প্রবন্ধ রচনা: একুশ শতকের পৃথিবী

একুশ শতকের প্রত্যাশা 

অথবা 
একুশ শতকের পৃথিবী।

The world in the 21st century
বাংলা ২য় পত্র, প্রবন্ধ রচনাঃ একুশ শতকের পৃথিবী।


ভূমিকা 

সময় পরিবর্তনশীল, কাল প্রবাহমান। নদীর স্রোতের মতোই কাল ধাবমান, কাল প্রবাহ বিশ্বের মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে এক শতাব্দী থেকে অন্য শতাব্দীতে। ঘড়ির কাটার সাথে তাল মিলিয়ে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর, যুগ ও শতক চলছে আপন গতিতে। এ চলার কোন আদি অন্ত নেই। কবে থেকে এ চলা শুরু হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনা, কবে শেষ হবে তাও অজ্ঞাত। ধাবমান পৃথিবী এগিয়ে চলছে যুগ যুগ ধরে। শতকের সিঁড়ি বেয়ে পৃথিবী এসে দাঁড়িয়েছে হাজার বছরের আঙিনায়। বিশ শতকের যবনিকাপাত ঘটিয়ে পৃথিবী পা রেখেছে একুশ শতকে। উথান-পতন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সমৃদ্ধি-ব্যর্থতার, সমাহার ঘটিয়ে বিদায় নিয়েছে বিশ শতকের পৃথিবী। একুশের এ বর্ণাঢ্য সময়কে হাতছানি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে পৃথিবী। 

বিশ্ব পরিস্থিতি 

২১ শতকের আগমনকে গৌরবানী করে তোলার জন্য বিশ্বব্যাপী মহা আয়োজন শুরু হয়েছে। নতুন শতাব্দীকে বরণ করার জয় গান শুরু হয়েছে দিকে দিকে। উন্নতির ক্রমধারায় কালের আবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিশ্ব। তাই গত পৃথিবী এবং বর্তমান পৃথিবী এক নয়। অতীত পৃথিবীতে মানুষের চলাফেরা ছিল একটি অসন্তোষ ভাব। আর আজকের পৃথিবী আধুনিকতার চরম শিখরে উপনীত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বিস্ময়কর উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। উন্নত দেশগুলো শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রভুত উন্নতি সাধনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে। অপরদিকে অনুন্নত দেশগুলোর অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। শিক্ষায় সম্পদে তারা মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে। অনুন্নত দেশগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে উন্নত দেশগুলোর সাহায্য। উন্নত আর অনুন্নত দেশের আজকের সমৃদ্ধির এই দিনটি ১৯ শতকের অবদান। গত এক শতাব্দীর কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে বিশ্বের বর্তমান এই পরিস্থিতি। আর বর্তমান বিশ্ব তার উন্নত এবং অনুন্নত এই দুই রূপ নিয়েই আজ একুশ শতকে উপনীত। 

উন্নত বিশ্বে একুশ শতক 

২১ শতকে বিশ্ব কি পরিস্থিতিতে পৌঁছাবে তার পর্যালোচনা করতে হলে উন্নত বিশ্বের অবস্থানটি বিবেচনা করা আবশ্যক। উন্নত দেশগুলোতে যে অগ্রগতির সাধিত হয়েছে তাতে তাদের জীবনে ঐশ্বর্যের বিপুল সমৃদ্ধির সমাবেশ ঘটেছে। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির সুফল ভোগ করেছে উন্নত দেশগুলো। এসব সমৃদ্ধ জাতির সামনে আগামী দিনের সমৃদ্ধির স্বপ্ন খুবই স্পষ্ট। সেসব বাস্তবায়িত করার সামর্থ্য তাদের হাতে বিদ্যমান। নিজেদের বিগত অগ্রগতির পটভূমিকায় নিজেদের জ্ঞান সম্পদ ও প্রযুক্তির যথাযোগ্য সমন্বয় ঘটিয়ে তারা ২১ শতকে আরো অগ্রগতি সাধন করবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের উচ্ছিষ্টে বিগত শতকের মতোই এ শতাব্দীতে অনুন্নত দেশের মানুষ জীবন ধারণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। একুশ শতকে উন্নত বিশ্ব নিজের জন্য আরও বেশি সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসছে। এ শতকে তারা তাদের অগ্রগতির মধ্য বিশ্বের দারিদ্র্য দেশগুলোর উপর অধিকতর প্রভাব বিস্তার করবে, গঠন করবে এক উন্নততর বিশ্ব। তাদের বিস্ময়কর অগ্রগতিতে মানুষের জীবন স্বাভাবিকভাবেই আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। 

অনুন্নত দেশগুলোর অবস্থা 

একুশ শতকে আমাদের প্রত্যাশা সমৃদ্ধময় এক নতুন পৃথিবী। এ লক্ষ্য বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান চর্চার নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে শিল্পীরা তৈরি করেছে নতুন নতুন শিল্পকর্ম। তবুও এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, অনুন্নত দেশগুলোর প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যাবে। কারণ অনুন্নত দেশে অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে প্রগতি খুবই মনন্থর। শিল্প কারখানায় স্থাপিত হয়েছে তা উৎপাদনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্য দেখা দিয়েছে ঘাটতি। এই প্রেক্ষিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যেখানে কষ্টকর সেখানে নতুন শতাব্দীর রূপ যে অনুন্নত দেশে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিবে তেমন আশা করা নিরাশা মাত্র। নিজের পায়ে দাড়ানোর সামর্থর যেখানে অভাব সেখানে নতুন শতাব্দীতে এখানকার জনজীবন সুখকর আশ্বাদ লাভ করবে এমন কল্পনা করাও দুরাশা বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না একুশ শতককে অবশ্যই বরণ করে নিতে হবে। 

বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও একুশ শতক 

বিশ শতকের শেষের দিকে নজর দিলে একুশ শতক নিয়ে মানব মনে যে কৌতুহল ও জিজ্ঞাসার জন্ম নিয়েছে তার জবাব পাওয়া যায়। উত্তরোত্তর শতকের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। নব নব আবিষ্কার পূর্বের শতকের সকল পুরাতনকে চলার পথে বাধার সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানের নতুন বিস্ময়কর আবিষ্কার সমূহ ক্রমান্বয়ে ডানা প্রসারিত করে চলছে সীমাহীন কোন অজানায়। এ পর্যন্ত বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করেছে তাকে চূড়ান্ত বলে মনে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানে চূড়ান্ত বলে কোন কথা নেই। সুতরাং একুশ শতকের বিজ্ঞান হয়তো মানুষকে অন্য কোন গ্রহে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিতে পারে। আর যন্ত্র সভ্যতার উন্নতির ফলে মানুষের পরিশ্রম বহু গুণের হ্রাস পেয়েছে। বলা যায়না নতুন শতাব্দীতে মানুষ আবার অকর্মা ঠুটোঁ জগন্নাাথে পরিণত হবে কিনা। 

জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান 

বিশ শতাব্দী একদিকে যেমন উন্নতির শীর্ষ চুড়া ছুঁয়েছে ঠিক তেমনি প্রভুত সংকট ও সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। সব সমস্যার মাঝে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে জনসংখ্যা যে পরিমাণ ছিল মাত্র ৭ দশক অতিবাহিত না হতেই এখন তা প্রায় চার গুণ হয়ে গেছে। জনসংখ্যার এই স্রোতধারা অব্যাহত থাকলে ২১ শতকে পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ব্যাহত হবে পৃথিবীর উন্নয়ন কার্যক্রম মানব সমাজে নেমে আসবে বিভিন্ন সমস্যার সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংকটও। তাই বিজ্ঞানীরা এ সংকট নিরসনে এখন অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

উন্নত চিকিৎসা 

চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতি বর্তমান জগতের আর এক বিস্ময়। বর্তমান বিজ্ঞান এ পর্যন্ত দুরারোগ্য ব্যাধির প্রচুর ঔষধ আবিষ্কার করেছে উদ্ভাবন করেছে রোগ নিরাময়ের নানা কৌশল। কিন্তু তবু পৃথিবীতে বর্তমানে এমন কিছু জটিল ব্যাধি রয়েছে যা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা করতে বিজ্ঞান সমর্থ্য হয়নি। আগামী শতকে হয়তো আতঙ্ক মুক্ত পৃথিবী গড়েতে বিজ্ঞান আরো নতুন ঔষধ আবিষ্কারের সক্ষম হবে। 

উপসংহার 

পুঁজিবাদের করাল গ্রাসে ধনী দেশগুলো আরো ধনী এবং গরীব দেশগুলো আরো গরিব হওয়াও বিচলিত বিষয়। আবিষ্কারের নেশায় পৃথিবী যেমনি আনন্দ মুখর তেমনি মরনাস্ত্রের ভয়ে বিশ্ববাসী আতঙ্কগ্রস্থ। শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের মাধ্যমে একুশ শতকে আমরা যেন আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে পারি তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন শতকে বিশ্বের যে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে বাংলাদেশকেও। সেজন্য দেশের সকল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে একুশ শতকের বিশ্বের মাপকাঠিতে সমন্বয় করে রূপ দিতে হবে। নতুন শতাব্দীতে নতুন পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে এটাই নতুন শতাব্দীর প্রত্যাশা। 


প্রয়োজনীয় কীওয়ার্ডঃ
একুশ শতকের পৃথিবী।
একুশ শতকের প্রত্যাশা।
একুশ শতকের পৃথিবী কেমন হবে?
একুশ শতকের পৃথিবীর অর্থনীতি কি ধরনের?
একুশ শতকের পৃথিবীর অর্থনীতি কী ধরনের?
একুশ শতকের পৃথিবীর অর্থনীতি কোন ধরনের?

Next Post Previous Post