মহাজোট কি? মহাজোটের গঠন ও কর্মসূচি আলোচনা কর
ভূমিকা: বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে গঠিত জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মূলত খালেদা জিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে মহাজোট গঠিত হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ এরশাদের সাথে আঁতাত করে এই জোটটি গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে মহাজোট বিপুল জনসমর্থন আদায়ের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী মন্ত্রিসভা গঠন করে। নিচে মহাজোটের গঠন ও কর্মসূচি আলোচনা করা হলো।
![]() |
মহাজোটের গঠন ও কর্মসূচি আলোচনা কর |
মহাজোট কি?
মহাজোটের গঠন ও কর্মসূচি:
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনা করছে।
(ক) মহাজোটের গঠন:
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪টি দলের সমন্বয়ে মহাজোট গঠিত হয়। এ মহাজোটের নেত্রী নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থাপিত হয়। ১৪ দলীয় জোটের আদর্শ হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং অন্যান্য ৯টি ক্ষুদ্র দল। তবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসে এবং পৃথকভাবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
৬৩৩ আওয়ামী লীগ এরশাদকে জোটে ভেড়াতে উল্লেখযোগ্য ছাড় দিয়ে ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সঙ্গে দফা চুক্তি করে। এদিন এরশাদ ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৪ দলের মহাসমাবেশে উপস্থিত হন। সেদিন ১৪ দলের বাসমাবেশ মঞ্চে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ ইসলামি তাজোট ও জাকের পার্টি ইত্যাদি দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতির মাধ্যমে গড়ে উঠে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রংজোট। তারপর ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনকে (যা পরে বাতিল হয়ে যায়) সামনে রেখে নির্বাচনী জোটে পান্তরিত হয় এই মহাজোট।
খেলাফত মজলিস চার দলীয় জোট ত্যাগ করার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এভাবে আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি মহাজোট গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় পার্টি এরশাদ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, এলডিপি এবং খেলাফত মজলিসকে নিয়ে মহাজোট গঠনে সক্ষম হয়।
(খ) মহাজোটের কর্মসূচিসমূহ:
আওয়ামী লীগ হলো মহাজোটের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ১৪ দলীয় জোট ২২ নভেম্বর, ২০০৫ ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২৩ দফা অভিন্ন জানতম কর্মসূচি ঘোষণা করে। এসব কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-
১. জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশ রক্ষা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার:
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ১৪ দলীয় জোট নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষণা করে ক্ষমতায় গেলে তারা দেশকে উগ্র সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র অপশক্তি ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার ও প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে এই *ক্তির অপসারণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা, ধর্ম, মুক্তচিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করবে।
২. সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা:
'প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতা সম্পদের মালিক জনগণ' এই নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
৩. মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পান:
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তার ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা দিয়েছে।
৪. নারীর ক্ষমতায়ন:
বর্তমান মহাজোট সরকার ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতি পুনর্বহাল করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগত ও শিক্ষাগতভাবে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
৫. জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করা:
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তার ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে এবং এর মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে।
৬. আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ:
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ১৪ দল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা করে ক্ষমতায় গেলে তারা আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন, পানি ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নেবে। বর্তমানে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
৭. 'সবার সাথে বন্ধুত্ব ও কারো সাথে বৈরিতা নয়' নীতিতে পররাষ্ট্রনীতি:
বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে 'সবার সাথে বন্ধুত্ব ও কারো সাথে বৈরিতা নয়'- এ নীতির আলোকে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে এ সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মহাজোটকে প্রধান আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ী হয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ মহাজোট সরকার বাংলাদেশের সরকারি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন করছে যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।