জোট রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো কি কি? বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোটের বর্ণনা দাও
ভূমিকা: আধুনিক রাজনীতির অন্যতম দিক হচ্ছে রাজনৈতিক জোটবদ্ধতা। যখন কতিপয় রাজনৈতিক দল তাদের মূল আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে বিসর্জন না দিয়ে বৃহত্তম জাতীয় স্বার্থে একতাবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে তখন তাকে রাজনৈতিক জোট বলে। জোট রাজনীতির মাধ্যমে দুই বা ততোধিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার পরিচালনা করছে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোট গঠনের প্রবণতা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
![]() |
জোট রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো কি কি? বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোটের বর্ণনা |
জোট রাজনীতির ইতিবাচক দিক এবং বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোট:
জোটবদ্ধতা একটি রাজনৈতিক ইস্যু। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর হতেই এর রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় ও দলীয় কারণে স্থিতিশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ অভাব প্রকট আকার ধারণ করে ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হতে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অধিকাংশ সময়ই জোট গঠন করে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোট গঠনের প্রবণতা বেশি মাত্রায় লক্ষ করা যাচ্ছে। নিম্নে জোট রাজনীতির ইতিবাচক দিক এবং বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোটের বর্ণনা দেওয়া হলো:
(ক) জোট রাজনীতির ইতিবাচক দিকসমূহ:
জোট রাজনীতির বহু ইতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন-
১. অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ:
জোট রাজনীতির প্রধান সুবিধা হলো জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের মাধ্যমে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রাজনৈতিক উন্নয়ন গতি পায়।
২. জাতীয় সরকার:
জোট রাজনীতির অন্যতম ইতিবাচক দিক হচ্ছে জাতীয় সরকার গঠন। জাতীয় সরকার-গঠনের জন্য দলগুলোর ঐকমত্যের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক জোট গঠনের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে জাতীয় সরকার গঠনের পথ সুগম হয়।
৩. ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা:
রাজনৈতিক জোটবদ্ধতার কারণে সরকারে মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪. সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ:
এক দলীয় ব্যবস্থায় শাসক শ্রেণীর স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে রাজনৈতিক উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং এতে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।
৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন:
জোট রাজনীতির আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো এর মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যায়। রাজনৈতিক জোটবদ্ধতায় দলগুলো একত্রিত হয়ে জাতীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে। ফলে এদের মধ্যে ক্ষোভ থাকে না, আর এটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
(খ) বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোটসমূহ:
বাংলাদেশের নবম এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দুই মেয়াদে সরকার গঠন করে। বর্তমানে এই মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনা করছে। নিম্নে বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক জোট মহাজোটের বর্ণনা দেওয়া হলো-
বর্তমান সরকারের গঠিত রাজনৈতিক মহাজোটের বর্ণনা:
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪টি দলের সমন্বয়ে মহাজোট গঠিত হয়। এ মহাজোটের নেত্রী নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থাপিত হয়। ১৪ দলীয় জোটের আদর্শ হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং অন্যান্য ৯টি ক্ষুদ্র দল। তবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসে এবং পৃথকভাবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
আওয়ামী লীগ এরশাদকে জোটে ভেড়াতে উল্লেখযোগ্য ছাড় দিয়ে ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সঙ্গে ১৫ দফা চুক্তি করে। এদিন এরশাদ ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৪ দলের মহাসমাবেশে উপস্থিত হন। সেদিন ১৪ দলের মহাসমাবেশ মঞ্চে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ ইসলামী ঐক্যজোট ও জাকের পার্টি ইত্যাদি দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতির মাধ্যমে গড়ে উঠে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। তারপর ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনকে (যা পরে বাতিল হয়ে যায়) সামনে রেখে নির্বাচনি জোটে রূপান্তরিত হয় এই মহাজোট।
খেলাফত মজলিস চার দলীয় জোট ত্যাগ করার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এভাবে আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি মহাজোট গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি এবং খেলাফত মজলিসকে নিয়ে মহাজোট গঠনে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সমর্থ হয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জোট রাজনীতির প্রভাব অনেক বেশি এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অধীনে বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা অবিরাম গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে মহাজোট সরকার জঙ্গিবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা দান, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি বিষয়ে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বর্তমান মহাজোট সরকার নানা দিক থেকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।