা,

বিশাল এক বাহন বুঝি তারে পিছন দিকে দিল ঠেলা।

আহা বেচারি স্কুলে গেছিনু তোমাদের আনিবে বলে,

ফিরিলনা আর মোদের মাঝে ওপাড়ে গেল চলে।


তুমি বাছা দুধবোনের সাথে কাঁদছো পথের ধারে,

রক্তমাখা দেহ নিয়ে মায়ে পড়েছিলো এক পাড়ে।

এমন করিয়া কত কবরের কথা শোনাবো আজ বলো?

যা হোক এবার শীত পড়িছে বাজান আমার চলো!

আরেকটু দাড়াও কবরের পাশে ধৈর্য নিয়ে বাবা,

হাত তুলে ধরে মুনাজাত করি মুখে বলি রব কাবা।

আর কি বলিব দুঃখের কথা জ্বালা দিও না বারবার,

বুকের ব্যথায় এই বুঝি হবে জীবন পারাপার।


দুঃখের ঘরে কিছু সুখ এলো ভাইবোনের বেশে,

সারাদিনও মান মত্ত থাকিতে পাখির বাসার দেশে।

দুধবোন তোমার খেলা সাথী হলো কি খুশি চারিধারে,

সে খুশিটাও ডুবিল বাছা অকালের ঘন আঁধারে।

এ ডাল ও ডাল দুইটা পাখি ছুটিতো দিনমান,

খুজিতে তোমাদেরে প্রহর প্রহরে বেড়িয়ে যাইতো প্রাণ।

কোথায় যাইতো ঘুমেরখবর কোথায় যাইতো আহার?

এ খুশিতে যেন নাচিয়া উঠিত সবুজে ঘেড়া পাহাড়।


হায় এভাবেও আজরাইল কি মানুষের দুঃখ বুঝে?

যাহার যেথায় ফরমান হয়েছে তারেই তো সে খোজে।

দুপুর বেলায় নদীর ধারে তোমাদের তালাশ করি,

কতজনারে জিগাইয়া পৌছিনু এ ঘাটেরও পথ ধরি।

তুমি যে কোথায় হারাইয়া গেলে চারিধার পানে চাহি,

নদীর মাঝে কারে যেন দেখি আসিছে বাঁহি বাঁহি।

বুকের বাঁয়ে চিনচিন করে এ কেমন শোকের রোল?

বাছা ধর আমারে মৃতলাশে ভরা এশুন্য সুখের কোল।

সুর্য তখন মাথার উপর হতে তাকাইয়া আছে নিচে।

নতুন একখানা কবর খুড়িবার সংবাদ মোরে দিছে।

দু ভাইবোনে জলে ভাসিতে সখের নৌকা লয়ে গেলে,

ডুবিল জলযান তুমি বাছা তার নিথর দেহনিয়ে এলে।

তুমি কি করিবে বোনকে ধরিয়া কান্না ছাড়া আর?

গ্রামের ঘরে শোকের মাতম ভিজিল চোখ সবার।

দেখ বাছা এখানে দিয়াছি কবর লইয়া গ্রামবাসী,

এখনো যেন নুপুর বাজে শোনে যাও ধীরে আসি।

এত লাশ লয়ে কেমনে ধরিব বাঁচিয়া থাকার সবর?

ছোট্ট বুকে পাতা আছে দেখ তাজা আটখানা কবর।


আবার সকালের সুর্য উঠিলো ভোরের কাকের ডাকে,

ডানা ঝাপটাইয়া সাদা বক গুলো ছুটিলো সরু বাঁকে।

কৃষাণ মজুর কাজে নেমেছে চটি নাই দেখ পায়ে,

মক্তব হইতে শিশুরা আসিছে ছড়াইয়া ডানে বাঁয়ে।

নতুন কোন খবর শুনিবার সাহস নাই আর দেহে,

বাকী আয়ু পাড়িতে মুনাজাত করি খোদার রাহে।

আয় রহমান কবে দিবে মোরে তিক্ত মৃত্যু স্বাদ?

মহাপ্রলয়ের ভয়ে বুঝি এই হয়ে গেনু উন্মাদ।

এমন ব্যথাতুর ইতিহাস নিয়ে পাঠাইয়োনা আর ধরায়!

ছোট্ট জীবনের ঘানি টেনে যাই আপন জনের মরায়।

কবে বলো মোরে ডাকিয়া লইবে ঐ হাবীবের ধারে,

দুনিয়া আখিরাত সৃজন করিলা উছিলা করে যারে।

আর পারিনা বুকে ব্যথা নিয়ে ধৈর্য্য সীমায় নাই,

হুকুম করো এবার খানিক শান্তির ঘুমে যাই।

পরোপারেতে দিওগো খোদা এ ব্যথার প্রতিদান,

ক্ষমা করো যতো ঈমান ওয়ালা মুমিন মুসলমান।


সবশেষে: 

প্রিয় পাঠক, আল আব্বাস রবিন একজন নবীন লেখক। তিনি গল্প, কবিতা, ছন্দ ও উপন্যাস লিখতে ভালোবাসেন। আপনাদের সহানুভূতি ও ভালোবাসা পেলে ভবিষ্যতে আরও লেখা প্রকাশ করা হবে। আপনারা যদি কেউ আল আব্বাস রবিন এর লেখা গল্প ও কবিতার সমাহার বইয়ের পিডিএফ বই নিতে চান তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

Next Post Previous Post
3 Comments
  • Anonymous
    Anonymous July 29, 2025 at 11:51 PM

    অসাধারণ কবিতা লিখেছেন দোয়া ও শুভকামনা রইল আগামীতে আশা করি আরো ভালো ভালো গল্প কবিতা আমাদের উপহার দিবেন

    • Education BD Blog
      Education BD Blog July 30, 2025 at 1:08 AM

      আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখক আল আব্বাস রবিনের আরও নতুন নতুন লেখা পড়তে এই ওয়েবসাইটে নজর রাখুন।

      ইনশাআল্লাহ প্রতিদিন একটি করে লেখা উপহার দেবো।

    • Education BD Blog
      Education BD Blog July 30, 2025 at 1:13 AM

      একটি মেয়ের জীবন নিয়ে লেখা; যুবতীর পরিনতি কবিতাটি এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে, পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।

Add Comment
comment url