বাংলা সমার্থক শব্দ: সমার্থক শব্দ কাকে বলে? সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা কী?
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক এবং শিক্ষার্থী বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সমার্থক শব্দ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করবো। সমার্থক শব্দ কাকে বলে? সমার্থক শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্বপূর্ণ সমার্থক শব্দগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
|  | 
| গুরুত্বপূর্ণ সমার্থক শব্দগুলোর সাথে পরিচয়। | 
সমার্থক শব্দ কাকে বলে?
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আসুন প্রথমেই আমরা সমার্থক শব্দ কাকে বলে তা জেনে নিই। 'যে সব শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে বা যে সব শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করা চলে, তাদের বলা হয় সমার্থক শব্দ বা সমার্থশব্দ বা প্রতিশব্দ।' যেমন- 'গতি' এই শব্দটির সমার্থক শব্দ হলো: জঙ্গমতা, জঙ্গমত্ব, সৃতি, অস্থিতিঃ অস্থবিরতা, অস্থিরতা, রীতি, ঋতি। আবার 'ঘোড়া' শব্দটি দ্বারা একটি চতুষ্পদ জন্তুকে বোঝায়। কিন্তু এই চতুষ্পদ জন্তুকে বোঝাতে 'অশ্ব', 'ঘোটক', 'হয়' প্রভৃতি শব্দও ব্যবহার করা হয়। সমার্থক শব্দ ভালভাবে জানা থাকলে ভাষায় শব্দের পুনরাবৃত্তি দোষ ঘটে না। সমার্থক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষায় শ্রুতিমধুরতা রক্ষা করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।
সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা কী?
সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ হলো এমন শব্দ, যা অন্য একটি শব্দের মতোই অর্থ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষায় সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা অনেক। নিচে তার কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি: একই শব্দ বারবার ব্যবহার করলে লেখা বা বলার সময় একঘেয়েমি চলে আসে। সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে এই পুনরাবৃত্তি এড়ানো যায় এবং বাক্যকে আরও সুন্দর ও শ্রুতিমধুর করা যায়। যেমন, "সূর্য উঠেছে, সূর্যের আলোয় চারদিক ঝলমল করছে" না লিখে "সূর্য উঠেছে, তার কিরণে চারদিক ঝলমল করছে" লেখা যেতে পারে।
ভাব প্রকাশের গভীরতা: কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি শব্দের একাধিক প্রতিশব্দ তার অর্থের বিভিন্ন দিককে প্রকাশ করতে পারে। যেমন, 'জল' এর প্রতিশব্দ 'পানি' বা 'সলিল' ব্যবহার করলে লেখার বিষয়বস্তুর গভীরতা বা কবিতার ভাব আরও জোরালো হয়।
লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি: একজন ভালো লেখক বা বক্তার জন্য সমার্থক শব্দের ব্যবহার অপরিহার্য। এটি শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং লেখার মান উন্নত করে।
ভাষার সমৃদ্ধি: সমার্থক শব্দ ভাষার বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি বাড়ায়। এটি ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কবিতা ও সাহিত্যের রূপ: কবিতা, গান ও অন্যান্য সাহিত্যকর্মে উপমা, রূপক এবং ছন্দ ব্যবহার করার জন্য সমার্থক শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি লেখকের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ বাংলা সমার্থক শব্দ
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাংলা সমার্থক শব্দের উদাহরণ দেওয়া হলোঃ
আকাশ: অম্বর, ব্যোম, নভঃ, গগন, অন্তরীক্ষ, শূন্য, অনন্ত।
অশ্ব: ঘোড়া, ঘোটক, হয়, বাজী, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম, তুরগ।
অগ্নি: আগুন, অনল, পাবক, বহ্নি, হুতাশন, দহন, বৈশ্বানর, কৃশানু।
অতিশয়: অতি, অধিক, অতীব, অতিমাত্র, অত্যন্ত, একান্ত, নিতান্ত, পরম, সাতিশয়।
অন্ধকার: আঁধার, তিমির, তমঃ, তম, তমিস্র।
ইচ্ছা: অভিলাষ, অভিপ্রায়, বাঞ্ছা, বাসনা, স্পৃহা, কামনা, আকা-ক্ষা, অভিরুচি।
ঈশ্বর: বিধাতা, স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, খোদা, আল্লাহ্, ভগবান, জগদীশ্বর, পরমেশ্বর, ধাতা, জগদ্বন্ধু, বিধি,
পরমাত্মা, বিভু।
কেশ: চুল, অলক, চিকুর, কুন্তল।
কর্ণ: শ্রুতি, শ্রবণ, কান, শ্রবণেন্দ্রিয়।
কিরণ: কর, প্রভা, দীপ্তি, জ্যোতি, রশ্মি, আলো, অংশু।
কোকিল: পিক, বসন্তদূত, কলকণ্ঠ, পরভূত, কাকপুষ্ট, পরপুষ্ট।
গৃহ: আলয়, ভবন, নিলয়, নিকেতন, সনদ, আগার, ঘর, বাড়ি, আবাস।
গরু: ধেনু, গো, পয়ম্বিনী, গাভী।
চন্দ্র: সুধাকর, শশধর, শশাঙ্ক, বিধু, সোম, চন্দ্রমা, নিশাকর, সুধানিধি, হিমাংশু, শীতাংশু, সুধাংশু, চাঁদ।
চক্ষু: দর্শন, লোচন, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, চোখ।
জল: পানি, জীবন, সলিল, পয়, তোয়, বারি, অম্বু, নীর।
তীর: তট, পুলিন, সৈকত, কূল।
দিবা: দিবস, দিন, দিনমান।
দেহ: শরীর, গা, গাত্র, তনু, কলেবর, কায়া।
দেবতা: দেব, অমর, অজর, ত্রিদস, সুর।
ধন: অর্থ, সম্পদ, বিত্ত, বিভব।
ধনী: তটিনী, প্রবাহিনী, তরঙ্গিনী, শৈবালিনী, স্রোতস্বিনী, স্রোতস্বতী, নির্ঝরিণী।
নারী: রমণী, রামা, বামা, অবলা, মহিলা, স্ত্রী, স্ত্রীলোক, কামিনী, ভামিনী।
পিতা: বাবা, বাপ, জন্মদাতা, জনক।
পুত্র: ছেলে, তনয়, দুলাল, নন্দন, সুত, আত্মজ।
পদ্ম: শতদল, উৎপল, নলিনী, অরবিন্দ, সরসিজ, পঙ্কজ, সরোজ, কমল।
পক্ষী: পাখি, বিহঙ্গম, বিহগ, খেচর, দ্বিজ, খগ, অন্ডজ।
পর্বত: গিরি, শৈল, পাহাড়, অদ্রি, ভূধর, মহীধর, নগ, অচল, শৃঙ্গধর।
পৃথিবী: ধরণী, ধরা, ধরিত্রী, বসুন্ধরা, বসুমতি, বসুধা, ভূ, জগৎ, ভূবন, অবনী, মহী, মেদিনী, ক্ষিতি।
পাপ: কলুষ, দুষ্কৃতি, দুষ্কর্ম, পাতক।
ভার্যা: স্ত্রী, পত্রী, সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গিনী, দার, কলত্র, অঙ্গনা, বনিতা।
ভ্রমর: মধুকর, ঘটপদ, মধুপ, অলি, ভূঙ্গ, শিলীমুখ।
বৃক্ষ: তরু, দ্রুম, শাখী, পাদপ, মহীরূহ, উদ্ভিদ।
বন: জঙ্গল, অরণ্য, কান্তার, বিপিন, গহন, অটবী।
বায়ু: পবন, হাওয়া, বাতাস, সমীর, সমীরণ, অনিল, মরুৎ, গন্ধবহ, প্রভঞ্জন।
বন্ধু: মিত্র, সুহৃদ, বান্ধব, সখা।
বস্ত্র: বসন, পোশাক, কাপড়, পরিচ্ছদ, অম্বর, বাস, পরিধেয়।
বিদ্যুৎ: তড়িৎ, চপল, চঞ্চলা, অশনি, ক্ষণপ্রভা, অচির, প্রভা, দামিনী, সৌদামিনী।
মাতা: মা, জননী, গর্ভধারিণী, প্রসূতি।
ময়ূর: কলাপী, কেকা, শিখী, শিখন্ডী।
মেঘ: জলদ, বারিদ, জলধর, নীরদ, ঘন, অভ্র, জীমূত।
মৃত্যু: ইন্তেকাল, অন্ত, বিনাশ, মরণ, নাশ, নিধন, নিপাত, পরলোকগমন, স্বর্গলাভ, দেহত্যাগ,
লোকান্তরপ্রাপ্তি, পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, ইহলীলা সংবরণ, চিরবিদায়।
যুদ্ধ: সংগ্রাম, রণ, সমর, আহব, বিগ্রহ।
রাজা: নৃপেন্দ্র, নৃপতি, নরেশ, ভূপতি, ভূপ, নরপতি, ভূপাল, মহীপাল, দন্ডধর।
সূর্য: রবি, সবিতা, প্রভাকর, তপন, দিবাকর, ভাস্কর, দিনেশ, কিরণমালী, দিনমণি, ভানু, আদিত্য, মার্তন্ড,
অংশুমালী, দিননাথ।
স্বর্গ: বেহেশত, দ্যুলোক, ত্রিদিব, ত্রিদশালয়, দেবলোক, দেববাস, সুরলোক, দেবায়তন।
সমুদ্র: বারিধি, জলধি, সিন্ধু, অর্ণব, পারাবার, সাগর, রত্নাকর, জলনিধি, পাথার, নীলাম্বু, অম্বুধি, অম্বুপতি।
সমূহ: গণ, বৃন্দ, চয়, নিচয়, সমুদয়, পটল, বর্গ, মালা, রাজি, সকল।
সর্প: অহি, উরগ, নাগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম, ভুজগ, আশীবিষ, ফণী, ফণাধর।
সিংহ: পশুরাজ, মৃগরাজ, মৃগেন্দ্র, কেশরী।
হস্তী: হাতি, গজ, করী, কুঞ্জর, বারণ, দ্বিপ, মাতঙ্গ।
হস্ত: হাত, কর, ভুজ, বাহু।
পরিশেষেঃ
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে সমার্থক শব্দ কি? সমার্থক শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কী? এবং গুরুত্বপূর্ণ সমার্থক শব্দগুলোর তালিকাসহ উপরের আলোচনায় প্রকাশ করেছি। সমার্থক শব্দ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পারেন।
 
 
 
 
