রোমিও জুলিয়েট প্রেমের উপন্যাস (বাংলা ভার্ষণ)

নাটকের নামঃ রোমিও ও জুলিয়েট
লেখকঃ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার 
(বাংলা ভার্ষণ)

পর্ব- ০৫ (শেষ পর্ব)


মান্ডুয়ায় বসে রোমিও জুলিয়েটের খবরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। সেদিন সে খুশিই ছিল কারণ সে স্বপ্ন দেখেছে যে তার প্রেমিকা তার কাছে এসেছে, যদিও সে তখন মৃত। রোমিও ভাবে স্বপ্নটা বড় অদ্ভুত কারণ সেখানে মৃত ব্যক্তিকেও ভাবতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রেমিকা এসে ঠোঁটে চুম্বন করা মাত্র সে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং সে হয়েছে সম্রাট। রোমিও ভাবে প্রেমের স্বপ্নই যেখানে এত আনন্দের সেখানে প্রেম না জানি কত মধুর! ভৃত্য বালথাজারকে আসতে দেখে রোমিও এগিয়ে যায়, জিজ্ঞেস করে, ভেরোনার খবর কি বালথাজার? ফাদারের কাছ থেকে কোন চিঠি আনোনি? বাবা কেমন আছেন? জুলিয়েট কেমন আছে? আমি এই প্রশ্নটা আবার করলাম কারণ সে ভাল থাকলেই সব ভাল। বালথাজার বলে, তা হলে বলব সে ভাল আছে আর তার মানেই সব ভাল। আমি তাকে গীর্জার ঘরে ঘুমোতে দেখেছি কিন্তু তার অমর আত্মা চলে গেছে পরীদের রাজ্যে। আমি দেখেছি যে তাকে ছোট্ট কুঠুরীতে শোয়ানো আছে আর তা দেখা মাত্র আপনাকে খবর দিতে চলে এসেছি। এই খারাপ খবর আনার জন্যে আমি দুঃখিত কিন্তু আমি কেবল আমার কর্তব্য করেছি।

রোমিও জুলিয়েট প্রেমের উপন্যাস বাংলা
রোমিও জুলিয়েট প্রেমের উপন্যাস 

রোমিও হতবাক হয়ে বলে, তাই? আর আমি কিছু মানতে রাজি নই। আমায় কালি আর কাগজ দাও আর ঘোড়া ভাড়া করো। আমি আজ রাতেই রওনা দেব। বালথাজার চলে গেলে রোমিও বলে, জুলিয়েট আজ রাতে আমি তোমার পাশে শোব।

রোমিও তার পরিচিত এক দরিদ্র ওঝার কাছে আসে। বড় রকমের অর্থের বিনিময়ে সে তার কাছে চায় তীব্র বিষ বা কয়েক মুহূর্তে মৃত্যু ডেকে আনবে। ওঝা বললে, সে রকম বিষ আমার কাছে আছে কিন্তু মান্ডুয়ার আইন অনুসারে সে বিষ বিক্রয়ের শাস্তি মৃত্যু।

এত দুঃখী দরিদ্র মানুষ তুমি অথচ মরতে ভয় পাও? বলে রোমিও, তুমি আধপেটা খেয়ে থাকো সেটা তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায়, ভিক্ষেই তোমার অবলম্বন; এই পৃথিবী বা পৃথিবীর আইন তোমায় দেখেনি, পৃথিবীতে কোন আইন নেই যা তোমাকে ধনী করে দেবে। তার চেয়ে তুমি আইন ভাঙ্গে। আর টাকাটা নাও।

ওঝা বলে, আমি গরীব কিন্তু আমার মন চাইছে না।

আমি তোমায় দারিদ্র দূর করার জন্যে টাকা দিচ্ছি, মনের তৃপ্তির জন্যে নয়। রোমিওর কথায় তার হাতে বিষ ভুল দিয়ে ওঝা বলে, কোন তরল পদার্থে এই বিষ মিশিয়ে নিয়ে পান করবেন। কুড়ি জনের শক্তি ধরলেও এই বিষ সোজা পরপারে পাঠিয়ে দেবে। ওঝাকে টাকা দিয়ে রোমিও বলে, আমিও তোমাকে বিষ দিলাম যা মানুষের আত্মাকে হত্যা করে। তোমার দেওয়া বিষের থেকেও তা আরও মারাত্মক। আমি বরং তোমায় বিষ বিক্রয় করলাম, তুমি আমাকে করোনি। বিদায়। তুমি খাবাড্ডাষার কেনো আর গায়ে মাংস লাগাও। আর আমি যা পেলাম তা বিষ নয়, অমৃত। চলো অমৃত, আমার সঙ্গে জুলিয়েটের সমাধিস্থলে চলো, সেখানে আমি তোমায় পান করব।

ফাদার লরেন্স গীর্জার অন্য এক সাধু ফাদার জনের হাত দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন রোমিওকে। ফাদার জন সঙ্গী হিসেবে কাউকে পাওয়ার জন্যে আর একজন সাধুর কাছে যান। ওই সাধু তখন এক মুমূর্ষু রোগীর সেবা করছিলেন। শহরের প্রহরীরা মনে করে রোগী কোন সংক্রামক ব্যাধিতে ভুগছে এবং সেটা যাতে না ছড়ায় তার জন্যে রোগীর সঙ্গে দুই সাধুকেও ঘরে বন্ধ করে রেখে চলে যায়। ফলে তার পক্ষে মাতুয়া যাওয়া সম্ভব হয়নি। আর রোমিওর কাছে ফাদারের চিঠিও পৌছায়নি। ফাদার জনের মুখে এই বিরবণ শুনে ফাদার লরেন্স আক্ষেপ করেন যে ওই চিঠি রোমিওর হাতে না পৌছালে বড় রকমের বিপদ হতে পারে। ফাদার জনকে তিনি একটি লোহার বাটালি আনতে বলেন। ফাদার জন চলে গেলে ফাদার লরেন্স আপন মনেই বললেন, গীর্জার চত্বরে যে সমাধি সৌধে জুলিয়েট ঘুমিয়ে আছে সেখানে একা যাব। আর তিন ঘণ্টার মধ্যেই সে জাগবে ও রোমিওকে পাশে না দেখে ভুল বুঝবে। আমি মান্ডুয়ায় আবার চিঠি লিখছি, রোমিও, না আসা পর্যন্ত জুলিয়েটকে আমার ঘরে রাখতে হবে। বেচারী জীবন্ত মৃতদেহ, বেঁচে থেক্টেও মৃতদের কুঠুরীতে বদ্ধ হয়ে আছে।

এদিকে প্যারিস আসে জুলিয়েটের কবরে ফুল দিতে। ভৃত্যকে বলে কাছেই গীর্জার চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে, কেউ গীর্জার চত্বরে এলেই সে যেন শিস দিয়ে তাকে সতর্ক করে দেয়। প্যারিস ফুল দিয়ে জুলিয়েটের কবর সাজাতে থাকে। এমন সময় সে ভৃত্যের শিস শুনতে পেল ও আড়ালে সরে গেল। সেখানে আসে রোমিও আর বালথাজার; বালথাজারের হাতে মশাল, শাবল আর গাঁইতি। বালথাজারের হাত থেকে শাবল আর গাঁইতিটা নিয়ে রোমিও তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলে সকালেই সে যে চিঠিটা তার বাবাকে দেয়। মশালটা বালথাজারের হাত থেকে নিয়ে রোমিও বলল, এখন আমি যা করব সে কাজে তুমি বাধা দিও না। আমি এই কবরের মধ্যে নেমে আমার প্রেয়সীর মুখ দেখব আর তার হাতের আঙুল থেকে মূল্যবান আংটিটা খুলে নেব আমার নিজের কাজে ব্যাবহারের জন্যে। তুমি এখন চলে যাও আবার এদিকে আসার চেষ্টা করলে তোমার শরীর টুকরো টুকরো করে গীর্জার চত্বরে ছড়িয়ে দেব। বালথাজার চলে যাবার পরে রোমিও জুলিয়েটের সমাধি-সৌধের কাছে এসে বলে, মৃত্যুর জঠর, তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদকে গ্রাস করছে। কবরের দরজা খোলার পরে সে আবার বলে, তোমার মুখে আজ আমি আরও খাবার ভরে দেব। আড়াল থেকে প্যারিন্স সব লক্ষ্য করে। সে ভাবে, সেই নির্বাসিত পাজি মন্টেগুটা এসেছে, সে আমার প্রেমিকার খুড়তুতো ভাইকে হত্যা করেছে, এখন এসেছে জুলিয়েটের মৃতদেহের কোন ক্ষতি সাধন করতে। সেচিৎকার করে বলে, তুই ধরা পড়ে গেছিস-মৃত্যুর পরেও কি বিদ্বেশের শেষ নেই। আমার সঙ্গে চল, তোকে মরতে হবে।

হ্যাঁ হবে, আর মরতেই তো আমি এসেছি, বললে রোমিও, কিন্তু তুমি এখান থেকে চলে যাও, তোমাকে হত্যা করতে বাধ্য করে আমার পাপের বোঝা বাড়িও না। আমি আজ নিজের থেকেও তোমাকে বেশী ভালবাসি, আমি আত্মঘাতি হতেই এখানে এসেছি। তুমি এখানে থেকো না, চলে যাও, বাঁচো আর পরে বোলো, কোন এক পাগল দয়া করে তোমায় পালাতে বলেছিল।

প্যারিস তবু রোমিওকে বাধা দিতে বদ্ধ পরিকর। দু'জনের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। প্যারিসের ভৃত্য যায় প্রহরীকে ডাকতে। ইতিমধ্যে রোমিওর তরবারির আঘাতে প্যারিস পড়ে যায়। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে সে রোমিওকে অনুরোধ করল যদি সত্যি তোমার মধ্যে দয়া থাকে তাহলে এই সমাধির তলায় জুলিয়েটের পাশে আমাকে শুইয়ে দিও। রোমিও বলে, তাই হবে। যতদূর মনে হচ্ছে আমি শুনেছিলাম তোমার সঙ্গে জুলিয়েটের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমি তোমাকে এই সমাধিতে সমাধিস্থ করব। সমাধি। না, সমাধি কেন বলব? এ তো এক বাতিঘর। জুলিয়েট এখানে শুয়ে আছে আর তার সৌন্দর্যের আলোয় সমস্ত কুঠুরী আলোকিত। আমার প্রেয়সী, মৃত্যু তোমার জীবনের সমস্ত মধু পান করে নিয়েছে তবু তোমার সৌন্দর্যকে স্নান করতে পারেনি। তুমি মৃত্যুতেও পরাজিত নও, সৌন্দর্য আজ তোমার রক্তিম ঠোঁট ও গালে লেগে রয়েছে। মৃত্যুর বিবর্ণ পতাকা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। টাইবল্টের কবরের দিকে তাকিয়ে রোমিও বলে, টাইবল্ট, তুমি রক্তাক্ত শরীরে শুয়ে আছ-তুমি আমায় ক্ষমা কোরো। জুলিয়েট, তুমি এখনও কেন এত সুন্দর? মৃত্যুও কি তোমাকে প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে? সেই আশঙ্কাতেই আমি তোমার সঙ্গে থাকব, এই অন্ধকারের প্রাসাদ ছেড়ে কোথাও যাব না। এটাই হবে আমার চিরবিশ্রামের জায়গা। এখানে থেকেই আমি এই পৃথিবীর অবসাদ আর যন্ত্রণা উপশম ঘটাবো। শেষ বারের মতো আমি তোমার দিকে তাকালাম, জুলিয়েট, শেষ বারের মতো আমার আলিঙ্গন গ্রহণ করো আর তোমার ওই ঠোঁট যা দিয়ে তুমি জীবনবায়ু গ্রহণ করেছ তা আমার শেষ চুম্বন গ্রহণ করুক। ওঝার কাছ থেকে আনা বিষ পান করে রোমিও, তার দ্রুত মৃত্যু হয়।

সমাধি-কুঠুরীতে এলেন ফাদার লরেন্স ও বালথাজার। সমাধির ভেতরে আবিষ্কৃত হল রোমিও ও প্যারিসের মৃতদেহ। এমন সময় ঘুম ভাঙ্গল জুলিয়েটের। চোখ মেলেই জুলিয়েট ফাদারকে দেখে জিজ্ঞেস করে, ফাদার, আমার স্বামী কোথায়? আমার মনে পড়ছে, যেখানে আমার থাকার কথা সেখানেই আছি কিন্তু রোমিও কোথায়?

ফাদার উত্তর দিলেন, জুলিয়েট, এক অস্বাভাবিক ঘুম থেকে তুমি জেগে উঠেছ কিন্তু আমরা যা ভেবেছিলাম তা হলো না, তোমার স্বামী তোমার বুকে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, প্যারিসও তাই তুমি আমার সঙ্গে এসো, আমি তোমায় সন্ন্যাসিনীদের হাতে তুলে দিই। প্রশ্ন কোরো না কারণ প্রহরীরা আসছে। চলো জুলিয়েট আর এখানে থাকা আমাদের পক্ষে নিরাপদ হবে না। জুলিয়েট দৃঢ় স্বরে বলল, আপনি যান আমি যাব না। ফাদার চলে গেলেন। জুলিয়েট দেখল তার স্বামীর হাতের মুঠোয় একটা পেয়ালা। সে বলে, বিষ! সবটাই তুমি পান করেছ, এক ফোঁটাও আমার জন্যে রাখলে না? আমি তোমার ঠোঁট চুম্বন করব হয়ত সেখানে লেগে থাকা কিছু বিষ আমারও মৃত্যু ডেকে আনবে। মৃত রোমিওকে চুম্বন করে জুলিয়েট, তারপর বলে, রোমিও তোমার ঠোঁট আজও কি উষ্ণ। বাইরে থেকে লোকজনের আওয়াজ শোনা যায়। তাহলে আমার আর বেশীক্ষণ বেঁচে থাকা চলবে না-রোমিওর কোমরের ছুরিটা খুলে নিজের বুকে বসিয়ে দেয় জুলিয়েট এবং সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হল।

প্রহরীরা আসে। সমাধিতলে বীভৎস দৃশ্য দেখে তারা ক্যাপিউলেট ও মন্টেগুদের ডাকতে পাঠায়। দু'জন প্রহরী বালথাজার ও ফাদার লরেন্সকে ধরে নিয়ে আসে। অনুচরদের সঙ্গে করে ভেরোনার রাজাও এসে পৌছলেন। এসে পৌঁছলেন ক্যাপিউলেট ও লেডী ক্যাপিউলেট।

ক্যাপিউলেট বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, এত চেঁচামেচি কিসের?

রাস্তায় লোকেরা কখনও রোমিও কখনও জুলিয়েট কখন প্যারিসের নাম ধরে কি সব বলাবলি করছে, তারপর ছুটে আসছে সমাধিস্থলের দিকে। কি হয়েছে? উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন লেডী ক্যাপিউলেট। রাজাও বলেন, সাংঘাতিক কিছু হয়েছে মনে হচ্ছে। জনৈক প্রহরী জানায়, জুলিয়েটের সমাধি তলে রোমিও ও প্যারিসের মৃতদেহ পড়ে আছে, জুলিয়েটের মৃতদেহ তো ছিলই।

আমাদের দেখতে হবে কি করে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটল। চিন্তিত মুখে রাজা বললেন।

প্রহরী জানায়, আমরা দুজনকে পেয়েছি একজন ফাদার লরেন্স অন্যজান রোমিওর ভৃত্য। তাদের হাতে মৃতব্যক্তিদের কবর খোঁড়ার যন্ত্রাদি রয়েছে। ক্যাপিউলেট হঠ্যৎ চেঁচিয়ে উঠে বললেন, কি সর্বনাশ দেখ আমাদের মেয়ের শরীরে রক্তপাত হচ্ছে! দেখ ওর শরীরে একটা ছোরা বিঁধে আছে আর রোমিওর কোমরে ছোরার খাপটা শূন্য। লেডী ক্যাপিউলেট বললেন, কী ভয়ঙ্কর! এ দৃশ্য দেখাও যেন বিভীষিকা! এই সময় মন্টেগু এসে পৌঁছলেন। রাজা তাকে বললেন, আসুন মন্টেগু এত ভোরে এখানে এসে আপনাকে আপনার পুত্র ও উত্তরাধিকারীকে মৃত দেখতে হবে।

মন্টেগু বিলাপ করে ওঠেন, হায়, এ আমার কি হলো! ছেলের নির্বাসন সইতে না পেরে আমার স্ত্রী আজ রাতে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। ভাগ্যের ষড়যন্ত্র আর আমায় কত সইতে হবে?

তাকাও, তোমার মৃত ছেলের মুখ তোমায় দেখতে হবে, রাজা মন্টেগুকে উদ্দেশ্য করে বললেন। কিন্তু মন্টেগু কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এ কী নিয়ম যে বাবাকে তার মৃত ছেলেকে দেখার জন্যে বাধ্য করা হচ্ছে।

কিছুক্ষণের জন্যে মুখ বন্ধ করে রাখুন সন্টেগুকে মৃদু ধমক দেন রাজা, আমরা আগে জানি কিভাবে এই ভয়ানক কাণ্ডটা হলো, তারপর আমরা আপনার দুঃখের ভাগীদার হবো। তিনি প্রহরীদের নির্দেশ দিলেন সন্দেহভাজনদের সামনে আনতে।

ফাদার লরেন্স এগিয়ে এসে বললেন, স্থান-কালের পরিপ্রেক্ষিতে আমিই সবচেয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি। আর আজ আমি আপনাদের সামনে দোষ স্বীকার করছি ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

রাজা ফাদার লরেন্সকে নির্দেশ দিলেন কি ঘটেছে জানাতে।

যা ঘটেছে আমি সংক্ষেপে বলছি, ঘটনার বিবরণ দিতে শুরু করলেন ফাদার, রোমিও জুলিয়েটের স্বামী। আমিই তাদের বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু যেদিন তাদের এই গোপন বিয়ে হয় সেই দিনই টাইবল্টের হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ও রোমিওকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়। টাইবল্টের জন্যে নয়, রোমিওর জন্যেই জুলিয়েট কাতর হয়ে পড়ে। ক্যাপিউলেট তার দুঃখ হ্রাস করার জন্যে প্যারিসের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এরপর জুলিয়েট এসে আমাকে বলে যদি তার দ্বিতীয় বিয়েকে বন্ধ করার উপায় আমি না বলতে পারি তাহলে সে মুহূর্তে আমার ঘরে আত্মহত্যা করবে। তখন আমি তাকে একটা ঘুমের ওষুধ দিই যার প্রতিক্রিয়ায় তাকে মৃত বলেই মনে হবে। ইতিমধ্যে আমি রোমিওকে খবর পাঠাই যাতে সে সেই রাতে সমাধি-গহ্বর থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ফাদার জন, যিনি আমার চিঠিটা নিয়ে যাচ্ছিলেন এক দুর্ঘটনাবশতঃ সেখানে পৌঁছতে পারেন না ও আমার লেখা চিঠি আমার কাছেই ফেরত আসে। জুলিয়েটের ঘুম ভাঙ্গার পূর্ব মুহূর্তে আমিও সমাধি গহ্বরে প্রবেশ করি। আমি চেয়েছিলাম রোমিওর কাছে না পাঠানো পর্যন্ত তাকে আমার ঘরে রাখতে। কিন্তু এখানে এসে আমি রোমিও ও প্যারিসের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি। জুলিয়েট জেগে ওঠে, আমি তাকে দুঃখ সহ্য করতে ও সমাধি থেকে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করি। এমন সময় লোকজন আসার শব্দ হয় আর সেও আমার সঙ্গে না বেরোতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে এবং মনে হচ্ছে সে আত্মঘাতী হয়। আমি যা জানি বললাম। তার বিয়ের ব্যাপারে নার্সও সাক্ষী আছে। এসব যদি আমার দোষের হয়ে থাকে তাহলে আইনের বিচারে যেন সময়ের কিছু আগেই এই বৃদ্ধ জীবনের অবসান হয়। আমরা আপনাকে সাধু প্রকৃতির মানুষ বলেই জানি। রোমিওর লোকটি কোথায়? সে কি বলে? জানতে চান রাজা।

বালথাজার বলে, জুলিয়েটের মৃত্যুর খবর আমি হুজুরকে দিয়েছিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ায় করে মান্ডুয়া থেকে এই সমাধি-সৌধে চলে আসেন। তারপর তাঁর বাবাকে দেবার জন্যে একটা চিঠি আমার হাতে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। সৌধের কুঠুরীতে যাবার সময় আমাকে ভয় দেখালেন যে আমি যদি সেখান থেকে চলে না যাই তাহলে আমাকে খুন করে ফেলবেন। রাজা রোমিওর চিঠিটা চেয়ে নিলেন, তারপর প্যারিসের ভৃত্যকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার প্রভু এখানে এলেন কেন? ভৃত্য বলে, তিনি ওই মহিলার সমাধিতে ফুল ছড়াতে এসেছিলেন এবং আমাকে বলেছিলেন দূরে সরে দাঁড়াতে। আমি তাই করেছিলাম। হঠাৎ নজরে পড়ল আলো হাতে একজন ওই কবরের মুখ খুলতে আসছে। তারপর গিয়ে দেখি প্রভুর সঙ্গে তার লড়াই হচ্ছে। তখন আমি প্রহরী খুঁজতে যাই। রোমিওর চিঠি পড়ে রাজা বললেন, চিঠি থেকে সব কিছুই বোঝা যাচ্ছে। রোমিও বলেছে যে একজন দরিদ্র ওঝার কাছ থেকে সে বিষ কিনেছিল এবং সে জুলিয়েটের কবরে মরতেই এসেছিল। ক্যাপিউলেট, মন্টেগু, আপনারা দেখুন। আপনাদের পারিবারিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ কি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে, আর আপনাদের জন্যে আমিও আমার এক আত্মীয়কে হারালাম।

ক্যাপিউলেট মন্টেণ্ডর দিকে এগিয়ে এলেন। বললেন, ভাই তোমার হাতটা দাও, আমার মেয়ের জন্যে।

মন্টেগুও আবেগের সঙ্গে বললেন, কিন্তু আমি তোমায় আরও কিছু দেব আমি সোনা দিয়ে জুলিয়েটের প্রতিকৃতি তৈরী করাব। তার চেয়ে মূল্যবান আর কোন প্রতিকৃতি ভেরোনায় নির্মিত হবে না এবং ওই মূর্তির জন্যে ভেরোনায় খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। ক্যাপিউলেট বললেন, তার পাশে আমিও সোনার রোমিও তৈরী করে দেব।

সকাল হয়ে আসছে। রাজা বললেন, দুঃখের মধ্যে দিয়ে শান্তি নেমে এল। আজ আকাশে মেঘ জমে আছে, হয়তো বা দুঃখের জন্যোই সূর্য আজ তার মুখ দেখাবে না। আজকের এই দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে, কাউকে কাউকে ক্ষমা করা হবে, কেউ শাস্তি পাবে কারণ রোমিও জুলিয়েটের মতো এতো বেদনাদায়ক ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।  (সমাপ্ত)


শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, উপন্যাসের শেষে এসে আমি তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সম্পূর্ণ উপন্যাসটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। প্রিয় পাঠক রোমিও জুলিয়েটের প্রেমের কাহিনী উপন্যাসটি আপনারা যারা আগে পড়েছেন কিংবা আজকে নতুন করে পড়েছেন আপনাদের সকলকে জানাচ্ছি যে উপন্যাসটি পরে আপনাদের কেমন লেগেছে অনুগ্রহপূর্বক কমেন্ট বক্সে জানাবেন। 


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url