রোমিও জুলিয়েট | Romeo Juliet
প্যারিস এসেছে তার বিয়ের ব্যাপারে ফাদার লরেন্সের সঙ্গে কথা বলতে। বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে শুনে তিনি চিন্তিতভাবে বললেন, বৃহস্পতিবার! বড় তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না!
কি করব? আমার শ্বশুরমশায় ক্যাপিউলেটের ইচ্ছে, বলে প্যারিস, তিনি যখন বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে চাইছেন আমি আর দেরী করি কেন? ফাদার বললেন, কিন্তু তুমি বলছিলে যে তুমি এখনও মেয়ের মনই জানতে পারোনি সেক্ষেত্রে আমার ব্যাপারটা ভাল লাগছে না।
টাইবল্টের মৃত্যুতে সে অসম্ভব কান্নাকাটি করছে, আমি আমার ভালবাসার বিষয়ে তাকে কোন কথাই বলতে পারি নি। শোকের বাড়িতে বলে কিছু লাভও ছিল না, প্যারিস স্বীকার করে, তারপর বলে কিন্তু ওর শোকের বাড়াবাড়িটা ওর বাবা ক্যাপিউলেট পছন্দ করছেন না। সেইজন্যে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে চান যাতে সাংসারিক চাপে ও ব্যক্তিগত দুঃখটা ভুলে থাকতে পারে। বিয়েটা যে কেন পেছানোর দরকার সেটা যদি আমার জানা না থাকতো... বিড় বিড় করে বলে ফাদার লরেন্স, প্যারিস তা শুনতে পায় না।
![]() |
রোমিও জুলিয়েট বাংলা অনুবাদ |
এমন সময় ফাদার দেখলেন, জুলিয়েট তাঁর কাছেই আসছে। জুলিয়েটকে দেখে প্যারিসও খুশিতে ডগমগ, তাকে স্ত্রী বলে সম্বোধনই করে ফেললে। মৃদু ভাসিনী জুলিয়েট তার প্রতিবাদ করে বললে, এখনও তো আমাদের বিয়ে হয়নি...। প্যারিস সে প্রতিবাদ মেনে নিয়েই বলে, আগামী বৃহস্পতিবাবেই তো তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী হতে চলেছ। তারপরে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি ফাদারের কাছে কোন স্বীকারোক্তি করতে এসেছে?
তা বলতে গেলে আমায় আপনার কাছেই স্বীকোরোক্তি করতে হবে, রহস্য করে বলে জুলিয়েট। প্যারিসও কিছুটা হালকাভাবেই বলে, যেন ওঁর কাছে এ কথা বোলো না যে তুমি আমায় ভালবাসো না।
আমি আপনার কাছে এই স্বীকারোক্তি করব যে আমি তাকে ভালবাসি, সত্যি কথাটাই ঘুরিয়ে বলে জুলিয়েট কিন্তু প্যারিস তা ধরতে পারে না। বলে, ঠিকই, আমি নিশ্চিত যে তুমি আমায় ভালবাসো। তবে কেঁদে কেঁদে তোমার মুখ একদম কালি হয়ে গেছে- এটা কিন্তু তুমি ভাল করছ না। এখন থেকে তোমার মুখখানা আমারও, অথচ ওই সুন্দর মুখখানা তুমি খারাপ করে তুলছ।
এটা অবশ্য ঠিকই যে আমার মুখ এখন আমার নয়... এইটুকু বলেই জুলিয়েট ফাদার লরেন্সের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে বলে, ফাদার, আপনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন? আমি কি তাহলে আপনার সন্ধ্যেবেলার প্রার্থনা-সভায় আসব?
ফাদার লরেন্স বেরিয়ে এলেন, বললেন, না যা বলার এখনই বলো। তারপর প্যারিসের দিকে ফিরে বললেন, আমরা নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলতে চাই। প্যারিস হাসি মুখে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়, আপনাদের কথাবার্তার সময় থাকলে ঈশ্বর আমায় শাস্তি দেবেন। তারপর জুলিয়েটের দিকে তাকিয়ে প্যারিস বললে, জুলিয়েট, তাহলে আগামী বৃহস্পতিবার ভোরবেলা আমি তোমার ঘুম ভাঙ্গাব। আপাততঃ বিদায়।
প্যারিস চলে গেলে জুলিয়েট ফাদারকে প্রশ্ন করে, ফাদার; এখন আমি কি করি?
ফাদার বললেন, আমি তো সবই জানি মা আর আমিও তার জন্যে কম কষ্ট পাচ্ছি না। আমি জানি যে সামনের বৃহস্পতিবার কাউন্টির মালিক প্যারিসের সঙ্গে তোমার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে আর সেই তারিখ কোন ভাবে পেছানো যাবে না।
ফাদার, এখন আমায় বলুন কি করে এই বিয়ে আটকানো যাবে? যদি কোন উপায় বলতে না পারেন তাহলে আমার সামনে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা থাকবে না। ঈশ্বর আপনার মাধ্যমে আমার ও রোমিওর দুই হাতের মিলন ঘটিয়েছেন। এখন আমি যদি অন্য কারো পাণিগ্রহণ করি তাহলে দ'জনের পক্ষেই তা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠবে। সুতরাং আপনি আপনার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার সাহায্যে আমায় পরামর্শ দিন আর আপনি আমার সম্মান রক্ষায় অপারগ হলে দেখবেন, আমার হাতের এই ছুরিটা সমস্ত সমস্যার মীমাংসা করে দেবে। আপনি কোন উপায় না বললে মৃত্যুই আমার কাম্য, কথা শেষ করে জুলিয়েট।
ফাদার লরেন্স বললেন, ধৈর্য ধরো মা, আমি উপায়ের কথা ভেবেছি কিন্তু একটা চরম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হবে। যদি প্যারিসকে বিয়ে করলে তুমি মরতেই প্রস্তুত থাকো তাহলে তুমি পন্থাটা নিয়ে দেখতে পারো। তোমার সাহস থাকলে আমি উপায় বলতে পারি।
জুলিয়েট বলে, প্যারিসকে বিয়ে করার চাইতে আমি বরং দুর্গ-প্রাকার হতে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে পারি, দস্যু-সমাকীর্ণ পথে চলতে পারি, সাপেদের সঙ্গে কাটাতে পারি। তার চেয়ে বরং আমাকে গর্জনশীল ভাল্লুকদের মাঝখানে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখুন, গীর্জার লাগোয়া যে ছোট ঘরে কবর থেকে পাওয়া মাথার খুলি আর হাড় রাখা থাকে সেখানে লুকিয়ে থাকতে বলুন কিংবা নতুন কোন কবরে মাটির নীচে মৃতদেহদের সঙ্গে লুকিয়ে থাকতে বলুন। যে সব কথা বললেই আগে আমার শরীর ভয়ে কেঁপে উঠত আজ আমি তা নির্ভয়ে এবং নির্দ্বিধায় তা করব।
ফাদার লরেন্স বললেন, শোন, বাড়ি যাও হাসিখুশি থাকবে আর প্যারিসের সঙ্গে বিয়েতে সম্মতি জানাবে। আগামী কাল বুধবার ঘরে একা শুয়ো; নার্সও যেন তোমার ঘরে না থাকে আর এই নাও এক শিশি মদিরা, বিছানায় শুয়ে এই মদিরাটুকু পান কোরো। খুব শিগগির তুমি চেতনা হারাবে। এমন কি তোমার নাড়ির গতিও বন্ধ হবে। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসবে এবং নিঃশ্বাস পড়বে না, তোমার ঠোঁঠ ও গালের রক্তিম আভাও নষ্ট হয়ে যাবে। মনে হবে তুমি মৃত আর এইভাবে তুমি থাকবে বেয়াল্লিশ ঘণ্টা। তারপর যখন চেতনা ফিরবে মনে হবে সুন্দর গভীর ঘুমের পর জেগে উঠেছ। বৃহস্পতিবার সকালে যখন তোমাকে সবাই জাগাতে আসবে তখন দেখবে তুমি মৃত। এখন আমাদের দেশের প্রথা অনুসারে তোমাকে সেরা পোশাকে সাজিয়ে নিয়ে যাবে সেই সমাধিস্থলে যেখানে তোমার পূর্বপুরুষ শায়িত রয়েছে। এর মধ্যে আমি রোমিওর কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি। সেই চিঠি পেয়ে রোমিও এলে তোমার ঘুম ভাঙ্গবে এবং সেই রাতেই রোমিও তোমাকে নিয়ে চলে যাবে মান্ডুয়া। এই ব্যবস্থা তোমাকে বর্তমান লজ্জার হাত থেকে বাঁচাবে। অবশ্য এতক্ষণে যদি তোমার কোন খেয়াল বা ভীতি মনের দৃঢ়তাকে নষ্ট না করে থাকে।
থামুন, আমাকে এসব বলে ভয় দেখাতে পারবেন না, বলে জুলিয়েট। ফাদার বললেন, ভাল কথা তাহলে এখন বাড়ি যাও ও যা বললাম করো। ইতিমধ্যে আমি একজন দ্রুতগামী অনুচরকে রোমিওর কাছে পাঠাচ্ছি। জুলিয়েট ফাদারের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
ফাদার লরেন্সের কাছ থেকে ফিরে জুলিয়েট বাবার কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চায়। ক্যাপিউলেট খুশি মনে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন। জুলিয়েট নার্সকে বলে, চলো আমার ঘরে গিয়ে সাজার জন্যে গয়নাগাটি ও পোশাক আশাক বার করো আর বাছাই করার ব্যাপারে সাহায্য করবে চলো। লেডী ক্যাপিউলেট মেয়েকে বললেন, সে তো বৃহস্পতিবার এখনও সময় আছে। ক্যাপিউলেট অবশ্য নার্সকে জুলিয়েটের সঙ্গে যেতে নির্দেশ দেন কারণ বুধবার তাকে গীর্জায় যেতে হবে। জুলিয়েট ও নার্স চলে গেলে লেডী ক্যাপিউলেট বললেন, আর তো সময় নেই-এর মধ্যে তৈরী হয়ে নিতে হবে। ক্যাপিউলেট স্ত্রীকে ভরসা দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে গিন্নী, আমি বলছি। জুলিয়েটের সঙ্গে যাও, ওর সাজার ব্যাপারে সাহায্য করো। আমি আজ আর শোবো না কেবল একটু বিছানায় গড়িয়ে নেব। আমি জীবনে অন্ততঃ এই একবার গৃহিণীর ভূমিকা গ্রহণ করব, কি বলো? হ্যাঁ, ভাল কথা, আমি নিজেই কাল একবার প্যারিসের কাছে যাব তাকে প্রস্তুত করতে। মেয়ের মতি পরিবর্তনের মেজাজটা হাল্কা লাগছে।
বুধবার রাতে জুলিয়েট তার পছন্দসই পোশাক বেছে নেয়, তারপর নার্সকে বলে, আজ আমি ঘরে একা থাকব। পাপ-মুক্তির জন্যে আমি আজ প্রার্থনা করব। লেডী ক্যাপিউলেট এসে মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, খুব ব্যস্ত দেখছি, সাহায্য করব নাকি? জুলিয়েট জবাব দেয়, না মা আমার প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আমি বার করে নিয়েছি। আজ রাত্রে আমায় একা থাকতে দাও। নার্স আজ তোমার সঙ্গে থাকুক তোমাকে সাহায্য করুক কারণ তুমি নিশ্চয় ব্যস্ত থাকবে। লেডী ক্যাপিউলেট নার্সকে নিয়ে চলে গেলেন। যাবার আগে জুলিয়েটকে বলে গেলেন সকাল সকাল শুয়ে পড়তে। জুলিয়েট ভাবে, আবার কবে তার মা বাবার সঙ্গে দেখা হবে তা ঈশ্বর জানেন! একটা ঠাণ্ডা স্রোত যেন তার শিরা-উপশিরার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তার জীবনের উত্তাপকে জমিয়ে দেয়। নার্সকে ডাকতে গিয়ে থেমে যায় জুলিয়েট, ভাবে এ আমি কি করছি! আমায় তো একাই কাজটা সারতে হবে! আচ্ছা যদি ওষুধটা ঠিক কাজ না করে! তাহলে তো কাল সকালেই আমাকে বিয়ে করতে হবে। না, না, তা সম্ভব নয়, ছুরিটা পাশে রাখে জুলিয়েট। জুলিয়েট আরও ভাবে যদি এমন হয় যে ফাদার লরেন্স আমার মৃত্যু ঘটানোর জন্যেই বিষ দিচ্ছেন তা না হলে এই বিয়েতে তাঁর সম্মান নষ্ট হতো কারণ তিনি নিজের হাতে রোমিওর সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছিলেন। সে ভয় আছে তবু তা সম্ভবতঃ নয় কারণ ফাদার লরেন্স একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিগণিত। আচ্ছা আমাকে কবরের মধ্যে রাখার সময় রোমিও আসার আগেই যদি আমি জেগে উঠি। সে তো একটা ভয়ের ব্যাপার হবে! যদি আমি কবরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে মারা যাই। আর যদি বেঁচেও থাকি তাহলেও পূর্বপুরুষদের কঙ্কালের পাশে শুয়ে থাকা কি ভয়ঙ্কর! সেখানে টাইবল্টের মৃতদেহ আজও তরতাজা, হয়তো সেখানে তার প্রেতাত্মা রোমিওর খোঁজ করছে! এমন হাজারো ভাবনায় জর্জরিত জুলিয়েট ফাদারের দেওয়া মদিরা পান করে তারপর ঢলে পড়ে ঘুমের কোলে।
বৃহস্পতিবার রাত তখন শেষ হয়নি। লেডী ক্যাপিউলেট নার্সকে সঙ্গে নিয়ে রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত। ক্যাপিউলেট এসে তাড়া দেন, তাড়াতাড়ি করো মোরগের ডাক শোনা গেছে, তিনটে বাজে। মাংসটা ভাল করে তৈরী করো, খরচের কথা ভেবো না। নার্স ক্যাপিউলেটকে বলে, আপনি একটুখানি গড়িয়ে নিন তা না হলে সকালে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ক্যাপিউলেট খোস মেজাজেই বললেন, আরে না, না, বিশ্বাস করো এর চেয়ে ছোট কারণেও আমি অনেক রাত জেগেছি। কখনও অসুস্থ হইনি।
হ্যাঁ বয়েসকালে নারী-শিকারী হিসেবে তোমার পরিচিতি ছিল সে তো জানি, সুযোগ পেয়ে স্বামীর সঙ্গে রসিকতা করতে ছাড়েন না লেডী ক্যাপিউলেট। এরই ফাঁকে ভৃত্যরা এসে পড়ে; তাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাপিউলেট বাড়ি। দূরে বাজনার শব্দ শোনা যায়। ক্যাপিউলেট ব্যস্ত হয়ে বলেন, বোধহয় কাউন্টি আসছে, নার্স, যাও, জুলিয়েটকে ঘুম থেকে তোলো, তৈরী করে নাও। আমি ততক্ষণ প্যারিসের সঙ্গে গল্প করছি... তাড়াতাড়ি করো..... তাড়াতাড়ি করো।
নার্স মিষ্টি কথায় জুলিয়েটের ঘুম ভাঙ্গাতে চেষ্টা করে। কোন ফল হচ্ছে না দেখে জোরে জোরে ডাকতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আর্তনাদ করে ওঠে, হায় কপাল! জুলিয়েট মারা গেছে। লেডী ক্যাপিউলেট ছুটে এলেন। তিনি চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন, জুলিয়েট, একবার চোখ মেলে তাকা মা, নয়তো আমিও তোর সঙ্গে মরব। ক্যাপিউলেট এলেন, নার্স ও লেডী ক্যাপিউলেট একসঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন ও মারা গেছে, ও মৃত। ক্যাপিউলেট ভাল করে দেখলেন মেয়েকে, তারপর বললেন, হ্যাঁ ওর সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, ও আর জীবিত নেই। যেমন করে অসময়ের কুয়াশা বাগানের সুন্দরতম ফুলটিকে ঢেকে ফেলে তেমনি করে মৃত্যু জুলিয়েটকে আবৃত করেছে। কী দুঃখের দিন, কেঁদে ওঠেন লেডী ক্যাপিউলেট ও নার্স, শোকে আপ্লুত হন ক্যাপিউলেটও।
ফাদার লরেন্স প্যারিস ও বাদকরা এলেন। ফাদার জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার, গীর্জায় যাওয়ার জন্যে কনে তৈরী তো? বিষন্ন ভাবে ক্যাপিউলেট বললেন, হ্যাঁ তৈরী তবে ফিরে আসার জন্য নয়। প্যারিসকে উদ্দেশ্য করে ক্যাপিউলেট বললেন, পুত্র, বিয়ের আগের দিনই তোমার ভাবী স্ত্রী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। ওই দেখ ফুলের মতোই ও শুয়ে আছে। এখন মৃত্যুই আমার জামাই, মৃত্যু আমার উত্তরাধিকারী। আমার কন্যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তার। আমি মরব জীবন, সম্পদ, যা, কিছু তা আমি মৃত্যুর পায়ে সমর্পণ করব, হাহাকার করেন ক্যাপিউলেট। প্যারিসও দুঃখের সঙ্গে বললে, আমাদের বিয়েটা যদি আগে হতো তাহলে হয়তো এই দৃশ্য দেখতে হতো না। কী ভয়ঙ্কর দুঃখের দিন, এমন বেদনাদায়ক দিন আর কখনও আসেনি। এটাই সান্ত্বনা যে তার মৃত্যু আমা দেখতে হয়নি। একই ভাবে নার্সও বিলাপ করে চলে, বিলাপ করেন ক্যাপিউলেট। ফার্দার লরেন্স, বললেন, তোমারা শান্ত হও। সবাই কান্নাকাটি করলে জীবন ফিরে আসবে না। সে আজ স্বর্গে গেছে। যেখানে একদিন সবাইকে যেতে হবে। তোমরা তাকে এত ভালবাসতে যে পাগল হয়ে গেছ। চোখের জল মোছ ও প্রথাগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে প্রস্তুত হও। আমায় চোখে
ক্যাপিউলেট তবু সান্ত্বনা পান না, বলেন, উৎসব আজ শোক-উৎসবে পরিণত হলো; বাজনার সুর শোক-গীতিতে রূপান্তরিত হলো, বিয়ের আনন্দ দুঃখের অনুষ্ঠানে পরিবর্তিত হলো। যে ফুল দিয়ে কনে সাজানোর কথা ছিল সে ফুল এখন দেওয়া হবে তার সমাধিতে-সব কিছু কেমন বদলে গেল।
ফাদার লরেন্স সবাইকে বললেন, আপনারা সবাই ভেতরে যান ও জুলিয়েটের শেষ যাত্রার জন্যে প্রস্তুত হন। নার্স ও বাজনদাররা ছাড়া সবাই ভেতরে যায়। জনৈক বাজনদার নার্সকে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি তাহলে বাজনা গুটিয়ে বিদায় নেব। নার্স উত্তর দেয়, হ্যাঁ, তোমরা তাই করো। বুঝতেই তো পারছ, আজ আমাদের দুঃখের দিন। বাজনদাররা ক্ষুণ্ণ হয়ে পাততাড়ি গুটোয়।
নোট: প্রিয় পাঠক, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের লেখা রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট অসাধারণ একটি বাংলা ভাষায় অনুবাদকৃত প্রেমের নাটকের ৪র্থ পর্ব আজ শেষ করলাম। গল্প প্রেমিকদের সারা পেলে পরবর্তীতে আবার ৫ম পর্ব খুব শীঘ্রই পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ।