নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব কি? রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার উপায় সমুহ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় 
মাস্টার্স শেষ পর্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয় কোড : ৩১১৯০৯ 

নিরাপত্তা অধ্যয়ন (Security Studies)
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নবলি

প্রশ্নঃ নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

অথবা, 

নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিষয়বস্তু সম্পর্কে লিখ।


ভূমিকাঃ নিরাপত্তা অধ্যয়নের পরিধি বা বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিরাপত্তা অধ্যয়ন তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক এবং বাস্তব জগতের নিরাপত্তা সমস্যার সমাধানে ও দিক-নির্দেশনায় জ্ঞানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব
নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব । রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার উপায়

নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিষয়বস্তু

নিম্নে নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো:

১. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব 

নিরাপত্তা অধ্যয়ন রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নিয়ে আলোচনা করে। কিভাবে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে তা নিয়ে নিরাপত্তা অধ্যয়ন আলোচনা করে।

২. দ্বন্দ্ব কৌশল

নিরাপত্তা অধ্যয়ন দ্বন্দ্ব কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের খেলা নিয়ে নিরাপত্তা অধ্যয়ন আলোচনা করে। তাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের অধিকার ক্ষুন্ন হয়।

৩. প্রতিরোধ ব্যবস্থা

নিরাপত্তা অধ্যয়ন প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের প্রতিরোধ কৌশল বা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে এতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র Global Village-এ টিকে থাকতে পারে।

৪. বাণিজ্য নীতি

নিরাপত্তা অধ্যয়ন রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য নীতি নিয়ে আলোচনা করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি তৈরি হয়। তাতে বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহ লাভবান হয় কিন্তু ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং নিরাপত্তা অধ্যয়ন প্রত্যেক রাষ্ট্রকে বাণিজ্য কৌশল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে।

৫. সমঝোতা

নিরাপত্তা অধ্যয়ন রাষ্ট্রসমূহকে সমঝোতার শিক্ষা দেয়। ফলে রাষ্ট্রসমূহ গণতান্ত্রিক হয়ে উঠে আর গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। পৃথিবীতে তখন শান্তি বিরাজ করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নিরাপত্তা অধ্যয়ন পৃথিবীতে যুদ্ধ, অশান্তি ও সংঘর্ষ প্রতিরোধ করে। প্রতিটি রাষ্ট্রকে শান্তি বজায় রাখার শিক্ষা প্রদান করে। তাছাড়া নিরাপত্তা অধ্যয়ন বৈশ্বিক, রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভূরাজনৈতিক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


প্রশ্নঃ নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব লিখ।

অথবা 

নিরাপত্তা অধ্যয়নের তাৎপর্য লিখ।

ভূমিকাঃ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিল। সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে নিরাপত্তা ভাবনা ও এর মাধ্যমের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক উপাদান জড়িত। সুতরাং নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব

নিম্নে নিরাপত্তা অধায়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১. বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা 

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা একুশ শতকের বিশ্বায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের সাথে মানুষের এতো মিথস্ক্রিয়া বেড়েছে যে বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

২. মানবিক নিরাপত্তা

আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে মানবিক নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় নিরাপত্তাকে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রকে আরো ক্ষমতা চর্চার সুযোগ করে দিয়ে মানবিক নিরাপত্তা নিয়ে যে খেলা চলছে, এমন অবস্থায় মানবিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিকল্প নেই।

৩. জ্বালানি নিরাপত্তা

জ্বালানির জন্য পৃথিবীর কেন্দ্র ও প্রান্তের দেশের মধ্যে নির্ভরশীলতা নতুন বিষয় নয়। সুতরাং জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির বহুমাত্রিক আলোচনা নিরাপত্তা অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়। তাই জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

৪. গৃহযুদ্ধ প্রতিরোধ

ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, ঔপনিবেশিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যকার গৃহযুদ্ধ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

৫. লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ

আধুনিক বৈশ্বিক উন্নয়ন সূচকে লিঙ্গীয় সমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি রাষ্ট্র কখনই জাতীয় নিরাপত্তার জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না, যদি কিনা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে লিঙ্গীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে। সুতরাং নিরাপত্তা অধ্যয়নের জ্ঞান দিয়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা যায়।

৬. বৈশ্বিক পান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি

বৈশ্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা নিরাপত্তা অধ্যয়নের বহুমাত্রিক আন দিয়ে বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় চিন্তাবিদেরা বৈশ্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একুশ শতকের বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রক্ষায় নিরাপত্তা অধ্যয়নের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিক বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানকল্পে নিরাপত্তা অধ্যয়ন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা অধ্যয়নের বিকল্প নেই।


প্রশ্নঃ রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা কিভাবে দূর করা যায়?

অথবা, 

রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার উপায় সম্পর্কে লিখ।


ভূমিকাঃ একুশ শতকের বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় ছোট-বড়, শক্তিশালী, দুর্বল প্রায় সকল রাষ্ট্রই আজ নিরাপত্তার হুমকিতে ভুগছে। পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মারণাস্ত্রের ব্যবহার, অর্থনৈতিক অগ্রাসন, সুপেয় পানির অভাব, মরণ ব্যাধির বিস্তার প্রভৃতি রাষ্ট্র নিরাপত্তার হুমকিতে রয়েছে।

রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার উপায়

নিম্নে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার উপায় আলোচনা করা হলো:

১. জাতিসংঘকে কার্যকর করা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। মূলত উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর অত্যধিক কার্বন নিঃসরণ, অস্ত্র উৎপাদন, সামরিক আগ্রাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক অবরোধ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সুতরাং বাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘকে আরো কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

২. জ্বালানি সংকট নিরসন

জ্বালানি সংকট এফটি দেশের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। জ্বালানি ছাড়া একটি দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জ্বালানি সম্পদের অপর্যাপ্ততা তাদের নিরাপত্তাকে রীতিমতো ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাই জ্বালানি সংকটের সাথে যেকোনো দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য জ্বালানি সংকট নিরসন অতীব জরুরি।

৩. খাদ্য সংকট নিরসন

খাদ্য সংকট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তাকে একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বকে নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হবে। তাই কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং সে সাথে উফশী জাতের ফসলের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে এবং কৃষি উপকরণের দামও কমাতে হবে।

৪. বিশ্বায়নের ফুফল প্রতিরোধ

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। ফলে এ সকল দেশের জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিল্পোন্নত দেশগুলো যদি তাদের অর্থনৈতিক আগ্রাসন বাদ দিয়ে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে এবং এ সকল দেশের সরকারকে পরামর্শ দান করে, তাহলে একক দেশ ও জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

৫. দরিদ্র ও বেকারত্ব হ্রাস

বিশ্বের অধিকাংশ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী দরিদ্র, যারা অনাহারে, অর্ধাহারে দিন যাপন করে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বে বেকারত্বের হারও অনেক। সীমাহীন দরিদ্র ও বেকারত্ব জন্ম দিয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা মানবিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় বিশ্বের মানব জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পৃথিবীকে দরিদ্র ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে।

৬. মরণব্যাধির বিস্তার রোধ

বিশ্বব্যাপী এইডস (AIDS), ইবোলা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, হেপাটাইটিস ও জেপাটাইটিস-C ভাইরাস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্ব মানবতাকে বাঁচতে হলে এসব মরণব্যাধির বিস্তার রোধে ভার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে WHO-কে আরো সচেতনভাবে তার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি, খাদ্য, পানি, দারিদ্র্য, সম্পদের অসম বণ্টন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, বেকারত্ব, সুশাসনের অভাব, লিঙ্গ বৈষম্য, সাহায্য নির্ভরতা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আজ পৃথিবীর সকল দেশ ও জনগণকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ সফল সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধানই কেবল বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url