পর্দা: ইসলামি শরীয়া মোতাবেক নারীরা কার কার সাথে দেখা করতে পারবে? এবং কার কার সাথে দেখা করতে পারবেনা? বিস্তারিত আলোচনা
যাহাদের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয নাই তাহাদের নাম
বাহিরের ভিন পুরুষদের সাথে দেখা দেওয়াতো জায়েয নাই। তারপরেও নিজের আত্মীয়স্বজন যাহাদের সহিত বিবাহ জায়েয আছে, তাহারাও বেগানা পুরুষ। এই সবের সহিতও দেখা সাক্ষাৎ করা, সামনাসামনি হইয়া কথাবার্তা বলা হারাম, কবীরাহ গোনাহ্। আপন চাচাতো ভাই এর সাথে দেখা দেওয়া যাবে না। মামাতো ভাই এর সাথে দেখা দেওয়া যাবে না। ফুফাতো ভাইয়ের সাথে দেখা দেওয়া যাবে না। খালু ও ফুফার সাথে দেখা দেওয়া যাবে না। চাচাত মামু, দেবর, ভাশুর, নন্দের জামাই, ভগ্নিপতি এদের সাথে দেখা দেওয়া যাবে না।
চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু শ্বশুর, ফুফা শ্বশুর, এদের সাথে দেখা দেওয়া যাবে না। এমনকি যেই সকল ছোট ছেলেরা স্বামী স্ত্রীর ব্যবহারের মর্ম বুঝে তাদের সাথেও দেখা দেওয়া নিষেধ। মু'মিনের জন্য বিনা তওবায় মাফ নাই। বেঈমানের জন্য কোন আইন নাই। দেবরের ছেলে, ভাশুরের ছেলে, নন্দের ছেলে, ধর্ম বাপ, ধর্ম ভাই, ধর্ম পুত্র এদের সাথেও দেখা দেওয়া যাবে না।
![]() |
ইসলামি শরীয়া মোতাবেক নারীদের পর্দার বিধান আলোচনা |
যাহাদের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয আছে তাহাদের নাম
বাপ, দাদা, নানা, আপন চাচা, আপন মামা, আপন ভাই, দুধ ভাই, দুধ বাপ এদের সাথে দেখা দেওয়া যাবে। আপন ছেলে, ছেলের পুত্র নিম্নে যত যাবে, কন্যার পুত্র নিম্নে যত যাবে, সৎ পুত্র নিম্নে যত যাবে, সৎ ভাই নিম্নে যত যাবে, শশুর, আপন কন্যার জামাই, দুধ কন্যার জামাই এই সকল এর সাথে দেখা করা জায়েয আছে, কিন্তু ইহাদিগকেও নাভী হইতে হাটু পর্যন্ত দেখান হারাম এবং পেট ও পিট দেখানও হারাম। সাবধান! বোনেরা আমার, সর্বদা আপনার পেট ও পিঠ ঢাকিয়া রাখিবেন, যেন কোন মাহরাম পুরুষেও দেখিতে না পায়। আরও স্মরণ রাখিবেন, কোন মেয়ে লোকেরও অন্য মেয়ে লোকের নাভী হইতে হাটু পর্যন্ত বিনা ওজরে দেখা হারাম। এখন বুঝিলেন তো জায়েয পুরুষদের জন্যও যখন শরীরের কতেক অংশ পর্দা করা ফরজ এবং বেগানা পুরুষ হইতে পর্দা করা যে কতদূর ফরজ তাহা ঈমানদার জ্ঞানী মা বোনেরা সহজেই বুঝিতে পারিবেন।
জ্ঞানী যারা বুঝে তারা শুধু ইশারায়,
অবুঝকে বুঝাইতে পারে কে কোথায়?
আল্লাহ্ পাকের রহমতের আশায় শত কষ্ট হইলেও ক্ষণকালের জন্য এই দুনিয়া হইতে বেহেশতের ছবক আদায় করিয়া যান। এই জগতের সুখ শান্তি তালাশ করা জ্ঞানী লোকের কাজ নহে। জায়েয পুরুষদের সাথে হইলেও নির্জন স্থানে বসিয়া আলোচনা করিবেন না। কারণ, সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি শয়তান আসিয়া ধোকা দিতে পারে। তাই ছোট বাচ্চা বা কাউকে ধারে রাখিয়া আলোচনা করিবেন। বোনেরা আমার কষ্ট করিয়া আজ খাস পর্দা করিয়া চলেন, কাল কবরে গিয়া সুখে থাকিতে পারিবেন, এই দুনিয়া হইল আখিরাতের শষ্যক্ষেত্র ও কামাইর জায়গা। এখানে যে যাহা কামাই করিবেন, আখিরাতে তাহাই ভোগ করিবেন। পড়ার যামানায় দুঃখ ভোগ করিয়া পাশ করিয়া লও। চাকুরির বেলায় আরামে কাল কাটাইতে পারিবে। একবার বেহেশতে যাইতে পারিলে এই কষ্টের কথা চির তরে ভুলিয়া যাইবেন।
স্বামীর কারণে যদি কোন মেয়েলোকের পর্দা নষ্ট হয়, যেমন স্বামী ভিন পুরুষদিগকে নিজ ঘরে প্রবেশ করিতে নিষেধ করে না। স্বামীর ভাই আসিয়া ভাবী বলিয়া ঘরে ঢুকিয়া যায়, ভাগিনা বা স্বামীর ভাই পুত্র আসিয়া মামী জান, চাচী জান বলিয়া ঘরে ঢুকিয়া পড়ে। স্বামীকে বুঝাইয়া আল্লাহর হুকুমের কথা বলিলেও যদি স্বামী খেয়াল না করে তবে সম্পূর্ণ পাপ স্বামীরই হইবে। যাহারা স্বামীর অধীনে এইরূপ ঠেকিয়াছেন, তাহারা যেন হাতের কজী পর্যন্ত ঢাকে এইরূপ একটি জামা বানাইয়া উহা গায় দিয়া পরিধানের কাপড় দ্বারা ভাল করে সর্ব শরীর ঢাকিয়া রাখিয়া কাজ কর্ম করিবেন। কিন্তু বেগানা পুরুষের চোখের দিকে তাকাইয়া কথাও বলিবেন না, অন্য দিকে তাকাইয়া বলিবেন। বলবেন, ঐ দিকে বসেন আপনার সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েয নাই। আল্লাহ্র হুকুম মানতে হবে। পর্দা করা ফরজ, এই কথা বলতে সাহস না হইলে অন্য দিকে মুখ করিয়া নিজ শরীরকে ঢাকিয়া চুপ করিয়া থাকিবেন। উহা দেখিলে তাহাদের চোখেও লজ্জা শরম আসিয়া পড়িবে। তবেই আল্লাহ্ পাক আপনাকে মাফ করিবেন সম্পূর্ণ পাপ স্বামীর হইবে। আর স্বামী যদি আপনাকে পর্দায় রাখিতে চায়, আর আপনি তাহা না মানেন, তবে আপনি মহাপাপী হইবেন। আপনার স্বামীকে আল্লাহ পাক মাফ করিয়া দিবেন।
বোনেরা আমার! দুঃখ ভোগ না করিলে কখনও সুখ পাওয়া যায় না। আল্লাহ্ পাকের বেহেশতের বাগানের শান্তির তুল্য শান্তির জায়গা আর কোথায়ও নাই এবং সেই বেহেশতের ছবক আদায় করার মত কঠিন কাজও দুনিয়াতে আর কোনটাই নাই। বেহেশতের চতুরপার্শ্বে কাঁটাবন আর দোজখের চতুরপার্শ্বে ফুলের বাগান। হাসতে হাসতে হায়রে মানুষ দোজখের কাজ করে আর কাঁটা দেখে মানুষ বেহেশতের কাজ ভুলে যায়। কারণ, অবোধ শিশু কখনও আগুন পানি ভয় করে না। কালসাপ দেখিলে তাহাকেও ধরিতে যায়। সে বুঝে না যে, আমি উহাতে মারা পড়িব এই জন্যই কতেক মূর্খ মেয়ে পুরুষের কবরের আজাব, কিয়ামত ও বেহেশত দোজখের প্রতি বিশ্বাস নাই। তাই উহার প্রতি পূর্ণ ঈমান না থাকিলে তাহাদের কোন এবাদত বন্দেগী আল্লাহর দরবারে কবুল হইবে না। যাহারা ইচ্ছা করিয়া কুরআন ও হাদীস শরীফের নির্দেশ অমান্য করিয়া বেপর্দায় চলিবে, তাহারা নিশ্চয়ই জাহান্নামী হইবে। খাঁটি ঈমানদারগণ কখনও বেপর্দা হইয়া চলিতে পারে না।
বোনেরা আমার! আপনারা এখন খাস তাওবা করিয়া খাস পর্দা করুন। তাহা হইলেই সমস্ত এবাদতে মজা ও সব কাজে বরকত পাইবেন এবং মহিয়সী মহিলাদের সাথে গিয়া জান্নাতুল ফেরদাউছ বেহেশতে প্রবেশ করে, সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারবেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ), হযরত খাদিজাতুল কোবরার সাথে গিয়া বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেন। তাই প্রথম কর্মসূচি আপনারা মেহেরবাণী করে নামাযী হয়ে যান। দ্বিতীয় কর্মসূচি আপনারা পর্দার ভিতরে বোরকার ভিতরে চলে আসেন।
সৌদি আরবের একটা মেয়েকে বিবাহ করিয়া নিতে হলে এক লক্ষ, দেড় লক্ষ, দুই লক্ষ রিয়াল, আশি হাজার, নব্বই হাজার নগদ ক্যাশ মেয়ের হাতে দিয়া মেয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে ছেলেকে দিতে হয়, এর কারণ হইল সৌদী আরবের মেয়েরা বোরকার ভিতরে থাকে এই জন্য তাদের মান মর্যাদা বেড়েছে। যেই জিনিসের উপর পর্দা থাকে, লেবেল থাকে, পেকেট থাকে তখন সেই জিনিসের মূল্য বেড়ে যায়। মক্কা, মদিনার একটা মেয়েও কোন দিন বোরকা ছাড়া বাহির হয় না।
বাংলাদেশের মেয়েদের আগে দাম ছিল, যখন তাহারা বোরকার ভিতরে ছিল। আর এখন দাম কমে গেছে। বোরকার বাহিরে চলে গেছে এই জন্য দাম নাই, ইজ্জত নাই। আসুন আমরা ওয়াজে যা শুনি বাস্তবে আমল করবো। আল্লাহ্ তৌফিক দিন। (আমীন)
আসুন এইবার আমাদের মা খাতুনে জান্নাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কলিজার টুকরা নারী জাতিদের মুকুট মনি, যিনি নারী জাতিদের সর্দার হবেন, যার হাতে বেহেশতের চাবি থাকবে, যার সুপারিশ ছাড়া বেহেশতে ঢুকা যাবে না, তাহার আলোচনা করি দেখি।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধ এক সাহাবীকে নিয়া ফাতেমার ঘরে ঢুকলেন, ফাতেমা (রাঃ) উঠে দৌড়ায়, নবী আমার ডেকে বলে মা সাহাবী অন্ধ, চোখে দেখে না। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বলেন, আব্বাগো সাহাবী অন্ধ আমাকে চোখে দেখে না, আমি তো চোখে দেখি। হযরত ফাতেমা এন্তেকালের আগে অছিয়ত করে গেলেন, আমার আব্বার সাহাবীরাগো, আমার এন্তেকালের পরে তোমরা আমাকে দিনে কবর দিতে নিয়ে যেও না। রাত্রিতে আমাকে জান্নাতুল বাকীতে কবর দিও। দিনে খাটের উপরে লোকেরা লক্ষ্য করে দেখবে আর বলবে ফাতেমা এতটুকু লম্বা ছিল, পর্দার খেলাপ হয়ে যাবে। হযরত ফাতেমা (রাঃ) পর্দাকে এত বেশি ভালবাসতেন।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হাশরের ময়দান যে দিন শুরু হবে, লোকেরা সেদিন চিৎকার করে কাঁদবে পানি দেওগো। পানি পানি বলে চিৎকার দিবে। যে দিন মা তার সন্তানকে পরিচয় দিবে না, স্বামী স্ত্রীকে পরিচয় দিবে না, এমন সময় জিবরাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডেকে বলবেন, যাও, জিবরাঈল! পুলছেরাতের গোড়ায় গিয়ে দাঁড়াও। আশে পাশের লোকদের বলো, তারা যেন চক্ষু বন্ধ করে নিচের দিকে তাকায়। আমার মা ফাতেমা (রাঃ) এখন পুলছেরাত পাড়ি দিয়া জান্নাতে পৌঁছিবে।
সুতরাং আমার মা বোনদের খেদমতে আমার আকুল আবেদন রইলো মা! পাগলামী আর কতকাল করবা গো মা। এই দুনিয়া তো পাগলামী করার জায়গা না। শুধু মাত্র ছোট আকারে আমি একটি কথা বলে যাই, মনে রাখবেন, একদিন লাল শাড়ী গায় লাগাইয়া পালকীর ভিতরে, গাড়ির পিছনে বইসা স্বামীর সঙ্গে গোপন আলাপ করিতে করিতে স্বামীর বাড়িতে এসেছ। ৪০ বা ৫০ বৎসর আপনি স্বামীর সংসারে খাটার পর যেদিন জীবনের সময় শেষ হয়ে যাবে, সেই দিন আবার এই স্বামীর বাড়ির থেকেই চির বিদায় নিবাগো মা, ঐ দিনও আবার তোমার ঘরের দরজায় একটা পালকী চলে আসবে। ঐ মসজিদের কোণা থেকে পালকী চলে আসবে, একদিন তুমি লাল শাড়ী গায়ে লাগাইয়া ঐ পালকীতে চড়ে গোপন আলাপ করিতে করিতে স্বামীর বাড়িতে এসেছ। এমন এক মুহূর্ত চলে আসবে ঐ দিন তুমি সাদা শাড়ী গায় লাগাইয়া চির বিদায় নিবাগো।
মা এই বাড়ির থেকে গোরস্থানে যেখানে হাজার হাজার মানুষ ঘুমাইয়া আছে তোমার সঙ্গে কেউ যাবেনাগো মা। তাই কবরে গিয়া লক্ষ লক্ষ বৎসর পর্দায় থাকিতে হইবে ঐ পর্দায় কোন নেকি হইবে না। আর আজাবও কমিবে না। পরীক্ষা করিয়া দেখেন পর্দানশীল কোন মহিলা কালো হইলেও তাহার চেহারাতে আল্লাহ্ পাকের মুহাব্বাতের নূর চমকিতে থাকে। তারা স্বামীকে খুব বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করেন। স্বামীর নির্দেশ মানিয়া চলেন। ঈমানদারের ঈমানের কাজেই দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, আর বেঈমানের বেঈমানিতেই দুনিয়াতে শান্তি মনে করে, কিন্তু মউতের সময় হইতেই তাহাদের আজাব ও মছিবত শুরু হইয়া যাইবে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা দেবরকে মৃত্যুর মত ভয় করবা।