প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স: (মৌখিক পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য প্রশ্নোত্তর)
(অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)
____________________°___________________
প্রিয় পাঠক এবং মাস্টার্স প্রথম পর্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মাস্টার্স প্রথম পর্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের, "পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস" "(মধ্যযুগ) গির্জা ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব, সেন্ট অগাস্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, দান্তে, মার্সিলিও পরিষদ আন্দোলন" এই অধ্যায় থেকে অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে। আমি মনেকরি আপনারা সবাই জানেন যে, মাস্টার্স প্রথম পর্ব পরীক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস বইয়ের (ক- বিভাগ) থেকে ১০ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা সাধারন জ্ঞান থাকে। তাই আজ আমি আপনাদের কাছে উক্ত বিষয়ের গির্জা ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব, সেন্ট অগাস্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, দান্তে, মার্সিলিও পরিষদ আন্দোলন অধ্যায়ের অতি গুরুত্বপুর্ণ বেশকিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলো তুলে ধরলাম। ভালো ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে আশাকরি আপনারা সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ভাইভা পরীক্ষার সাজেশন। প্রাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস (মধ্যযুগ)
মধ্যযুগ: (গির্জা ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব, সেন্ট অগাস্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, দান্তে, মার্সিলিও পরিষদ আন্দোলন)
১. মধ্যযুগের সময়সীমা নির্ধারণ কর?
উত্তরঃ ঐতিহাসিকদের মতে, রোম সাম্রাজ্যের পতনের সময় থেকে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে মধ্যযুগের শুরু এবং ষোড়শ শতাব্দীতে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব হওয়া পর্যন্ত তা বিস্তৃত ছিল।
২. মধ্যযুগকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?
উত্তরঃ মধ্যযুগকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- প্রাচীন মধ্যযুগ ও পরবর্তী মধ্যযুগ।
৩. কয়েকজন মধ্যযুগের লেখকের নাম বল?
উত্তরঃ সেন্ট টমাস, একুইনাস, সেন্ট অগাস্টিন, মার্সিলিও, দান্তে প্রমুখ।
৪. মধ্যযুগে দার্শনিকদের নামের আগে সেন্ট বলা হয় কেন?
উত্তরঃ সেন্ট অর্থ ধর্মযাজক। মধ্যযুগে ধর্মের ব্যাপক প্রভাব ছিল। কাজেই এ যুগে দার্শনিকদের সম্মানার্থে তাদের নামের পূর্বে সেন্ট সম্মানসূচক পদবী ব্যবহার করা হতো।
৫. যুগকে অরাজনৈতিক যুগ বলা হয় কেন?
উত্তরঃ এ যুগের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মতাদর্শ ধর্মীয় বিশ্বাসের রূপ ও প্রকৃতি দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। তাই এ যুগকে অরাজনৈতিক যুগ বলা হয়।
৬. মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর?
উত্তরঃ মধ্যযুগে রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- (ক) খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য, (খ) গির্জা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বিরোধ, (গ) পোপ ও সম্রাটের বন্ধ, (ঘ) সামন্ততন্ত্রের আবির্ভাব, (ঙ) বিশ্বজনীনতাবাদ, (চ) প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র ইত্যাদি।
গির্জা ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব
৭. গির্জা ও রাষ্ট্রের প্রধানকে কি বলা হয়?
উত্তরঃ গির্জার প্রধানকে পোপ এবং রাষ্ট্রের প্রধানকে সম্রাট বলা হয়।
৮. পোপ এবং সম্রাটের দ্বন্দ্ব কি?
উত্তরঃ পোপ ও সম্রাটের দ্বন্দ্ব হলো পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব।
৯. পোপপন্থী ও সম্রাটপন্থী কাদের বলা হয়?
উত্তরঃ পোপের প্রাধান্যের দাবিকে যারা সমর্থন করেন তাদেরকে বলা হয় পোপপন্থী এবং সম্রাটের দাবিকে যারা সমর্থন করেন তাদেরকে বলা হয় সম্রাটপন্থী।
১০. পোপপন্থী দার্শনিক কারা?
উত্তরঃ পোপপন্থী দার্শনিক শিবিরে যাদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে তারা হচ্ছেন- আপ প্রথম নিকোলাস, পোপ সপ্তম গ্রেগরী, সেন্ট টমাস একুইনাস, পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট, ইজিডিয়াস কলোনা প্রমুখ।
১১. সম্রাটপন্থী দার্শনিক কারা?
উত্তরঃ সম্রাটপন্থীদের মধ্যে যাদের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয় তাঁরা হচ্ছেন, সম্রাট হেনরী, সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক, এলিঘিয়ারী ডান্টে, পাডুয়ার মার্সিলিও এবং উইলিয়াম অব ওকাম।
১২. পোপপন্থী ও সম্রাটপন্থীদের দাবির সমর্থনে কমপক্ষে কতখানি পুস্তক রচিত হয়?
উত্তরঃ ১০৫২ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১১১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অব্দ শতাব্দীতে পোপপন্থী ও সম্রাটপন্থীদের দাবির সমর্থনে কমপক্ষে ১১৫ খানি পৃথক পৃথক রচনা প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে ৫০ খানি সম্রাটের পক্ষে এবং ৬৫ খানি পোপের পক্ষে।
সেন্ট অগাস্টিন
১৩. সেন্ট অগাস্টিন কোথায় এবং কখন জন্ম গ্রহণ করেন?
উত্তরঃ সেন্ট অগাস্টিন ৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার ট্যাগাস্টি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
১৪. অগাস্টিনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ দি সিটি অব গড়।
১৫. অগাস্টিনের মতে, মানুষ কয়টি নগরীর বাসিন্দা?
উত্তরঃ দু'টি নগরের নাগরিক যথা- (ক) দৈহিক দিক থেকে মানুষ জগতের নাগরিক এবং (খ) আত্মার দিক থেকে স্বর্গীয় নগরের নাগরিক।
১৬. সেন্ট অগাস্টিন কোন্ ধর্মাবলম্বী ছিলেন?
উত্তরঃ সেন্ট অগাস্টিন ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
১৭. অগাস্টিনের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বিষয় কি ছিল?
উত্তরঃ সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল গির্জার প্রধান্যকে সর্বত্র প্রসারিত করা।
১৮. রাষ্ট্র সম্পর্কে অগাস্টিনের মতামত কি?
উত্তরঃ সেন্ট অগাস্টিনের মতে রাষ্ট্র হলো পাপের ফলস্বরূপ। মানুষের শাস্তির ফলস্বরূপ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে।
১৯. সেন্ট অগাস্টিনের মতে ন্যায় বিচার কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?
উত্তরঃ সেন্ট অগাস্টিনের মতে, যদি রাষ্ট্র ঈশ্বরের আরাধনা এবং প্রত্যেক নাগরিক আত্মার অনুশাসন মেনে চলে তবেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
২০. দাস প্রথা সম্পর্কে অগাস্টিনের বক্তব্য কি?
উত্তরঃ অগাস্টিনের মতে দাস প্রথা হলো পাপের ফলস্বরূপ। এ প্রথা মানুষের পাপ থেকে উৎসারিত।
আরও পড়ুনঃ প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স । রাষ্ট্রবিজ্ঞান। অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস (প্রাচীন যুগ)
২১. অগাস্টিনের 'বিশ্ব শাস্তি' কি?
উত্তরঃ যে ব্যবস্থায় সকল মানুষ অভিন্ন ঈশ্বর প্রেমের বন্ধন সূত্রে পরস্পর সক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ সেটিই হচ্ছে অগাস্টিনের 'বিশ্বশান্তি।'
২২. সেন্ট অগাস্টিন কোন্ কোন্ ধর্মে দীক্ষিত হন?
উত্তরঃ প্রথম জীবনে অগাস্টিন ম্যানিকিয়ানিজম ধর্ম মতে বিশ্বাসী ছিলেন, এরপর নব্য প্লেটোবাদে দীক্ষিত হন এবং সর্বশেষ খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
সেন্ট টমাস একুইনাস
২৩. সেন্ট টমাস একুইনাস কোথায় এবং কখন জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ তিনি ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে নেপলসের অন্তর্গত রোক্কা সিকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
২৪. তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো কি কি?
উত্তরঃ তাঁর রচনাবলীর মধ্যে- (ক) কমেন্টারিজ অন দি পলিটিক্স ও (খ) সাম্মা থিউলোজিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২৫. একুইনাসের সময়ে আধ্যাত্মিক ও পার্থিব জগতের শাসক কে ছিলেন?
উত্তরঃ
২৬. একুইনাস কার দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন?
উত্তরঃ এরিস্টটলের দর্শন দ্বারা।
২৭. দাসদের সম্বন্ধে এরিস্টটল এবং একুইনাসের ধারণার পার্থক্য কি?
উত্তরঃ এরিস্টটল প্রকৃতির অসমতার উপর ভিত্তি করে দাস প্রথার প্রতি সমর্থন দান করেছিলেন। কিন্তু একুইনাসের মতে, সৈনিকেরা যখন সাহসিকতার সহিত যুদ্ধ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করবে তখনই তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে।
২৮. একুইনাস রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব কার উপর অর্পণ করতে ইচ্ছুক?
উত্তরঃ তিনি একজন লোকায়ত শাসকের হাতে অর্পণ করতে ইচ্ছুক।
২৯. একুইনাস কিভাবে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেন?
উত্তরঃ একুইনাস এরিস্টটলের ন্যায় মিশ্র প্রকৃতির সরকারের স্বপক্ষে মত প্রদান করেন। এরিস্টটলের ন্যায় একুইনাসও সংখ্যা ও উদ্দেশ্য নীতির উপর ভিত্তি করে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে সচেষ্ট হন। এরিস্টটলের মতো তিনিও উত্তম সরকার এবং বিকৃত সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।
৩০. একুইনাসের মতে, আইন কি?
উত্তরঃ একুইনাসের মতে, আইন হচ্ছে বিবেক বুদ্ধির প্রত্যাদেশ যার উদ্দেশ্য সাধারণ কল্যাণ সাধন।
৩১. একুইনাস আইনকে কয়ভাগে ভাগ করেছেন?
উত্তরঃ চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (ক) শ্বাশত আইন, (খ) প্রাকৃতিক আইন, (গ) ঐশ্বরিক আইন ও (ঘ) মানবিক আইন।।
৩২. একুইনাসের রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তরঃ একুইনাসের রাষ্ট্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্ট্রীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে গ্রিক দর্শনের সমন্বয় সাধন করা।।
৩৩. একুইনাসের মতে রাষ্ট্র কি?
উত্তরঃ সমাজে একাধিক শ্রেণীর পারস্পরিক সংঘাত মীমাংসার জন্য একটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন। একুইনাসের মতে এ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই হলো রাষ্ট্র।।
৩৪ একুইনাসের মতে উত্তম সরকার কি?
উত্তরঃ একুইনাসের মতে রাজতন্ত্র হলো উত্তম সরকার ব্যবস্থা।
৩৫. একুইনাসকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয় কেন?
উত্তরঃ একুইনাস এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তাকে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় স্থান দেন এবং এরিস্টটলের যুক্তিবাদী দর্শনের সাথে খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসের সমন্বয় সাধন করে এরিস্টটলের চিন্তাধারার পুনরজ্জীবন করেন। এজন্যে একুইনাসকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয়।
দান্তে
৩৬. দান্তে কে?
উত্তরঃ এলিঘিয়েরী দান্তে ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম ক্ষণজন্মা দার্শনিক। তিনি ছিলেন একাধারে সৈনিক, কূটনৈতিক, ভাষাবিদ, তাত্ত্বিক, কবি ও দার্শনিক।
৩৭. দান্তে কোথায়, কখন জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ এলিঘিয়েরী দান্তে ইতালির অন্তর্গত ফ্লোরেন্স শহর ১২৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩৮. দান্তের বিখ্যাত রাজনৈতিক গ্রন্থের নাম কি?
উত্তরঃ দান্তের বিখ্যাত রাজনৈতিক গ্রন্থের নাম 'ডি মনার্কিয়া' (De Monarchia)।
৩৯. 'ডি মনার্কিয়া' কখন রচিত হয়?
উত্তরঃ প্রশ্ন: 'ডি মনার্কিয়া' সঠিক রচনাকাল অজ্ঞাত। তবে অনেকের মতে ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির সপ্তম হেনরী ইতালির বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করেন সে সময় দান্তের এ গ্রন্থটি রচিত হয়।
৪০. 'ডি মর্নাকিয়া' গ্রন্থে তিনি কি অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন?
উত্তরঃ দান্তে 'ডি মর্নাকিয়ার' মাধ্যমে রাজতন্ত্রের কথা কল্পনা করেছেন। তার প্রস্তাবিত রাজতন্ত্র মূলত একটি বিশ্বজনীন আদর্শ সাম্রাজ্য এবং এ সাম্রাজ্যের যাবতীয় জাগতিক ব্যাপারে একজন মাত্র শাসকের কর্তৃত্ব বলবৎ থাকবে।
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক জোট কি? বাংলাদেশের জোটবদ্ধতার রাজনীতি সম্পর্কে আলোচনা
৪১. দান্তের রাষ্ট্র দর্শনের মূল বৈশিষ্ট কি ছিল?
উত্তরঃ দান্তের রাষ্ট্র দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, তিনি ইতালির তথা সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশের অবসান ঘটানোর জন্য পঞ্চম শতকের রোম সাম্রাজ্যের অনুকরণে একটি বিশ্বজনীন সাম্রাজ্য গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
৪২. রোম সাম্রাজ্য সম্পর্কে দান্তের মন্তব্য কি ছিল?
উত্তরঃ তাঁর মতে, রোম সাম্রাজ্য নিয়তির বিধানে গড়ে উঠেছিল এবং তার ক্ষমতার উৎস ছিল যথার্থই ঐশ্বরিক। এ সাম্রাজ্যের পিছনে বিধাতার অনুমোদন ছিল বলেই তা উন্নতি ও অগ্রগতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ। করতে সক্ষম হয়েছিল।
৪৩. দান্তের বিশ্ব সাম্রাজ্য মতবাদ কি?
উত্তরঃ দান্তের মতে, বিশ্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের প্রকৃত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং মানুষ শাস্তি পেতে পারে বিশ্বজনীন রাষ্ট্র স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র এবং এখানে মানুষ পায় সার্থকতার আস্বাদ।
৪৪. দান্তের বিশ্ব সাম্রাজ্যের কি কি গুণ রয়েছে?
উত্তরঃ দান্তের মতে দ্বন্দ্ব-কলহের অবসান ঘটিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বিশ্বজনীন আদর্শ সাম্রাজ্য। এছাড়া এ সাম্রাজ্যের মাধ্যমে মানুষের যথার্থ কল্যাণ সাধিত হয়, সর্বোচ্চ পরিমাণ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্যক্তির প্রকৃত স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।।
৪৫. পোপ ও সম্রাটের সম্পর্কে দান্তে কি বলেছেন?
উত্তরঃ দান্তে বলেন, সাম্রাজ্যের পার্থিব ব্যাপারে পোপের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই। তাঁর মতে, পার্থিব জীবনে সম্রাট এবং আধ্যাত্মিক জীবনে কর্তৃত্ব করবে পোপ।।
৪৬. দান্তের দর্শনের মূল চিন্তাধারা কি ছিল?
উত্তরঃ দান্তের দর্শনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা, এক মানবতাবাদী একটি বিশ্বজনীন আদর্শ সাম্রাজ্য গঠন করা।
৪৭. কি কারণে দান্তে নির্বাসিত হন?
উত্তরঃ তাঁর রাজনৈতিক মতবাদ ফ্লোরেন্সের শাসক কর্তৃপক্ষের স্বার্থের অনুকূল না হওয়ায় তাঁকে নির্বাসন দেয়া হয়।।
৪৮. দান্তে কোথায়, কখন মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তরঃ এভেরেনা নামক স্থানে নির্বাসিত জীবনযাপন কালে ১৩২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মার্সিলিও অব পাড়ুয়া
৪৯. মার্সিলিও কে?
উত্তরঃ তিনি ছিলেন একাধারে চিকিৎসক, যাজক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সৈনিক, আইনবিদ ও রাজনীতিবিদ।
৫০. মার্সিলিও কখন, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ মার্সিলিও ১২৭০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির অন্তর্গত পাড়ুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
৫১. মার্সিলিওর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কি?
উত্তরঃ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ডিফেন্সর প্যাসিস (Defensor Pacis)। গ্রন্থখানি ১৩২৪ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়।
৫২. মার্সিলিওর রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান উপকরণ কি কি?
উত্তরঃ রাষ্ট্র আইন, আইন প্রণেতা, গির্জার উৎপত্তি, ভূমিকা, রাষ্ট্রের সঙ্গে গির্জার সম্পর্ক, সাধারণ পরিষদ ইত্যাদি ছিল মার্সিলিওর রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান উপকরণ।
৫৩. চার্চের সম্পত্তি সম্পর্কে মার্সিলিওর মন্তব্য কি ছিল?
উত্তরঃ মার্সিলিওর মতে চার্চের কোন সম্পত্তি থাকা উচিত নয়।
৫৪. পোপের কার্যের ব্যাপারে মার্সিলিওর বক্তব্য কি?
উত্তরঃ মার্সিলিওর মতে, পোপের একমাত্র কাজ হলো ধর্মের বাণী প্রচার করা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করা। আত্মার মুক্তি সাধনই তাঁদের প্রধান কাজ।
৫৫. মার্সিলিওর মতে কিভাবে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে?
উত্তরঃ মার্সিলিওর মতে, মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদার সন্তোষজনক পরিপূরণের জন্য রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।
৫৫. মার্সিলিওর মতে আইন কাকে বলে?
উত্তরঃ মার্সিলিওর মতে, আইন হচ্ছে এমন বিধি-বিধান যা সাধারণ প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম, যা বিচারবুদ্ধি প্রসূত, যা সর্বজন স্বীকৃত এবং যার পেছনে রয়েছে ক্ষমতার সমর্থন।
৫৬. মার্সিলিও আইনকে কয় ভাগে বিভক্ত করেছেন?
উত্তরঃ 'তাঁর মতে আইন মূলত দু প্রকার। যথা- ১. দৈব আইন ও ২. মানবিক আইন।
৫৭. মার্সিলিও কোন্ পদ্ধতির সরকারকে উত্তম বলেছেন?
উত্তরঃ তিনি গণতন্ত্র অপেক্ষা রাজতন্ত্রকে অধিক শ্রেয় মনে করেন। তবে তাঁর মতে, রাজতন্ত্র বংশানুক্রমিক না হয়ে নির্বাচিত হবে।
৫৮. মার্সিলিওর মতে পুরোহিতের কাজ কি হওয়া উচিত?
উত্তরঃ তাঁর মতে, পুরোহিতের কাজ হলো নরকের ভীতি প্রদর্শন করে সমাজের পথভ্রষ্ট ও অবাধ্য লোকদেরকে নিয়ন্ত্রণাধীনে রাখা এবং সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও বিচারকদের কাজে সহায়তা করা।
৫৯. 'ডিফেন্সর প্যাসিস' গ্রন্থটি কয়টি খণ্ডে বিভক্ত?
উত্তরঃ 'ডিফেন্সর প্যাসিস' গ্রন্থটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত।
৬০. রাষ্ট্রচিন্তায় মার্সিলিওর অবদান কি?
উত্তরঃ তিনি রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে বা চার্চের প্রভাব থেকে মুক্ত করে একক সত্তায় প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুনঃ ভোটকেন্দ্রে অবস্থানকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ভোটারের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা
৬১. দার্শনিক মার্সিলিও কখন পরলোক গমন করেন?
উত্তরঃ দার্শনিক মার্সিলিও ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন?
৬২. পরিষদ আন্দোলন কি?
উত্তরঃ পরিষদ আন্দোলন শুধু একটি আন্দোলনই নয়, এটি একটি তত্ত্বও বটে। পঞ্চদশ শতাব্দীর এ আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সকলে সমান এবং কেউ উঁচু বা নিচু নয়, পোপ এবং সাধারণ যাজকদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না সবাই ঈশ্বরের সেবক।
৬৪. কন্সিলিয়ার বা পরিষদ আন্দোলনের সময়কার কয়েকজন মনীষীর নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ 'কন্সিলিয়ার' আন্দোলনের সময়কার প্রখ্যাত মনীষীদের মধ্যে জন গার্সন (১৩৬৩-১৪২৯), নিকোলাস অব কুসা (১৪০১-১৪৬৪) এবং সিলভিয়াস (১৪০৫-১৪৬৪) প্রমুখ ব্যক্তির নাম উল্লেখযোগ্য।
৬৫. কন্সিলিয়ান আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কি ছিল?
উত্তরঃ কন্সিলিয়ার আন্দোলনের দু'টি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল। যথা- ১. মহা অন্তবিরোধের নিরসন করা এবং ২. গির্জার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন সাধন করে পোপের স্বেচ্ছাচারিতাকে খর্ব করা।
৬৬. কিভাবে পরিষদ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে?
উত্তরঃ মধ্যযুগের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো পরিষদ আন্দোলন। যদিও পঞ্চাদশ শতাব্দীতে এ আন্দোলন যথেষ্ট ব্যাপকতা লাভ করে এবং গণ আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে তথাপি এর সূত্রপাত হয় বহু পূর্বে জন অব প্যারিস, মার্সিলিও অব পাড়ুয়া ও উইলিয়াম অব ওকামের রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে। তাঁরা প্রত্যেকেই অনুভব করেন যে, ধর্মীয় পরিমণ্ডলের পূত-পবিত্র আবহাওয়া গড়ে তুলতে এবং ইউরোপের পার্থিব জীবনে সার্বিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পোপের কর্তৃত্বের অবসান ঘটানো। প্রথম প্রয়োজনের বাস্তব ফলশ্রুতি হিসেবেই এ চিন্তাবিদগণ সাধারণ পরিষদ তত্ত্বের উদ্বোধন করেন এবং গির্জার অভ্যন্তরীণ সকল ব্যাপারে চূড়ান্ত ক্ষমতা সাধারণ পরিষদরে হাতে অর্পণ করার পরামর্শ দেন।।
৬৭. কাউন্সিল কখন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম পিসা নামক স্থানে একটি কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
৬৮. কন্সটান্স কাউন্সিল কখন, কোথায় আহ্বান করা হয়?
উত্তরঃ পিসা কাউন্সিলের অন্তর্বিরোধের কারণে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে কন্সটান্স কাউন্সিল আহ্বান করা হয় এবং এ কাউন্সিল অধিবেশন ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত চালু থাকে।
৬৯. ব্যাসেল কাউন্সিল কি?
উত্তরঃ কন্সটান্স কাউন্সিলের ব্যর্থতার ১৩ বৎসর পর ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্যাসেল নামক স্থানে পরিষদের তৃতীয় এবং শেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় তা ব্যাসেল কাউন্সিল নামে পরিচিত।
৭০. ব্যাসেল অধিবেশন কত সাল পর্যন্ত চালু থাকে?
উত্তরঃ ব্যাসল অধিবেশন ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু থাকে।।
৭১. ব্যাসেল কাউন্সিলে কোন্ কোন্ দেশ অংশগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ব্যাসেল কাউন্সিলে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ অংশগ্রহণ করেন।
৭২. ব্যাসেল কাউন্সিলের প্রধান নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ নিকোলাস অব কুসা ছিলেন ব্যাসেল কাউন্সিলের প্রধান নেতা।
৭৩. নিকোলাসের বড় অবদান কি?
উত্তরঃ নিকোলাসের অন্যতম বড় অবদান হলো এই যে, তিনি গির্জা ও রাষ্ট্রের শাসন কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন।
৭৪. ব্যাসেল কাউন্সিল ব্যর্থতার কারণ কি?
উত্তরঃ ব্যাসেল কাউন্সিল ব্যর্থতার অন্যতম একটি কারণ হলো এই যে, এ আন্দোলন মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তা কোন গণভিত্তিক আন্দোলনে পরিণত হতে পারেনি। কিন্তু কাউন্সিলকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন ছিল সে নেতৃত্ব কেউ দিতে পারেনি। ফলে কাউন্সিল ভেঙ্গে যায়।।
৭৫. পরিষদ আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়?
উত্তরঃ তৎকালীন কায়েমী স্বার্থের চাপে পরিষদ আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৭৬. পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলাফল কি হয়েছিল?
উত্তরঃ পরিষদ আন্দোলন ব্যর্থতার ফলে পোপের স্বৈরাচার আরও বৃদ্ধি পায় এবং গণতন্ত্র ও নিয়মতন্ত্রবাদের নব জাগ্রত অনুভূতির প্রতি তা বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দেয়।
৭৭. সংস্কার আন্দোলনের প্রবক্তা কে?
উত্তরঃ মার্টিন লুথার ছিলেন সংস্কার আন্দোলনের প্রবক্তা।।
৭৮. মার্টিন লুথার কেন সংস্কার আন্দোলন করেন?
উত্তরঃ পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে গির্জার অভ্যন্তরীণ জীবনে যে পরিবর্তন অসম্পন্ন থেকে যায় উত্তরকালে সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে মার্টিন লুথার সেটিই সম্পন্ন করেন।
প্রিয় পাঠক এবং শিক্ষার্থী বন্ধুরা, উপরোক্ত বিষয়ের উপর আলোচনা সম্পর্কে আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে পারেন এবং আমাদের ফেইসবুক পেইজেও যুক্ত হতে পারন। পরবর্তীতে আরও আপডেট সাধারণ জ্ঞান এবং একাডেমিক শিক্ষামূলক সম্পর্কে তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।