দি টেমিং অফ দি শ্রু | The Taming of the Shrew
ইতালী দেশের একটি শহরের নাম পদুয়া। সেখানে বাপ্তিস্তা মিনোলা নামে এক ধনী ভদ্রলোক বাস করতেন। তাঁর ছিল দু'টি মেয়ে ক্যাথারিন আর বিয়াংকা। ছোট মেয়ে বিয়াংকার স্বভাবটা খুব মিষ্টি। সে দেখতেও খুব সুন্দরী। বহু তরুণ তাকে বিয়ে করতে চায়। মিষ্টি মেয়ে বিয়াংকার কবে বিয়ে হয়ে যেত যদি না....
![]() |
দি টেমিং অফ দি শ্রু | The Taming of the Shrew |
এ হেন ভয়ঙ্করী মেয়ের পাত্র জুটবে কি করে? ক্যাথারিনের বিয়ে হবার কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না আর সে জন্য মিষ্টি মেয়ে বিয়াংকার বিয়েটাও আটকে রয়েছে।
গ্রেমিও আর হর্তেনসিও হল পদুয়ার দু'জন ধনী যুবক। এরা দু'জনেই বিয়ে করতে চায় বিয়াংকাকে। সে জন্য দু'জনের মধ্যে সম্পর্কটাও খুব ভাল নয়। কিন্তু বাপ্তিস্তার সেই ধনুক ভাঙা পণ। আগে তিনি বড় মেয়ের বিয়ে দেবেন, তারপর ভাববেন ছোট মেয়ের পাত্রের কথা।
একদিন রাস্তায় গ্রেমিও আর হর্তেনসিওর সঙ্গে বাপ্তিস্তার দেখা হয়ে গেল। তিনি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ওরা দু'জনেই যে বিয়াংকাকে বিয়ে করতে চায়, তাও বাপ্তিস্তা জানতেন। তিনি ওদের বললেন, দেখ, তোমাদের মধ্যে কেউ আমার বড় মেয়ে ক্যাথারিনকে বিয়ে কর না, সেও তো সুন্ধরী। আর তা যদি না করতে চাও তবে তার জন্য একটি ভাল পাত্রের সন্ধান কর ওর বিয়ে হয়ে গেলেই আমি বিয়াংকার বিয়ে দিয়ে দেব। মোটেই দেরী করব না।
দু' দু'জন ধনী যুবক বিয়াংকাকে বিয়ে করতে চায়। অথচ সেই বড় বোন তার দিকে কেউ ফিরেও চাইছে না। এতে ক্যাথারিন খুব রেগে গেল। সেও ওদের দু'জনকে কিছু কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দিল।
বিয়াংকা বলল, আমি এখন বিয়ে করব না। বাড়ীতে বসে লেখাপড়া করব। গান বাজনা শিখব।
বাপ্তিস্তা বললেন, এতো খুব ভাল কথা।
তারপর গ্রেমিও আর হর্তেনসিওর দিকে তাকিয়ে বললেন, শোনো, আমি বিয়াংকার জন্য একজন ভাল শিক্ষক রাখতে চাই। সে রকম কোন শিক্ষকের সঙ্গে তোমাদের পরিচয় থাকলে তাঁকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে পার।
বাপ্তিস্তার কাছ থেকে এ সব কথা গ্রেমিও আর হর্তেনসিও বুঝতে পারল যে এখনকার মত বিয়াংকাকে পাবার আশা দুরাশা। সুতরাং দু'জনে ঠিক করল যে আপাততঃ তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি মুলতুবি রাখবে। ক্যাথারিনকে বিয়ে করতে পারে এমন একজন পাত্র খুঁজবার জন্য দু'জনেই চেষ্টা করবে। তারপর ক্যাথারিনের বিয়ে হয়ে গেলে বিয়াংকাকে পাবার জন্য দু'জনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে।
এই সময় লুসেনসিও নামে এক ধনী যুবক তার ভৃত্য ত্রানিওকে নিয়ে এসে পড়ল সেখানে। লুসেনসিও পদুয়ার লোক নয়। তার বাড়ী পিসা শহরে। সেখানে তার বাবা ভিনসেনসিও একজন ধনী আর মানী বণিক। তিনি অগাধ ধনসম্পত্তির মালিক। লুসেনসিও হল বাবার একমাত্র ছেলে। আর ত্রানিও কেবল তার ভৃত্যই নয়-বন্ধুও বটে। সেও ভদ্রসমাজে চলাফেরা করবার মত আচার-আচরণ মোটামুটি জানে। ভিনসেনসিও ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু কাজের ভার দিয়ে ছেলেকে পদুয়াতে পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে দিয়েছিলেন ত্রানিওকে। তিনি ধনী মানুষ। পদুয়া শহরেও তার কাজ কারবার রয়েছে।
এদিকে বিয়াংকাকে দেখে যুবক লুসেনসিও তো একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে ভাবল, "বিয়ে যদি করতে হয় তবে এমন মেয়েকেই করব।"
ত্রানিওকে নিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে লুসেনসিও আর বাপ্তিস্তা, গ্রেমিও আর হর্তেনসিও-র কথাবার্তা শুনতে লাগল।
ওরা সবাই চলে যাবার পর ত্রানিও-র সঙ্গে। পরামর্শ করে লুসেনসিও একটা ফন্দী বের করল, ঠিক হল লুসেনসিও গৃহশিক্ষক সেজে বাপ্তিস্তার বাড়ীতে ঢুকবার চেষ্টা করবে। তিনি তো বিয়াংকার জন্য গৃহ শিক্ষক রাখবেন বলেই ঠিক করেছেন। লুসেনসিও ছদ্মবেশে বামিচ্ অ্যাডো অ্যাবাউট নাথিং ১০২১০১ বাপ্তিস্তার বাড়ীতে গিয়ে তাকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করবার জন্য বাপ্তিস্তাকে অনুরোধ করবে। একবার যদি শিক্ষক হিসেবে সে ঢুকতে পারে তবে বিয়াংকার মন পাবার জন্য সে চেষ্টার ত্রুটি করবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হল লুসেনসিও যদি গৃহশিক্ষকের ভূমিকায় নেমে পড়ে তবে পদুয়ায় তার বাবার কারবার দেখবে কে? না, সে জন্যও চিন্তা নেই। ত্রানিও তার পোশাক পরে লুসেনসিও সাজবে। সেই ব্যবসা দেখাশুনা করবে। বাপ্তিস্তার সঙ্গে দেখা করে লুসেনসিও বেশী ব্রানিও বিয়াংকার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবটাও করে রাখবে। শিক্ষক-বেশী লুসেনসিও আর লুসেনসিও বেশী ব্রানিও-এদের দু'জনের চেষ্টার ফলে বিয়াংকার সঙ্গে বিয়েটা হয়ত হয়েই যাবে।
ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল। ত্রানিও চলল কারবার দেখাশুনা করতে আর লুসেনসিও ক্যাম্বিও নাম নিয়ে বাপ্তিস্তার অন্দর মহলে ঢোকবার চেষ্টা করতে লাগল। সে বিয়াংকাকে সাহিত্য পড়াবে।
নিজের বাড়ির সামনে আসতেই হর্তেনসিও দেখল সদর দরজার সামনে খুব হৈ হট্টোগোল হচ্ছে। এক ভদ্রলোক তার চাকরকে বেধড়ক মারছেন। ব্যাপার কি? কাছে এগিয়ে গিয়ে হর্তেনসিও দেখল, ভদ্রলোক আর কেউই নন, তিনি হলেন তারই পুরানো বন্ধু পেক্রশিও।
পেক্রশিওর বাড়ি পদুয়া শহরে নয়। তার বাড়ী হল ভেরোনা শহরে। বেচারা চাকরটাকে মনিবের হাত থেকে উদ্ধার করে হর্তেনসিও তাদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে এল।
বন্ধুর রাগ পড়লে হর্তেনসিও তার খবরাখবর নিতে শুরু করল। সে জিজ্ঞেস করল, বন্ধু পেক্রশিও, এবার বল ভেরোনা থেকে কোন্ বাতাস তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে এল পদুয়া শহরে?
পেক্রশিও উত্তর দিল, যে বাতাস যুবকদের উড়িয়ে নিয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা ভাগ্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে দূর দুর্গম অজানা দেশের দিকে।
-বাড়ীর সবাই ভাল আছেন তো?
-সবাই আর কে? থাকবার মধ্যে ছিলেন তো শুধু বাবা। অল্পদিন হল আমার বাবা আন্তোনিও মারা গিয়েছেন। আমার জন্য রেখে গিয়েছেন বিশাল প্রাসাদ, বিরাট বাগান, অনেক টাকাকড়ি, প্রচুর জমিজমা, একগাদা দাস দাসী অনেক গাড়িঘোড়া, আমার কোন কিছুরই অভাব নেই। আপাততঃ দেশ ভ্রমণ করতে বেরিয়েছি, তারপর বিয়ে করে সংসারী হবার ইচ্ছে আছে।।
"কিন্তু তুমি ভাই যে রকম মেজাজী তাতে একটি মেজাজী মেয়ের সঙ্গেই তোমার বিয়ে দেওয়া দরকার। সে রকম বউই তোমাকে সামলে রাখতে পারবে।
পেক্রশিওর মুখে বুঝি রাগের ছাপ ফুটে উঠছিল। হর্তেনসিও হেসে বলল, আরে মেয়ে ঝগড়াটে হলে কি হবে বাপের অঢেল টাকা আছে। যাক্কে, তোমার যখন পছন্দ নয়, তখন ওরকম মেয়ে বিয়ে নাই বা করলে। তুমি আমার বাল্যবন্ধু, তোমাকে অমন মেয়ে বিয়ে করবার কথা আমিও বলতে পারিনা।
হর্তেনসিও জানে টাকার উপর পেক্রুশিওর দারুণ লোভ সুতরাং কথাটা ছুঁইয়েই সে থেমে গেল, আসলে সে পেক্রুশিওর কৌতূহলটাকে একটু বাড়িয়ে দিতে চায়।
তা পেক্রশিওর কৌতূহলটা সত্যি বেড়ে গেল। সে হর্তেনসিওকে বলল, তুমি যদি সেরকম কোন ধনবতী পাত্রী জানো তাহলে বলো তার কথা। আমি একটি ধনবতী স্ত্রী চাই, সে স্ত্রী যতবড় খাণ্ডারণীই হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। পাত্রী বুড়ী হলেও আমি আপত্তি করব না। কিন্তু তার টাকা থাকতে হবে-প্রচুর টাকা। টাকাওয়ালা পাত্রী যদি আদ্রিয়াতিক সাগরের মতও উত্তাল হয় তাহলেও আমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসব না।
হর্তেনসিও বলল, বহুত আচ্ছা।
পেক্রশিওর চাকরটি বলল, আমার প্রভু বোঝেন কেবল টাকার কথা, ওঁকে প্রচুর টাকা দিন,
দেখবেন তাহলে একটা পুঁচকে বাচ্চা মেয়ে, কবরের দিকে পা বাড়ান বুড়ী-এমনকি একটা কাঠের পুতুলের সঙ্গে বিয়ে দিলেও, উনি একটু আপত্তি করবেন না।
পেত্রশিও চাকরকে ধমক দিয়ে বলল, এই তুই থামতো। তারপর হর্তেনসিওর দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞেস করল, কিহে, কোন ধনবতী পাত্রী তোমার সন্ধানে আছে নাকি?
-তাতো আছে। কিন্তু সে মেয়ে সত্যি সত্যিই খুব মুখরা আর প্রচণ্ড ঝগড়াটে।
-দেখতে কেমন?
-দেখতে কিন্তু সত্যি সত্যিই সুন্দরী। আর বয়সটাও কম। অবশ্য আমাকে সোনার তাল দিলেও আমি ওরকম মেয়ে বিয়ে করব না।
পেক্রশিও বলল, আমি করব। সোনার মর্ম তুমি বোধ হয় জান না। এখন বল, মেয়েটির বাবার
নাম কি?
-বাবার নাম বাপ্তিস্তা মিনোলা।
-মেয়েটির নাম?
-ক্যাথারিন মিনোলা।
-বন্ধু হর্তেনসিও, ক্যাথারিনকে দেখবার জন্য আমার মন অস্থির হয়ে উঠেছে। তুমি আমাকে সিনর বাপ্তিস্তার কাছে নিয়ে চল।
-তা নিয়ে যাব। কিন্তু বন্ধু তোমাকেও আমার একটা উপকার করতে হবে।
-কি উপকার। পেক্রশিও জিজ্ঞেস করল।
-আমি সিনর বাপ্তিস্তার ছোট মেয়ে বিয়াংকাকে বিয়ে করতে চাই। তাকে বিয়ে করার আরো উমেদার আছে। বাপ্তিস্তা আমাকে আর তাদের বিয়াংকার কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছে না। বড় মেয়ের বিয়ে না দিয়ে তিনি ছোট মেয়ের বিয়ের কথা ভাববেনই না। কাজেই নিজের স্বার্থেই আমাকে দজ্জাল ক্যাথারিনের পাত্র খুঁজতে হচ্ছে। বিয়াংকার কাছে যাবার একটা সুযোগ আমি খুঁজছি, তুমি আমাকে সুযোগটা করে দিতে পার।
-কি করে? অবাক হয়ে পেক্রশিও জিজ্ঞেস করল।
-তুমি তো ক্যাথারিনকে বিয়ে করবার প্রস্তাব নিয়ে সিনর বাপ্তিস্তার কাছে যাচ্ছ।
-হ্যাঁ, তা যাচ্ছি। পেক্রশিও বলল।
-সিনর বাপ্তিস্তা বিয়াংকার জন্য একজন গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করবেন। বাপ্তিস্তা আমাকে চেনেন।
তাই ভাবছি শিক্ষকের ছদ্মবেশে তাঁর বাড়ীতে ঢুকব। তুমি যদি সিনর বাপ্তিস্তার কাছে আমাকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করবার কথা বল, তাহলে তিনি তোমার সুপারিশটা অগ্রাহ্য করবেন না।
-এ আর এমন কি কথা। আমি তোমার নামই সুপারিশ করব।
-আরে না না আমার নিজের নয়-আমার ছদ্ম নাম।
-আরে। তুমি কি আমাকে এতই বোকা ভাব? আমি রাগী হতে পারি কিন্তু বোকা নই আমি তোমার ছদ্ম নামই সুপারিশ করব। দুই বন্ধু এবার সিনর বাপ্তিস্তার বাড়ীর দিকে যাত্রা করল।
পথে দেখা হল গ্রেমিও আর ছদ্মবেশী লুসেনসিওর সঙ্গে। একটু আগেই লুসেনসিও গ্রেমিওর সঙ্গে আলাপ করে তাকে একটি কাজ খুঁজে দেবার জন্য অনুরোধ করেছে। বলেছে গৃহশিক্ষকের কাজ হলেই ভাল হয়। এ রকম নির্ঝঞ্ঝাট কাজই তার পছন্দ। তাই গ্রেমিও তাকে নিয়ে যাচ্ছে বাস্তিস্তার কাছে। যেতে যেতে বিয়াংকাকে কি ধরনের পাঠ পড়াতে হবে সে সম্পর্কে গ্রেমিও তাকে নির্দেশ দিচ্ছিল। বলছিল তাকে এমন পাঠ পড়াতে হবে যাতে বিয়াংকার মনটা গ্রেমিওর দিকে ঝুঁকে পড়ে।
লুসেনসিও বলল, আমি যাই পড়াই না কেন, আপনার কথা আমি ছাত্রীর কাছে বলব।
এ কথা শুনে গ্রেমিও খুব খুশি হল।
হর্তেনসিও বলল, এই যে গ্রেমিও চললে কোথায়?
যাচ্ছি সিনর বাপ্তিস্তার বাড়ীতে। বিয়াংকার জন্য গৃহশিক্ষকের খোঁজ করছিলাম। ভাগ্যক্রমে পেয়েও গিয়েছি। আমার সঙ্গের এই ভদ্রলোকটি একজন যোগ্য শিক্ষক। এর নাম ক্যাঙ্কিও। উনি বিয়াংকার উপযুক্ত শিক্ষক হবেন। উনি পড়াবেন সাহিত্য।
হর্তেনসিও বলল, "আমিও একজন ভাল শিল্পীকে পেয়ে গিয়েছি। তিনি বিয়াংকাকে গান শেখাতে রাজী হয়েছেন। এখন সিনর বাত্তিস্তার রাজী হলেই তিনি কাজে যোগ দিতে পারেন।
গ্রেমিও জিজ্ঞেস করল, তোমার সঙ্গের এই ভদ্রলোকটি কে?
ইনিই বুঝি সেই সংগীতশিল্পী।
-না না তা নয়। এই ভদ্রলোকটির সাঙ্গে হঠাৎ আলাপ হয়ে গেল। উনি বলছেন, ভাল যৌতুক পেতে দজ্জাল ক্যাথারিনকে বিয়ে করতে র আপত্তি নেই। তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি সিনর বাপ্তিস্তার বাড়িতে। সেখানে উনি নিজেই বিয়ের কথা পাড়বেন।
গ্রেমিও বলল, "তুমি ক্যাথারিনের স্বভাবের কথা ওর কাছে খুলে বলেছ তো?
পেক্রশিও বলল, হ্যাঁ শুনেছি সে নাকি একটি দজ্জাল আর ঝগড়াটে মেয়ে এটুকু যদি তার দোষ হয়, তবে আর এমন কি ক্ষতি! ও আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারব। আমিও, মশাই খুব একটা শান্তশিষ্ট মানুষ নই। আমিও রাগী মানুষ।
গ্রেমিও বলল, "তাই নাকি? আপনি তো পদুয়া শহরের লোক নন। আপনার দেশ কোথায়?
আমার বাড়ী হল ভেরোনায়। আমার বাবা আন্তোনিও সেখানকার একজন নামকরা ধনী লোক ছিলেন। কিছুদিন হল তিনি মারা গিয়েছেন। আমার জন্য রেখে গিয়েছেন বিরাট সম্পত্তি। সংসারী হবার আগে আমি একটু দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছি। এখানে এসে পাত্রীটির কথা শুনলাম। তা নিজেই প্রস্তাব করতে যাচ্ছি।
গ্রেমিও বলল, মশাই, আপনি কিন্তু বুনো বেড়ালের সঙ্গে ঘর করতে যাচ্ছেন।
-যতবড় বুনো বেড়ালই হোক না কেন, তাকে পোষ মানাবার ক্ষমতা আমার কাছে।
পেক্রশিওর কথায় সবাই খুশী। শেষ পর্যন্ত সে ক্যাথিরিনকে বিয়ে করতে পারবে কিনা তা বলা শক্ত। তবে কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, পেক্রশিও একজন পাকা পোড়খাওয়া মানুষ। ওরা চারজনে এগিয়ে চলল সিনর বাপ্তিস্তার বাড়ীর দিকে। বাড়ীর কাছাকাছি এসে দেখা হল লুসেনসিও-বেশী ত্রানিওর সঙ্গে। ত্রানিওর সঙ্গে রয়েছে লুসেনসিওর কিশোর ভৃত্য বিয়ান্দেলো।
ভূত্যের একহাতে একটা বেহালা, আর অন্যহাতে কয়েকখানা বই। ছোকরা চাকরটিকে আগে থেকেই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রাখা হয়েছিল। সে এমন ভাব করল যে আসল লুসেনসিওকে সে চেনেই না, ত্রানিওই যেন তার প্রভু।
ওদের চার জনের সঙ্গে দেখা হতেই লুসেনসিও বেশী ব্রানিও জিজ্ঞেস করল, এই যে মশাইরা, সিনর বাপ্তিস্তা মিনোলার বাড়ি কোন্ পথে যাব বলতে পারেন?
বিয়ান্দেলো ফোড়ন কাটল, ঐ যে যাঁর দু'টি সুন্দরী মেয়ে আছে। গ্রেমিও বলল, আপনি সিনর বাপ্তিস্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন? ত্রানিও বলল, আমি বাপ, মেয়ে সবাইকার সঙ্গেই দেখা করতে চাইছি।
পেক্রশিও বলল, আপনি মশাই, দজ্জাল মেয়েটির দিকে নজর দেবেন না কিন্তু।
ত্রানিও বলল, মোটেই না মোটেই না, দজ্জাল মেয়েদের আমি মোটেই পছন্দ করি না। তাদের
কাছ থেকে দূরে থাকতেই আমি ভালবাসি।
হর্তেনসিও জিজ্ঞেস করল, মশাই কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন?
ত্রানিও একটু রাগের সুরেই বলল, তাই যদি তাই, তবে দোষের কি আছে?
গ্রেমিও বলল, তাহলে মশাই এ পথ ছাড়ুন।
পথ ছাড়তে যাব কেন? পথ কি আপনার একলার? পথ তো আমার আপনার সবাইকার।
আপনি দেখছি আমার কথার অর্থই বুঝতে পারেন নি।
হর্তেনসিও বলল, শুনুন, মশাই, এখানে সুবিধা করতে পারবেন না। সিনর বাপ্তিস্তার ছোট মেয়ে
বিয়াংকা হল আমার অর্থাৎ সিনর হর্তেনসিওর মনোনীত পাত্রী।
সঙ্গে সঙ্গে গ্রেমিও বলে উঠল, বিয়াংকা ভালবাসে সিনর গ্রেমিওকে।
ত্রানিও বলল, তা মশাই, একটি মেয়ে যদি সুন্দরী আর গুণবতী হয় তবে তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক এমন অনেক তরুণই তো তার বাবার কাছে আসবে। আমিও না হয় এলাম। হয়তো দেখা যাবে ভাগ্যদেবী আমার উপরই প্রসন্ন।
গ্রেমিও বলল, আরে এ লোক দেখছি কথাবার্তায় ওস্তাদ। হয়ত কথার জাল বুনেই আমাদের হারাবে।
হর্তেনসিও বলল, আপনি কি সিনর বাপ্তিস্তার মেয়েদের দেখেছেন?
-না দেখিনি। কিন্তু শুনেছি যে তাঁর দু'টি মেয়ে আছে। বড়টি দজ্জাল ছোটটি খুব ভদ্র আর নম্র। পেক্রশিও বলল, আপনি কিন্তু বড়টির দিকে ভুলেও নজর দেবেন না। তার কথা আপনি ভাববেন না। সে আমার মনোনিতা পাত্রী। গ্রেমিও ঠাট্টা করে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, বড়টি থাক আমাদের এই মহাবীর হারকিউলিসের জন্য।
পেক্রশিও বলল, কিন্তু বড়টির বিয়ে না হলে সিনর বাপ্তিস্তার তো ছোটটির কাছে কোন পাবিপ্রার্থীকে যেতেই দেবেন না। আমি বড়টিকে বিয়ে করতে পারলেই তবে ছোটটির পথ পরিষ্কার হবে।
তানিও বলল, তবে আপনিই পথটা পরিষ্কার করে দিন। ছোটমেয়ের বিয়ের বাধা দূর হোক। তারপর তাকে স্ত্রী রূপে পাবার জন্য শুরু হোক আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দেখা যাক ভাগ্যদেবী কার দিকে মুখ তুলে চান।
আপনার পরিচয়টা তো জানতে পারলাম না, পেক্রশিও বলল আমার পরিচয়। ও হ্যাঁ, এখনও সেটা দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আমার নাম লুসেনসিও। বাড়ী পিসা শহরে। সেখানে আমার বাবা ভিনসেনসিও একজন ধনী আর মানী বণিক। এই পদুয়া নগরেও আমার বাবার আড়ত আছে। ব্যবসায়ের কাজেই বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন, সিনর বাপ্তিস্তার ছোট মেয়ের রূপ গুণের কথা আমি শুনেছি তাই তার সঙ্গে নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমি নিজেই এসেছি। আসুন, সিনর বাপ্তিস্তার কাছে যাবার আগে আমরা সবাই মিলে একটু আনন্দ করি। চলুন, সবাই মিলে একসঙ্গে একটু পানভোজন করা যাক।
এ প্রস্তাবে কারো অমত হল না।