গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) এবং বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO), ১৯৭২, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ এবং নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি মৌলিক আইন। এটি ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ১৫৫ নং আদেশ দ্বারা প্রণীত হয়েছিল এবং সেটা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদেরকে RPO এর মূল দিকগুলোর মধ্যে যেসকল বিষয়াবলী সম্পর্কে সাধারণ ধারণা প্রদান করবো তা হলো- প্রণয়ন সংশোধন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী, দুর্নীতিমূলক অপরাধ, বেআইনি আচরণ এবং অন্যান্য শাস্তি ইত্যাদি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) এবং বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) এবং বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন উত্তর 

সাধারণ জ্ঞান: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) এবং বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন

১. RPO কি?

উত্তরঃ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ এবং নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে ১৯৭২ সালে জারীকৃত আদেশই Representation of the people order বা সংক্ষেপ RPO নামে পরিচিত।

২. RPO-এর পূর্ণরূপ কি?

উত্তরঃ 'Representation of the People Order.'

৩. Representation of the People Order' (RPO)-এর বাংলা রূপ কি?

উত্তরঃ 'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ' (আরপিও)।

৪. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ কি নামে অভিহিত?

উত্তরঃ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২।

৫. কত সালে 'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ' প্রণয়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

৬. রাষ্ট্রপতির কত নং আদেশ বলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ প্রণয়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১৫৫।

৭. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ কোথায় প্রযোজ্য হবে?

উত্তরঃ সমগ্র বাংলাদেশে।

৮. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ কতবার সংশোধিত হয়েছে?

উত্তরঃ ৩ বার।

৯. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সর্বশেষ সংশোধিত হয় কখন?

উত্তরঃ ১২ নভেম্বর, ২০০৯।

১০। নির্বাচন কমিশন কোন ধারা বলে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব বা সহায়তা প্রদানে নির্দেশ দিতে পারে?

উত্তরঃ আরপিও-এর ৫ ধারা বলে।

১১। কোন ধারা অনুসারে নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেন?

উত্তরঃ RPO-এর ৭ ধারা অনুসারে।

১২। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯ ধারায় কি বলা হয়েছে?

উত্তরঃ রিটার্নিং অফিসারকে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি প্যানেল তৈরির কথা বলা হয়েছে।

১৩। কত ধারায় নির্বাচন কমিশনকে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাইয়ের তারিখ নির্ধারণ ও প্রচারে প্রজ্ঞাপন জারির ক্ষমতা দিয়েছে?

উত্তরঃ RPO-এর ১১ ধারায়।

১৪। RPO-এর কত ধারায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় জামানত প্রদানের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৩নং ধারায়।

১৫। মনোনয়নপত্র বাছাই করার ক্ষমতা কার উপর অর্পিত?

উত্তরঃ রিটার্নিং কর্মকর্তার উপর।

১৬। RPO-এর কত নং ধারায় বৈধ মনোনীত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৫ নং ধারায়।

১৭। কোন ধারা অনুসারে প্রার্থী নিজ স্বাক্ষরে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন?

উত্তরঃ RPO ধারা ১৬ (১) ও ১৬ (২) অনুসারে।

১৮। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার শর্ত বর্ণিত হয়েছে কোন ধারায়?

উত্তরঃ RPO-এর ১৯ নং ধারায়।

১৯। RPO-এর কত নং ধারায় প্রার্থীদের পছন্দ অনুসারে প্রতীক বরাদ্দের বিধান রয়েছে?

উত্তরঃ ২০ নং ধারায়।

২০। কোন ধারায় নির্বাচনী এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে?

উত্তরঃ ২১ (১) ও ২১ (২) নং ধারায়।

২১। RPO-এর কোন ধারায় প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বা তার প্রতিনিধির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোট পুনঃগণনার বিধান রয়েছে?

উত্তরঃ ৩৭ (৫) নং ধারায়।

২২। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ কোনো কোনো বিষয়কে দুর্নীতিমূলক অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে?

উত্তরঃ আদেশের ৭৩ নং ধারায় ৪৪-ক ও ৪৪-খ এর বিধান লঙ্ঘন, ঘুষ গ্রহণ, ছদ্মবেশ ধারণ, নির্বাচনে অসঙ্গত প্রভাব খাটানো, কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী সাফল্যে বিঘ্ন সৃষ্টি বা তার নিজস্ব বা আত্মীয়স্বজনের ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতিদান, কোনো প্রার্থীর প্রতীক বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতিদান, কোনো প্রার্থীর বিশেষ সামাজিক বা ধর্মীয় অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটদানের আহ্বান বা প্ররোচিতকরণ, ভোটার উপস্থিতিতে বা ভোটদানে বাধা দান এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘুষ গ্রহণকে দুর্নীতিমূলক অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

২৩। RPO-এর কত নং ধারায় বেআইনি আচরণের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ৭৪ নং ধারায়।

২৪। RPO অনুযায়ী বেআইনি আচরণের শাস্তির বিধান কি?

উত্তরঃ জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ৭ বছর ও সর্বনিম্ন ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

২৫। কখন হতে নির্বাচনী এলাকাভুক্ত সকল স্থানে জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান ও তাতে যোগদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে?

উত্তরঃ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের দিবাগত মধ্যরাত থেকে পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।

২৬। কত ধারায় ভোটকেন্দ্রের কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তির বিধান আছে?

উত্তরঃ ৮০ নং ধারায়।

২৭। ভোটকেন্দ্রের কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তির বিধান কি?

উত্তরঃ জরিমানাসহ ঊর্ধ্বে ৩ বছর এবং নিম্নে ৬ মাস কারাদণ্ড।

২৮। জালভোট প্রদানের সর্বোচ্চ শাস্তি কি?

উত্তরঃ জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।

২৯। কিসের স্বার্থে বাংলাদেশে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ প্রণীত হয়েছে?

উত্তরঃ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ এবং কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে প্রণীত হয়।

৩০। নির্বাচনী আইন কি?

উত্তরঃ নির্বাচনী সংক্রান্ত আইন বিধান।

৩১। নির্বাচনী আইনের লক্ষ্য কি?

উত্তরঃ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা, প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের আচরণ ব্যাখ্যা এবং এ সম্পর্কিত বিধি-বিধান লঙ্ঘন করলে লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা।

৩২। বাংলাদেশে বিদ্যমান কয়েকটি নির্বাচনী আইনের উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ১৯৭২, আচরণ বিধিমালা ১৯৯৬, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ ইত্যাদি।

৩৩। কত সালে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

৩৪। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন কত সালে প্রণয়ন করা হয়?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

৩৫। কত সালে নির্বাচন কমিশন আচরণ বিধিমালা প্রণীত হয়?

উত্তরঃ ১৯৯৬ সালে।

৩৬। কত নং ধারা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বিধিমালা ১৯৭২ প্রণয়ন করে?

উত্তরঃ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯৪ নং ধারা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে।


শেষ কথা: 

পরিশেষে বলা যায় নির্বাচনী আইনের মূল লক্ষ্যবস্তু হলো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা, প্রার্থী ও নির্বাচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের আচরণ ব্যাখ্যা করা এবং বিধি-বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url