নিরাপত্তাহীনতা কি? নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহ আলোচনা কর

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় 
মাস্টার্স শেষ পর্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয় কোড : ৩১১৯০৯ 

নিরাপত্তা অধ্যয়ন (Security Studies)
রচনামূলক প্রশ্নবলি



প্রশ্নঃ নিরাপত্তাহীনতা বলতে কি বুঝ? নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহ সম্পর্কে লিখ।

ভূমিকাঃ উন্নত, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল সকল দেশের জন্যই নিরাপত্তা প্রয়োজন। নিরাপত্তার কোনো নির্দিষ্ট পরিধি নেই। যে দেশ যত বেশি উন্নত, তার নিরাপত্তা তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নানাবিধ কারণে বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিরাপত্তাহীনতা একক সূচকের বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে হলে জ্ঞান, প্রেষণা, আন্তর্জাতিক পলিসি নির্ধারণ, ইন্টেলিজেন্স পলিসি, উন্নয়ন পলিসি, অর্থনৈতিক অবস্থা প্রভৃতি উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে।
নিরাপত্তাহীনতা কি? নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহ আলোচনা কর।
নিরাপত্তাহীনতা কি? নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহ আলোচনা

নিরাপত্তাহীনতাঃ

পরমাণু শক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, ক্ষুধা, দারিদ্রা, সামাজিক বৈষম্য, অভিবাসন সংকট ইত্যাদি কারণে নিরাপত্তার যে অভাব পরিলক্ষিত হয়, তাকে নিরাপত্তাহীনতা বলে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা চিহ্নিত করার কোনো একক সূচক নেই। তবুও নিরাপত্তাহীনতার আলোচনায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হয়।

১. পারমাণবিক নিরাপত্তাহীনতা।
২. পরিবেশ ও প্রতিবেশগত নিরাপত্তাহীনতা।
৩. খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা।
৪ লিঙ্গীয় নিরাপত্তাহীনতা।
৫ অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা।
৬. জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা।
৭. মানবিক নিরাপত্তাহীনতা।
৮. পরিচয়ে বাdani) নিরাপত্তাহীনতা।
৯ সাংস্কৃতিক নিরাপত্তাহীনতা।
১০. ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা।
১১. সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা। যেমন- সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য।
১২. সামরিক শক্তির অভাব ও অবকাঠামো সামরিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে।

নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহঃ

নিম্নে নিরাপত্তাহীনতার কারণসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. পরমাণু চুল্লির বিস্ফোরণঃ

পরমাণু চুল্লির বিস্ফোরণ বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৩ সালের পরমাণু চুল্লির বিস্ফোরণ শুধু জাপান নয়, বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।

২. যুদ্ধ ও পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার

হাইড্রোজেন বোমা, নাপাম বোমা, ক্লাস্টার বোমা এবং পারমাণবিক বোমা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এ সকল বোমার ভয়াবহতার কারণে মানুষ, পশুপাখি, জীবজগৎ, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা প্রভৃতি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হচ্ছে। ১৯৪৫ সালে জাপানের দুটি শহরে যে বোমা ফেলা হয়, তার ক্ষত আজো জাপান বয়ে বেড়াচ্ছে।

৩. কূটনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাঃ 

পারস্পরিক আস্থার সংকট থাকলে সাধারণত কূটনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে এ ধরনের সংকটের মোকাবিলা করতে হয়। সামরিক মহড়া, যুদ্ধযুদ্ধ ভাব আক্রমণের প্রস্তুতি ইত্যাদি হুমকি সচরাচর নিতে হয়।

৪. পরিবেশগত নিরাপত্তাহীনতাঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ বা বর্তমান সময়ের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বলি সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, রুয়ান্ডা ইত্যাদি দেশে বিরাজমান পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার, ড্রোন হামলা, গুচ্ছ বোমার ব্যবহার একদিকে জীবজগতের ধ্বংস সাধন করেছে অপরদিকে বিশ্ববাসীকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছে।

৫. জ্বালানি নিরাপত্তাঃ

প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল সম্পদ, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন প্রভৃতি জ্বালানি শিল্প-কারখানা, যানবাহন, রান্নাবান্না ও সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হওয়ার কথা, কিন্তু সেসব জায়গায় ঠিকমতো ব্যবহৃত না হয়ে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিশ্ব জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

৬. পরিবেশগত কারণঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ বা বর্তমান সময়ের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বলি সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, রুয়ান্ডা প্রভৃতি দেশের বিরাজমান পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার, ড্রোন হামলা, গুচ্ছ বোমার ব্যবহার একদিকে জীবজগতের ধ্বংস সাধন করছে অন্যদিকে বিশ্বকে নিরাপত্তাই।নতায় ফেলে দিয়েছে।

৭. বাস্তুসংস্থান ধ্বংসঃ

মানুষ, ঘরবাড়ি, পশুপাখি, গাছপালা, আলো-বাতাস, তাপ, পানি সব কিছুই পরিবেশের অন্তর্গত। পরিবেশের এ উপকরণসমূহের কোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে। পাখির খাদ্য পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, আবার ছোট প্রাণীকে বড় প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে। এ বাস্তুসংস্থান বিনষ্ট করে পরিবেশ ধ্বংসকারী পরমাণু অস্ত্র, যা নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ।

৮. অর্থনৈতিক ও মানবিক নিরাপত্তাহীনতাঃ 

একটি দেশের চালিকাশক্তি মানব সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ, সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা, নেতৃত্ব, বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণকারী কৃষিজ পণ্য, শিল্প-কারখানা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা মানুষের মানবিক ও অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে, যা নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত।

৯. স্বাস্থ্য নিরাপত্তাহীনতাঃ

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সেদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিধান অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সময়ে উন্নত ও অনুন্নত কোনো দেশই স্বাস্থ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক কাল থেকে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতির পথ অতিক্রম করে আসছে। আর এ উন্নতির পথ থেকে নিরাপত্তাহীনতার উপাদান বের হয়ে আসছে। কেননা একজনের নিরাপত্তা অন্যজনের নিরাপত্তাহীনতার কারণ। তাই উপরের আলোচিত বিষয়সমূহ বর্তমান সময়ের নিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url