প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স- বাংলাদেশের লোক প্রসাশন মৌখিক পরীক্ষার সাজেশন
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো মাস্টার্স প্রিলিমিনারি -রাষ্ট্রবিজ্ঞান-বাংলাদেশের লোক প্রসাশন বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌখিক/ভাইবা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি সাজেশন সম্পর্কে। আপনাদের মধ্যে যারা প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত আছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। এছাড়াও যারা বিসিএস পরীক্ষায় জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্যও অত্যন্ত চমৎকার ভূমিকা রাখবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি সাজেশন
১। লোক প্রশাসন কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণ অর্থে রাষ্ট্রের কর্মতৎপরতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্র যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাই লোক প্রশাসন।
২। লোক প্রশাসন সম্পর্কে দু'জন উল্লেখযোগ্য মনীষীর সংজ্ঞা বল?
উত্তর: L. D. White বলেন, "লোক প্রশাসন সেইসব কার্যাবলির সমষ্টি যাদের উদ্দেশ্য হলো সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন করা।"
Pfiffner and Presthus বলেন, "লোক প্রশাসন হচ্ছে সরকারি নীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন।
৩। তুলনামূলক প্রশাসন কাকে বলে?
উত্তর: অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে যখন বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা, তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো, প্রশাসনিক সংস্থা ইত্যাদির তুলনামূলক আলোচনা করা হয়ে থাকে, তখন তাকে তুলনামূলক প্রশাসন বলে অভিহিত করা যায়।
![]() |
| প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ভাইভা পরীক্ষার সাজেশন |
৪। তুলনামূলক প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য কি কি?
উত্তর: তুলনামূলক প্রশাসনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
(ক) তুলনামূলক প্রশাসন লোক প্রশাসনে অতি সাম্পতিক সংযোজন
(খ) তুলনামূলক প্রশাসন বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করে
(গ) তুলনামূলক প্রশাসন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত কার্যাপ্রণালি বিশ্লেষণ করে তার প্রকৃত স্বরূপ উৎঘাটন করে।
(ঘ) তুলনামূলক প্রশাসনে বিভিন্ন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বর্ণনা ও গবেষণামূলক আলোচনা করা হয়।
৫। উন্নয়নমুখী প্রশাসনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর: উন্নয়নমুখী প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
(ক) গতিশীল প্রশাসন ব্যবস্থা
(খ) পরিধির ব্যাপকতা
(গ) পরিকল্পনামুখী
(ঘ) দায়িত্বশীল প্রশাসন ব্যবস্থা
(ঙ) বিকেন্দ্রীকরণের প্রতি গুরুত্বারোপ
(চ) দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধন
(ছ) সেবাধর্মী
৬। উন্নয়ন প্রশাসন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: উন্নয়ন প্রশাসন যন্ত্রকে সচল ও গতিশীল করার পাশাপাশি তাকে আরো সক্ষম ও যুগোপযোগী করে তুলতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের সার্বিক উন্নয়ন বহুলাংশে উন্নয়ন প্রশাসনের উপর নির্ভলশীল। তাই উন্নয়ন প্রশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭। সংগঠনের সংজ্ঞা দাও?
উত্তর: সংগঠন বলতে একটি যুক্তিসঙ্গত, সুপরিকল্পিত কর্তৃত্ব কাঠামোকে বোঝায়। সংগঠন এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কম বা অধিক সংখ্যক লোক বিভিন্ন কার্য সম্পাদনে নিয়োজিত থাকে।
৮। সংগঠন সম্পর্কে দুইজন মনীষীর সংজ্ঞা প্রদান কর।
উত্তর: (ক) L. D. White-এর ভাষায়, “কার্যাবলী ও দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে কোন সর্বসম্মত উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তাকল্পে কর্মচারীদের সুবিন্যস্ত করাই হলো সংগঠন।"
(খ) John D. Mooney বলেন, "কোন সাধারণ লক্ষ অর্জনের জন্য প্রত্যেক মানব সংঘের অনুসৃত গঠন রীতিই হলো সংগঠন।
৯। সংগঠনের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর: সংগঠনের কতকগুলো সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
(ক) সংগঠনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে।
(খ) উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে সুষ্ঠু যোগাযোগ স্থাপন ও কর্মচারীদের পারস্পারিক সহযোগিতা অর্জন।
(গ) সংগঠনের কর্মচারীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক।
(ঘ) সংগঠনের উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি জটিল।
(ঙ) সংগঠন সর্বজনীন।
১০। সংগঠন সম্পর্কিত প্রধান তত্ত্বগুলো কি কি?
উত্তর: প্রশাসন বিষয়ের লেখকগণ সংগঠন সম্পর্কিত যেসব তত্ত্বের কথা বলেছেন-এর মধ্যে তিনটি প্রধান হিসেবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এগুলো হলো-
(ক) সনাতন বা আনুষ্ঠানিক তত্ত্ব
(খ) নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক তত্ত্ব
(গ) আধুনিক তত্ত্ব।
১১। সংগঠনের আধুনিক তত্ত্বের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর?
উত্তর: আধুনিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
(ক) এই তত্ত্ব গতিশীলতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে।
(খ) এই তত্ত্বে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
(গ) এই তত্ত্বে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সংগঠনের খাপ খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে।
(ঘ) আধুনিক সংগঠন তত্ত্বে মানবিক চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
(ঙ) সর্বোপরি সংগঠনের সব উপাদানকেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করাই আধুনিক মতবাদের মূল কথা।
১২। সংগঠনের যান্ত্রিক তত্ত্ব কি?
উত্তর: এই তত্ত্ব অনুযায়ী সংগঠনকে একটি যন্ত্র বিশেষ হিসেবে গণ্য করা হয়। যেখানে কর্মচারীগণ মেশিনের কর্গ (Cog) রূপেই কাজ করে থাকেন।
১৩। সংগঠনের মানবিক তত্ত্ব কি?
উত্তর: মানবিক তত্ত্ব অনুযায়ী সংগঠন হচ্ছে এমন একটি দলস্বরূপ, যেখানে কার্যরত ব্যক্তিগণের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান যে, তারা প্রত্যেকেই সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যথোচিত ভূমিকা পালন করে।
১৪। আনুষ্ঠানিক সংগঠন কাকে বলে?
উত্তর: নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন ও সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে সংগঠন গঠিত হয় তাকে আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলে।
১৫। অনানুষ্ঠানিক সংগঠন কাকে বলে?
উত্তর: কোনরূপ আইন-কানুন ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই যে সংগঠন কর্মীদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা খেয়াল খুশির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে তাকে অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলে।
১৬। প্রশাসনিক সংগঠন কাকে বলে?
উত্তর: প্রশাসনিক কার্যাবলির বিভাগীয়করণ, কর্মচারী এবং বিভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থায়ীকরণ এবং ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ এবং পরিশেষে প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও শৃঙ্খলা বিধান করাকেই প্রশাসনিক সংগঠন বলে।
১৭। স্টাফ এজেন্সী ও লাইন এজেন্সি কি?
উত্তর: যে কোন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় প্রধান নির্বাহীর অধীনে দুই ধরনের কর্মচারী কর্মে নিয়োজিত থাকে। এদের একদল কর্মচারী লাইন এজেন্সী এবং অপর দল কর্মচারী স্টাফ এজেন্সী নামে পরিচিত।
১৮। লাইন এজেন্সি ও স্টাফ এজেন্সির কাজ কি?
উত্তর: লাইন এজেন্সি সাধারণত কর্তৃত্ব প্রয়োগ বা আদের্শ প্রদানে আর স্টাফ এজেন্সি লাইন এজেন্সিকে সহয়তা এবং পরামর্শ প্রদানে নিয়োজিত থাকে।
১৯। পদসোপান নীতি কি?
উত্তর: এই নীতি অনুযায়ী সংগঠনে উর্ধ্বতন ও অধস্তন নেতৃত্বের মাঝে ক্ষমতা কর্তৃত্ব বণ্টিত হয়ে থাকে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধীনস্থ কর্মকর্তাকে আদেশ প্রদান করেন এবং তার কাজ তদারক করেন। প্রত্যেক সংগঠনে এরূপ একটি ক্ষমতা ও দায়িত্বের রেখা থাকে এবং এই রেখা কার্যনির্বাহী থেকে শুরু করে কাঠামোর নিম্নতম কর্মকর্তা পর্যন্ত একটি কার্যকর সংযোগ রক্ষা করে চলে। এই সংযোগ রক্ষামূলক কার্যাবলীই মূলত সম্পাদন করে পদসোপন নীতি।
২০। পদসোপান নীতির সুবিধা কি?
উত্তর: পদসোপান নীতির সুবিধাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ক) প্রশাসনে সুষ্ঠু যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা।
(খ) শ্রম ও বিশেষীকরণ নীতির প্রতিফলন।
(গ) সুশৃঙ্খলভাবে কার্য সম্পাদন।
(ঘ) শ্রম বিভাজন নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগ।
(ঙ) সংগঠনে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।
২১। পদক্ষেপান নীতির অসুবিধাগুলো কি কি?
উত্তর: পদক্ষেপান নীতির অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ-
(ক) সময়ের অধিক অপচয়।
(খ) প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি।
(গ) লাল ফিতার দৌরাত্ম বৃদ্ধি ইত্যাদি।
২২। সমন্বয় কাকে বলে?
উত্তর: বিস্তৃত পরিধির কার্যের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করাই হলো সমন্বয় সাধন। সমন্বয় কোন পৃথক কাজ নয়, বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ের কাজকে একটি স্তরে বাধার এক প্রচেষ্টা মাত্র। সহজকথায় সমন্বয় হলো সব কাজকে যুক্ত করা।
২৩। সমন্বয় কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: সমন্বয় সাধারণত দু' প্রকার। যথা- ১. অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং ২. বাহ্যিক সমন্বয়। বাহ্যিক সমন্বয়ের রয়েছে আবার দুটি দিক। যথা- (ক) কার্যগত সমন্বয় এবং (খ) ভৌগোলিক সমন্বয়।
২৪। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণ অর্থে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগকেই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা বলে।
২৫। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা জনক কে?
উত্তর: বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক হলেন আমেরিকান ফ্রেডারিক ডব্লিউ টেলর। তিনি ১৯৯১ সালে The Principles of scientific of management নামক গ্রন্থে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
২৬। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর: বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
- ব্যক্তির কার্যে বিজ্ঞানের ব্যবহার।
- কর্মী নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ।
- কার্যভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ।
- কর্মীদের মধ্যে কার্যের সুষম বণ্টন।
- সর্বোত্তম পদ্ধতি নির্বাচন।
- সময় ও গতি নিরীক্ষণ।
- উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম।
- প্রেষণা দান ইত্যাদি।
উত্তর: বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো-
- সর্বাধিক উৎপাদন।
- মালিকের সমৃদ্ধি আনয়ন।
- কার্যের সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণ।
- উন্নত জীবনযাত্রা।
- সর্বোচ্চ সুযোগ নিশ্চিতকরণ।
- সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখা।
- অবিরাম আয় নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।
২৮। আমলাতন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর: আমলাতন্ত্র হলো কেন্দ্রীয় ও স্থায়ীভাবে নিয়োজিত এমন কর্মচারীবৃন্দ যারা স্থায়ীভাবে কাজ করেন এবং জটিল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সুব্যবস্থিতভাবেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকেন।
২৯। আমলাতন্ত্রের প্রবক্তা কে?
উত্তর: আমলাতন্ত্রের প্রবক্তা হলেন ম্যাক্স ওয়েভার।
৩০। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে তিনজন মনীষীর সংজ্ঞা তুলে ধর।
উত্তর: আমলাতন্ত্র সম্পর্কে তিনজন বিখ্যাত মনীষীর সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
(ক) অ্যালমন্ড ও পাওয়েল-এর মতে, "আমলাতন্ত্র বলতে এমন এক ব্যাপক সংগঠনকে বোঝানো হয়ে থাকে যার মাধ্যমে শাসক বা আইন প্রণয়নকারীগণ নিজেদের সিদ্ধান্তকে বলবৎ করার চেষ্টা করেন।
(খ) অধ্যাপক গার্নারের মতে, "আমলাতন্ত্র হলো এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেখানে সরকারি কাজকর্ম মূলত বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয় এবং দপ্তরের প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিগত সরকারি নীতি-নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন।
(গ) অধ্যাপক লাস্কি বলেন, "আমলাতন্ত্র বলতে সাধারণত সেই ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যে শাসন ব্যবস্থাকে সরকারি কর্মকর্তাগণ এত পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন যে, তাদের ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রর বাঁধার সৃষ্টি করে।
৩১। ম্যাক্স ওয়েবারের মতে আমলাতন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর: ম্যাক্স ওয়েবার বলেন, "কোন সংগঠনের প্রশাসনিক উচ্চক্রমের কোন বিশেষ অবস্থানে থেকে যিনি প্রশাসনিক কর্মধারার এক বিশেষ অংশের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনিই আমলা।
৩২। আমলাতন্ত্র কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: আমলাতন্ত্র বিভিন্ন রূপের হয়ে থাকে। নিম্নে আমলাতন্ত্রের চারটি রূপের নাম উল্লেখ করা হলো-
(ক) পরিপূর্ণ আমলাতন্ত্র।
(খ) কার্যপ্রবাহ আমলাতন্ত্র।
(গ) কর্মী আমলাতন্ত্র।
(ঘ) সদ্য গঠিত আমলাতন্ত্র।
৩৩। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণ অর্থে জবাবদিহিতা বলতে কারো উপর পর্যাপ্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালনের নিশ্চয়তাকে বোঝায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বলতে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনানুযায়ী তাদের জবাবদিহি করা বুঝায়। সংক্ষেপে জবাবদিহিতা হচ্ছে সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে একজন ব্যক্তির ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতা।
৩৪। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে আইন বিভাগের ভূমিকা কি?
উত্তর: আইন বিভাগ নিম্নোক্ত উপায়ে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে-
- প্রশাসনিক গতি নির্ধারণ।
- বাজেট নিয়ন্ত্রণ।
- প্রশ্ন জিজ্ঞাসা।
- বিতর্ক ও আলোচনা।
- মুলতবি প্রস্তাব।
- নিন্দামূলক ও অনাস্থা প্রস্তাব।
- অনুসন্ধান কমিটি।
- ন্যায়পালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
৩৫। সচিবালয়কে বাংলাদেশ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় কেন?
উত্তর: যেসব কারণে সচিবালয়কে বাংলাদেশ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় তা নিম্নরূপ-
- নীতি প্রণয়ন।
- নীতি বাস্তবায়ন।
- ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ।
- সহযোগিতার কেন্দ্রস্থল।
- দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান।
- কাজের তদারকি।
- কাজের সমন্বয় সাধন।
- যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি।
৩৬। পদোন্নতি বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: একজন কর্মীকে তার বর্তমান পদ হতে উচ্চতর ও অধিকতর দায়িত্বপূর্ণ ও কর্তব্য বিশিষ্ট পদে উন্নীতকরণের নামই পদোন্নতি। অন্যভাবে বলা যায়, কোন কর্মীকে যখন তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সঠিক মূল্যায়ন করে তাকে প্রেষণা দানের উদ্দেশ্যে উপরি স্তরের উচ্চ পদে নিয়োগ দান করা হয় তখন সে প্রক্রিয়াকে পদোন্নতি বলে।
৩৭। পদোন্নতির ভিত্তিগুলো কি কি?
উত্তর: সাধারণ যেসব ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে নিম্নোক্তগুলো উল্লেখযোগ্য। যেমন-
(ক) জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক পদোন্নতি।
(খ) যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতি।
(গ) জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতি।
৩৮। পদোন্নতির উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: পদোন্নতির উদ্দেশ্যগুলোর নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ক) কার্যসন্তুষ্টি সৃষ্টি করা।
(খ) শ্রমিক ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস করা।
(গ) কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি ও পুরষ্কার।
(ঘ) কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা।
(ঙ) আনুগত্য সৃষ্টি।
(চ) হতাশা দূরীকরণ।
(ছ) উদ্দীপনা ও মনোবল বৃদ্ধি।
(জ) কর্মীর মর্যাদা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
৩৯। প্রশিক্ষণ কাকে বলে?
উত্তর: পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে কর্মীদের যে শিক্ষা প্রদান করা হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে। অর্থাৎ কর্মীকে কোন কাজ সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান দান করার প্রক্রিয়াকে প্রশিক্ষণ বলে।
৪০। প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কি?
উত্তর: প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ক) অদক্ষতা দূরীকরণ।
(খ) মনোবল উন্নয়ন।
(গ) তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনা সুবিধা।
(ঘ) দুর্ঘটনা হ্রাস।
(ঙ) ব্যয় হ্রাস।
(চ) উৎপাদন বৃদ্ধি।
(ছ) অপচয় হ্রাস।
(জ) কর্ম সন্তুষ্টি অর্জন ইত্যাদি।
৪১। গ্রাম সরকার কি?
উত্তর: বাংলাদেশ চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন বা চতুর্থ স্তরটির নাম গ্রাম সরকার। গ্রাম বাংলার অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। গ্রাম বাংলার প্রতিটি গ্রাম বা নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে এটি একটি স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাম সরকার নামে একটি বিল পাস হয়। এই বিল বা আইনের বলে বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডকে এক একটি ইউনিট ধরে যে স্থানীয় প্রশাসন বিনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাই গ্রাম সরকার।
৪২। প্রশাসনিক সংস্কার বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: সাধারণ অর্থে প্রশাসন ব্যবস্থার পুনগঠনের মাধ্যমে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা সৃষ্টিই হচ্ছে প্রশাসনিক সংস্কার। অন্যভাবে বলা যায়, প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিদ্যমান ঔপনিবেশিক ধারা দূরীভূত করে প্রশাসনকে কল্যাণকর ও অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে সাধিত পরিবর্তনসমূহ হলো প্রশাসনিক সংস্কার।
৪৩। প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণভাবে প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা বলতে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যের অবহেলা ও স্বেচ্ছারিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন অনুযায়ী তাদের দায়িত্বশীল হওয়াকে বুঝায়।
৪৪। বাংলাদেশে লোক প্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা কি?
উত্তর: প্রশাসন সংক্রান্ত জ্ঞানার্জনের জন্য লোক প্রশাসন অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। প্রশাসন সংক্রান্ত সকল জটিল প্রশ্নের সমাধানের জন্য লোক প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উন্নত বিশ্বের প্রশাসনিক দৃঢ়তা এসেছে লোক প্রশাসনের অধ্যয়নের মাধ্যমে। সুতরাং বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ, কল্যাণমুখী করার জন্য অধিক পরিমাণে লোক প্রশাসনের পঠন-পাঠন প্রয়োজন।
৪৫। লোক প্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলো কি কি?
উত্তর: লোক প্রশাসন আলোচনার উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(ক) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, (খ) আইনগত পদ্ধতি, (গ) ঐতিহাসিক পদ্ধতি, (ঘ) আচরণগত পদ্ধতি, (ঙ) তুলনামূলক পদ্ধতি, (চ) কাঠামোগত ও বর্ণনামূলক পদ্ধতি, (ছ) ব্যবস্থা বিশ্লেষণ পদ্ধতি।
৪৬। লোক প্রশাসনের গুরুত্ব কি?
উত্তর: আধুনিক যুগে প্রযুক্তি বিদ্যার উৎকর্ষের ফলে প্রশাসন ক্ষেত্রেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রশাসনের তত্ত্বগত জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানেরও প্রয়োজন অত্যধিক। তাই শিক্ষিত জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ়ভাবে পরিচালনার জন্য লোক প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে জাতীয় পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক করে সাজানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সবচেয়ে আশার খবর হলো বর্তমানে চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকল্পে স্থানীয় সমস্যা ও বিভিন্ন চাহিদা স্থানীয়ভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থাকে অধিকতর গতিশীল করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কেননা স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু না করলে প্রশাসনে গতিশীলতা আসবে না। এক্ষেত্রে লোক প্রশাসনের জ্ঞানাহরণ একান্তই অপরিহার্য।
৪৭। লোক প্রশাসনকে আইনের একটি বিশেষ শাখা বলে গণ্য করা হয় কেন?
উত্তর: লোক প্রশাসন ও আইন শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আইন লোক প্রশাসনের সীমা নির্দেশ করে দেয়। আর উক্ত সীমার মধ্যে অবস্থান করেই প্রশাসন ব্যবস্থা মূলত পরিচালিত হয়। লোক প্রশাসন ও আইন শাস্ত্রের এই ঘনিষ্ট সম্পর্কের জন্যই লোক প্রশাসনকে আইনের একটি বিশেষ শাখা বলে গণ্য করা হয়।
৪৮। আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: রাষ্ট্র প্রধান ও মন্ত্রীদের পরে শাসন বিভাগের যে সকল স্থায়ী কর্মচারী থাকেন তাদেরকে সামগ্রিকভাবে Civil Servants বলা হয়। বর্তমান সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থয় এ সকল স্থায়ী সরকারি কর্মচারীগণ আমলা (Bureaucrat) হিসেবে অধিক পরিচিত। এদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা আমলাতন্ত্র (Bureaucracy) নামে পরিচিত।
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল বলেন, "আমলাতন্ত্র বলতে এমন এক ব্যাপক সংগঠনকে বোঝানো হয়ে থাকে যার মাধ্যমে শাসক বা আইন প্রণয়নকারীগণ নিজেদের সিদ্ধান্তকে বলবৎ করার চেষ্টা করেন।
৪৯। আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের কি কি পদ্ধতির রয়েছে?
উত্তর: আমলাতন্ত্রকে নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়-
- অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ
- আইনগত নিয়ন্ত্রণ
- রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
- বিচার বিভাগের মাধ্যমে
- নাগরিক নিয়ন্ত্রণ।
৫০। আধুনিক আমলাতন্ত্রের জনক কে?
উত্তর: জার্মান সমাজ বিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারকে আধুনিক আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয়।
৫১। Max Weber-এর মতে আমলাতন্ত্রের বিকাশের কারণ কি?
উত্তর: Max Weber-এর মতে আমলাতন্ত্রের বিকাশের কারণ সমূহ নিম্নরূপ-
- পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনা।
- মুদ্রা অর্থনীতির বিকাশ।
- রাষ্ট্র ও সংগঠনের কাঠামো বৃদ্ধি।
- সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রযুক্তির বিকাশ।
- প্রশাসনের উপর আমলাতন্ত্রের কারিগরি প্রাধান্য ইত্যাদি।
৫২। পাবলিক সার্ভিস বা সিভিল সার্ভিস কি?
উত্তর: রাষ্ট্র প্রধান ও মন্ত্রীদের নিচে শাসন বিভাগের যে সকল স্থায়ী কর্মচারী থাকেন তাদেরকে সামগ্রিকভাবে সিভিল সার্ভেন্ট বলা হয় এবং সিভিল সার্ভেন্টদের দ্বারা পরিচালিত কাজকে পাবলিক সার্ভিস বলা হয়।
৫৩। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের গঠন প্রণালি বল।
উত্তর: বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে একজন সভাপতি আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হবে সেরূপ অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে কমিশন গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির ৫৭ নং অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য সংখ্যা সভাপতিসহ অন্যুন ৬ জন বা অনুর্ধ ১৫ জন নির্ধারিত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ কর্মকমিশনের ১ জন সভাপতি, ১১ জন সদস্য, ১ জন সচিব, ২ জন উপসচিব, ৪ জন পরিচালক, ৫ জন উপ পরিচালক, ১০ জন সহকারি পরিচালক, একজন মনস্তত্ববিদ, একজন গবেষণা অফিসার রয়েছেন। এছাড়া কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ে ২৭১ জন সহকারী কর্মকর্তা, অফিসার ও অন্যান্য সহকারী রয়েছেন।
৫৪। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের কার্যক্রম কয়টি শাখার মধ্যে বিন্যস্ত?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের কার্যক্রম ৮টি শাখার মধ্যে বিন্যস্ত। যথা- ১. সংস্থাপন শাখা, ২. হিসাব শাখা, ৩. পরীক্ষা শাখা, ৪ নিয়োগ শাখা, ৫. নির্বাচন শাখা, ৬. গবেষণা শাখা, ৭. মনস্তত্ত্ব শাখা, ৮. গোপনীয় শাখা।
৫৫। বর্তমানে বাংলাদেশে কয়টি মন্ত্রণালয় রয়েছে?
উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশ ৩৭টি মন্ত্রণালয় রয়েছে।
৫৬। কে ভারতবর্ষে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন?
উত্তর: লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতবর্ষে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
৫৭। উন্নয়নমুখী প্রশাসন কি?
উত্তর: উন্নয়নমুখী প্রশাসন হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত উন্নয়নমূলক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য সমূহের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংগঠনকে পরিচালিত করার পদ্ধতি। সহজ কথায় স্বতন্ত্র লক্ষ্য অর্জনের জন্য দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থাই হলো উন্নয়নমুখী প্রশাসন।
৫৮। উন্নয়ন প্রশাসন শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
উত্তর: উন্নয়ন প্রশাসন শব্দটি সর্বপ্রথম ১৯৫৫ সালে ভারতীয় পণ্ডিত গোস্বামী ব্যবহার করেন। তবে এর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও অর্থ প্রদানে আমেরিকান বিজ্ঞানীরাই অগ্রগামী।
৫৯। বাংলাদেশের প্রশাসনকে কি উন্নয়ন বলা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের প্রশাসনকে উন্নয়ন প্রশাসন বলা যায় না। কারণ উন্নয়ন প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং অতীব আবশ্যক উপাদান এখানে অনুপস্থিত। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা এখনো সেকেলে গোছের, বাংলাদেশে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
৬০। প্রশাসনিক সংস্কার কি?
উত্তর: সাধারণ অর্থে প্রশাসন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা সৃষ্টিই হচ্ছে প্রশাসনিক সংস্কার। কোন রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রাতষ্ঠার পর প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অধ্যাপক কোয়াহ (Quah)-এর মতে, "মানুষের তথা জনগণের ইচ্ছাকৃত পরিকল্পনা অনুসারে আমলা ব্যবস্থার পরিবর্তনকে বলা হয় প্রশাসনিক সংস্কার।" উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, প্রশাসনিক সংস্কার বলতে সংকীর্ণ অর্থে আমলা ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং ব্যাপক অর্থে সরকারি প্রশাসন বা সরকারের সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনকে বুঝায়।
৬১। সির্ভিল সার্ভিসের ভারতীয়করণ কি?
উত্তর: সিভিল সার্ভিসের ভারতীয়করণ নামের দিক দিয়ে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস হলেও এতে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। সুতরাং সিভিল সার্ভিসের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভারত ও ব্রিটেনে একই সাথে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠান, বয়ঃসীমা বৃদ্ধি, চাকুরির স্থায়িত্ব প্রভৃতি নিশ্চিত করে সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের অধিক হারে অন্তর্ভুক্তিকেই সিভিল সার্ভিসের ভারতীয়করণ বলা হয়।
৬২। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীয়করণ বলতে কি বুঝ?
উত্তর: সাধারণ অর্থে বিকেন্দ্রীকরণ অর্থ হলো ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নিম্নতম পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। অধ্যাপক Allen বলেন, "কেন্দ্র হতে প্রয়োগ করা সম্ভব এমন কর্তৃত্ব ব্যতীত অপর সকল কর্তত্বের সর্বনিম্ন স্তরে অর্পনের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে।"
৬৩। স্থানীয় সরকার বা প্রশাসন বলতে কি বুঝ?
উত্তর: স্থানীয় সরকার বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ ছোট একটি অংশকে। অর্থাৎ শাসন কার্যের সুবিধার্থে রাষ্ট্রকে বিভক্ত করে এলাকাভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তাকে স্থানীয় সরকার বলে অভিহিত করা হয়। যেমন- থানা, জেলা, বিভাগ ইত্যাদি।
৬৪। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বলতে কি বুঝ?
উত্তর: স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বলতে একটি দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকার জনসাধারণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত স্ব-স্ব এলাকার শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায়। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে।
৬৫। স্থানীয় প্রশাসনগুলো কি কি?
উত্তর: আমাদের দেশে জেলা ও থানা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থা যেমন- জেলা প্রশাসন, থাকা প্রশাসন, এগুলো স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে গণ্য।
৬৬। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো কি কি?
উত্তর: জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন প্রভৃতি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে পরিচিত।
৬৭। স্বায়ত্তশাসন বলতে কি বুঝ?
উত্তর: যে শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয়ভাবে করারোপ করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করে তাকে স্বায়ত্তশাসন বলা হয়। যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ ইত্যাদি।
৬৮। কয়েকজন লোক প্রশাসনবিদের নাম বল।
উত্তর: ডিমক ও ডিমক, এল, ডি. হোয়াইট, লুথার গুলিক, জেমস ডব্লিউ ফেসলার প্রমুখ।
৬৯। লোক প্রশাসন সংক্রান্ত প্রথম পুস্তক কোনটি?
উত্তর: প্যারিসের চার্লস জীন ব্রনাই-এর 'লোক প্রশাসনের নীতিসমূহ' বইখানি ১৮০৮ সালে প্রকাশিত হয়। এটাই লোক প্রশাসন সংক্রান্ত প্রথম পুস্তক।
৭০। লোক প্রশাসন সংক্রান্ত সবচেয়ে আধুনিক গ্রন্থ কোন খানি?
উত্তর: এল. ডি. হোয়াইট কর্তৃক রচিত ১৯০০ সালে প্রকাশিত Introduction to the study of Public Administration বইটি সবচেয়ে আধুনিক বই।
৭১। লোক প্রশাসনের অধ্যয়ন কখন থেকে শুরু হয়?
উত্তর: প্রুশিয়ায় সর্বপ্রথম ১৭২৭ সালে লোক প্রশাসন পাঠ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং অধ্যয়ন শুরু হয়।
৭২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন কখন একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা লাভ করে?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ সালে এ বিষয়টি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা লাভ করে।
৭৩। সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসন কাকে বলে?
উত্তর: যে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ইচ্ছা, আদেশ ও উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয় এবং জনসেবার বিষয়টি প্রাধান্য পায় তাকে সরকারি প্রশাসন বলে। অন্যদিকে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ইচ্ছা, স্বার্থ, উদ্দেশ্য এবং অধিক মুনাফা লাভের বিষয়টি প্রাধান্য পায় তাকে বেসরকারি প্রশাসন বলে।
৭৪। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়?
উত্তর: বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা এবং সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে।
৭৫। কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা বেশি?
উত্তর: মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা বেশি।
৭৬। ন্যায়পাল কি?
উত্তর: ন্যায়পাল হলো প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণের একটি পদ্ধতি। ন্যায়পাল যে কোন সময় সরকারি কর্মচারি বা সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাজের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিতে পারে।
৭৭। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: শাসন ব্যবস্থার সেবার মান জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নিম্নতম পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলে। এককথায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের সম্প্রসারণ ও কাজের চাপ লাম্বর করার জন্য ক্ষমতাকে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে বণ্টন করে দেয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে।
৭৮। উন্নয়নমুখী প্রশাসন ও সনাতন প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: উন্নয়নমুখী প্রশাসন হচ্ছে অধুনা পরিবর্তনশীল ও সৃজনশীল যা আধুনিক নগরায়ন, শিল্পোয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে গড়ে উঠে। অন্যদিকে সনাতন প্রশাসন হচ্ছে মান্ধতার আমলে প্রশাসন ব্যবস্থা যাকে আমরা Traditional বলে থাকি।
৭৯। প্রশাসনিক সংস্কার কি?
উত্তর: সাধারণ অর্থে প্রশাসনিক সংস্কার বলতে বুঝায় প্রশাসনের গুণগত পরিবর্তন সাধন করাকে। অর্থাৎ প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান উপনিবেশিকতার ছাপ দূরীভূত করে প্রশাসনকে অধিকতর কল্যাণমুখী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সাধিত পরিবর্তন সমূহকেই প্রশাসনিক সংস্কার বলে।
৮০। প্রশাসন এবং ক্যাডারের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: প্রশাসন হলো সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ যা শাসনকার্য পরিচালনা করে। অন্যদিকে কোন চাকুরির পদসংখ্যা বা এর অংশ বিশেষ আলাদা হিসেবে মঞ্জুর করা হলে তাকে ক্যাডার বলে। যেমন- বি. সি. এস. প্রশাসন ক্যাডার।
৮১। প্রশাসন সাধারণত কয় ধরনের?
উত্তর: প্রশাসন সাধারণত দুই ধরনের। যথা- ১. কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও ২. স্থানীয় প্রশাসন।
৮২। লোক প্রশাসন পাঠে কি কি বিষয় অবগত হওয়া যায়?
উত্তর: লোক প্রশাসন পাঠে প্রশাসনের পরিচিতি, অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসন, সংগঠন, নীতিপ্রণয়ন, প্রশাসনিক বিভাগ, আইন ও নিয়ন্ত্রণ সর্বোপরি একটি দেশের সাথে অন্য দেশের প্রশাসনিক রীতি-নীতির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য জানতে পারা যায়। এছাড়া প্রশাসনের আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় লোক প্রশাসন পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
৮৩। আমলাতন্ত্রের ত্রুটিগুলো কি কি?
উত্তর: লাল ফিতার দৌরাত্ম, দায়িত্বহীনতা, অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতা, আমলাদের ক্ষমতালিন্দা, শোষণ ও স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি।
৮৪। কিভাবে আমলাতন্ত্রের ত্রুটিগুলো দূর করা যায়?
উত্তর: শক্তিশালী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, উপযুক্ত নেতৃত্ব, বিকেন্দ্রীকরণ, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমলাতন্ত্রের ত্রুটি দূর করা যায়।
৮৫। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতা কি?
উত্তর: সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন হয়ে আইনগত বাঁধার সৃষ্টি হয় যা বাস্ত বায়নে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় একে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতা বলে।
৮৬। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কি?
উত্তর: ব্রিটিশ আমল থেকেই সরকারি অফিসের কাগজপত্র রাখার জন্য লাল ফিতার ফাইল ব্যবহার করা হতো। এ লাল ফিতার কাজ করতে গিয়ে মানুষ যখন বিভিন্ন অনিয়ম লক্ষ্য করল তখন থেকেই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কথাটি ব্যবহার হয়ে আসছে।
৮৭। সচিবালয় কি?
উত্তর: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহের অফিসগুলোকে একত্রে সচিবালয় বলা হয়। সচিবালয় হল সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থার রায়ুকেন্দ্র।
৮৮। বর্তমানে কতটি মন্ত্রণালয় আছে?
উত্তর: বর্তমানে ৩৮টি মন্ত্রণালয় আছে।
৮৯। বাংলাদেশে সচিবালয়ের কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত কর।
উত্তর: বাংলাদেশে সচিবালয়ে প্রধানত নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো বিদ্যমান। যথা- ১. মন্ত্রী ও আমলা দ্বন্দ্ব, ২. আমলাদের রাজনীতি সম্পৃক্ততা, ৩. দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি।
৯০। সচিবের কাজ কি?
উত্তর: মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও কার্যকরীকরণের দায়িত্ব সচিবের উপর ন্যস্ত।
৯১। সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের অফিসগুলোকে একত্রে সচিবালয় বলা হয়। অন্যদিকে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য সচিবালয়কে যে প্রশাসনিক একত্রে বিভক্ত করা হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ মন্ত্রণালয় হলো সচিবালয়ের একটি সাংগঠনিক শাখা।
৯২। মন্ত্রী এবং সচিবের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:
- মন্ত্রী জনপ্রতিনিধি এবং সচিব হলেন একজন সরকারি কর্মচারী।
- মন্ত্রী হলেন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান কিন্তু সচিব হলেন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান।
৯৩। সচিবালয়ের গঠন কাঠামো কিরূপ?
উত্তর: সচিবালয়ের গঠন কাঠামো নিম্নরূপ- সচিব অতিরিক্ত সচিব যুগ্মসচিব উপসচিব সহকারী সচিব।
৯৪। মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে?
উত্তর: মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেন সচিব।
৯৫। মন্ত্রণালয়ের গঠন কাঠামো কিরূপ?
উত্তর: মন্ত্রণালয়ের গঠন কাঠামো নিম্নরূপ- যুগ্মসচিব উপসচিব সহকারী সচিব। মন্ত্রী সচিব অতিরিক্তসচিব
৯৬। বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর উৎস কি?
উত্তর: বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর উৎস হলো বাংলাদেশ সচিবালয়।
৯৭। কমিশন কাকে বলে?
উত্তর: বিশেষ ক্ষেত্রে কতিপয় কাজ আদালত নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। আইনের ভাষায় একে কমিশন বলে।
৯৮। Rules of Business কি?
উত্তর: সরকার যখন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন তখন তাদের এ ধরনের অনুমোদিত সিদ্ধান্তকে Rules of Business বলে।
৯৯। অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ কাকে বলে?
উত্তর: সংসদ অধিবেশন না থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি দেশের জরুরি প্রয়োজনে যে আইন প্রণয়ন করেন তাকে অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ বলা হয়।
১০০। মন্ত্রণালয়ের প্রধান কে থাকেন?
উত্তর: প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান থাকেন একজন মন্ত্রী।
১০১। পরিদপ্তর কাকে বলে?
উত্তর: সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানে উপসচিব পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা কার্যভার গ্রহণ করলে তাকে পরিদপ্তর বলে।
১০২। অধিদপ্তর কাকে বলে?
উত্তর: সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান যুগ্মসচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা কার্যভার পরিচালনা করলে তাকে অধিদপ্তর বলা হয়।
১০৩। কখন কোন কোম্পানির কর্মকর্তাকে সিভিল সার্ভেন্ট রূপে আখ্যায়িত করা হয়?
উত্তর: ১৭৬৫ সালে সর্বপ্রথম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদেরকে সিভিল সার্ভেন্ট রূপে আখ্যা দেয়া হয়।
১০৪। কখন C.S.P.-এর গোড়াপত্তন ঘটে?
উত্তর: ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার C.S.P. বা Civil Service of Pakistan-এর গোড়াপত্তন করেন।
১০৫। বাংলাদেশে কবে C.S.P. গঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৯ই বাংলাদেশ কর্মকমিশন C.S.P.-এবং P.S.C-II গঠিত হয়। পরবর্তী ১৯৭৭ সালের ২৮শে নভেম্বর দু'টি কমিশন একত্রে মিলিত হয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা B.P.S.C গঠিত হয়।
১০৬। বাংলাদেশ কর্মকমিশন বা B.P.S.C এর প্রধান কাজগুলো কি?
উত্তর: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা কর্মকমিশন নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।
- ক্যাডার সার্ভিস বা কোন পদে নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা নির্বাচন কার্য পরিচালনা করা।
- বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা, পদ্ধতি, পদোন্নতি এবং বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরামর্শ দান।
- B. C. S লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা এবং মৌখিক পরীক্ষা পরিচালনা করা।
- সরকারি অফিস বা সংস্থায় নিয়োগকৃত অস্থায়ী কর্মকর্তাদের স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা।
- রাষ্ট্রপতির নিকট কমিশনের বাৎসরিক রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রদান করা।
১০৭। কখন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের সূচনা হয়?
উত্তর: ১৬০১ সালে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের সূচনা হয়।
১০৮। লী কমিশন কি?
উত্তর: ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের অগ্রাধিকার অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সুপারিমশালা প্রণয়নের জন্য ১৯২৩ সালে 'লর্ড লি' নেতৃত্বে যে কমিশন গঠিত হয় তাকেই লী কমিশন নামে অভিহিত করা হয়।
১০৯। উপমহাদেশে সিভিল সার্ভিস বিকাশে কাদের অবদান উল্লেখযোগ্য?
উত্তর: উপমহাদেশে সির্ভিল সার্ভিস বিকাশে ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড ওয়েলেসলি প্রমুখ ইংরেজ ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।
১১০। উপমহাদেশে সিভিল সার্ভিসের ক্রমবিকাশে বিভিন্ন কমিশনের নাম উল্লেখ কর।
উত্তর: ইচিশন কমিশন, আইলিংটন কমিশন, মন্টেগু চেমস ফোর্ড রিপোর্ট, লী কমিশন, সাইমন কমিশন এবং ১৯১৯ ও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিসের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১১১। বাংলাদেশে জেলা ও থানার সংখ্যা কত?
উত্তর: বাংলাদেশে সর্বমোট ৬৪টি জেলা এবং ৫৩০ টি থানা বা উপজেলা আছে।
১১২। কখন উপজেলা পরিষদ বিল বাতিল করা হয়?
উত্তর: ১৯৯২ সালের ২৩ শে নভেম্বর।
১১৩। ইউনিয়ন পরিষদ কিভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৯৭ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, নির্বাচিত সরকার এবং তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়।
১১৪। পৌরসভা কিভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নির্বাচিত কমিশনার ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত কয়েকজন মহিলা কমিশনার সহযোগে পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর।
১১৫। পৌরসভার আয়ের উৎসগুলো কি কি?
উত্তর: পৌরসভার আয়ের উৎসগুলো হলো- ১. গৃহ ও ভূমির উপর ধার্যকৃত কর, ২. জন্মদিন, বিবাহ ও অন্যান্য উৎসব ও বিজ্ঞাপনের উপর প্রদত্ত কর, ৩. বিভিন্ন যানবাহন পরিচালন এবং ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য আদায়কৃত কর, ৪. খেলাধুলা, প্রদর্শনী ও অন্যান্য বিনোদনমূলক বিষয়ের উপর ধার্যকৃত কর, ৫ আমদানি-রপ্তানি দ্রব্যের উপর ধার্যকৃত কর ইত্যাদি।
১১৬। পৌরসভার কার্যাবলি কি কি?
উত্তর: পৌরসভার কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো- ১ জনস্বাস্থ্য রক্ষা, ২. পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালি, ৩. খাদ্য সরবরাহ ও মান নিয়ন্ত্রণ, ৪. গৃহ নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ, ৫. নগর পরিকল্পনা এবং রাজপথ ও সড়ক পথ তৈরি ও সংস্কার সাধন, ৬ পার্ক ও উদ্যান সংরক্ষণ, ৭. জন নিরাপত্তা, ৮. শিক্ষা সংস্কৃতি ও উন্নয়নমূলক কার্যাবলী।
১১৭। ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজের বর্ণনা কর।
উত্তর: ইউনিয়ন পরিষদের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলিগুলো হলো- ১. গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ২. গ্রাম্য কর আদায়, জরিপ কাজে প্রশাসনকে সহায়তা দান, ৩. কৃষি, কুঠির শিল্প, বিনোদন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষামূলক, স্বাস্থ্য ও জন নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
১১৮। সাংবিধানিক আইন কি?
উত্তর: সাংবিধানিক আইন বলতে সেই আইনকে বুঝায় যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের ধরন, কার্যাবলি, ক্ষমতা, সরকারের প্রধান প্রধান বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
১১৯। সাংবিধানিক পদগুলো কি কি?
উত্তর: ১. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; ২. বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, ৩. প্রধান বিচারপতি; ৪. রাষ্ট্রপতি প্রমুখ।
১২০। প্রশাসনিক আইন কি?
উত্তর: প্রশাসন ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনই হলো প্রশাসনিক আইন।
১২১। হস্তান্তরিত আইন কি?
উত্তর: আইনসভা কর্তৃক হস্তান্তরিত ক্ষমতার বলে শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ যে সকল নিয়মাবলি প্রবর্তন করেন সেগুলোকেই অর্পিত আইন বা হস্তান্তরিত আইন বলে আখ্যায়িত করা যায়।
১২২। বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের কয়টি পদ্ধতি রয়েছে?
উত্তর: দু'টি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- (ক) প্রত্যক্ষ নিয়োগ পদ্ধতি ও (খ) পদোন্নতি দ্বারা নিয়োগ পদ্ধতি।
১২৩। কমিশন কাকে বলে?
উত্তর: আদালত বিশেষ ক্ষেত্রে কতিপয় কাজ নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। আইনের ভাষায় একে কমিশন বলে।
১২৪। জেলা প্রশাসন কিভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, থানা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সহকারি কমিশনারবৃন্দ এদের নিয়ে জেলা প্রশাসন গঠিত হয়।
১২৫। জেলা প্রশাসক কার পদমর্যাদা ভোগ করেন?
উত্তর: জেলা প্রশাসক একজন উপসচিবের পদমর্যাদা ভোগ করেন।
১২৬। জেলা প্রশাসকের উল্লেখযোগ্য কাজ কি কি?
উত্তর: ১. আইন শৃঙ্খলা সংরক্ষণ; ২. জন নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখা; ৩. ভূমি কর আদায় এবং ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন; ৪. জেলার বিভিন্ন বিভাগ ও কাজের সমন্বয় সাধন করা, ৫. পারমিট ও লাইসেন্সের অনুমতি প্রদান ও বাতিলকরণ; ৬. প্রেস এবং পাবলিকেশন্স সংক্রান্ত, ৭. দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত, ৮. নির্বাচন ও ত্রাণ সংক্রান্ত প্রভৃতি জেলা প্রশাসকের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
১২৭। বাংলাদেশে বিভাগ কয়টি এবং কি কি?
উত্তর: বাংলাদেশে ৮টি বিভাগ। যথা-
- ঢাকা বিভাগ
- চট্টগ্রাম বিভাগ
- খুলনা বিভাগ
- রাজশাহী বিভাগ
- বরিশাল বিভাগ
- রংপুর বিভাগ
- ময়মনসিংহ বিভাগ
- সিলেট বিভাগ।
১২৮। সরকারি কর্পোরেশন কি?
উত্তর: অর্থনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন সম্বলিত শাসন কর্তৃপক্ষের অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত সরকার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কর্পোরেশন বলে।
১২৯। সংগঠন সম্পর্কিত মতবাদগুলো কি?
উত্তর: সংগঠন সম্পর্কিত মতবাদগুলো হলো- ১. সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ, ২. নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ, ৩. আধুনিক মতবাদ।
