মুক্তিযুদ্ধের গল্প "ভাস্কর্য"। Bangla Choto Golpo
লেখকঃ মনি হায়দার
গল্পের নামঃ ভাস্কর্য
দারুণ বিরক্ত আরমান।
খামোকা সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আর কেবলই সময় নষ্ট হয়, নিজের মনটাও ভয়ানক খারাপ। সীমাহীন হতাশা আর ব্যথায় আরমান হতবিহ্বল। সকাল থেকে ঢাকা শহর বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দি ময়দান, রমনা পার্ক ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত আরমান। না কোনো পাখি কিংবা ফুল দেখতে চায় নি। একটা বিরাট ভাস্কর্য দেখতে চেয়েছে মাত্র। বিষয়টা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মতো আর কি!
নবম শ্রেণীতে পড়ে আরমান। মেধাবী ছাত্র সে। মাঝে মাঝে কবিতা লেখে। অবশ্য কেউ জানে না ওর কবিতার কথা। 'কবিতা লিখি' বলতে লজ্জা পায় আরমান। বাড়ির কাছে বিশাল মধুমতী নদী। প্রতিদিন বিকেলে আরমান এবং ওর বন্ধুরা নদীর পাড়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে ওদের বাবারা থাকে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের বাবার হাত ধরে হাঁটে। মৃদুলার বাবা ওসমান চাচা আরমানকে খুব আদর করেন।
![]() |
মুক্তিযুদ্ধের ছোট গল্প "ভাস্কর্য" |
আরমানের কাছে ওসমান চাচা একজন বিস্ময়কর মানুষ। মানুষটার মুখে সব সময় একটা স্নিগ্ধ হাসি লেগেই থাকে। দরাজ কণ্ঠে চমৎকার গান গায় ওসমান চাচা। গানের সুরে কি যে আকর্ষণ আছে যা আরমানকে মুগ্ধ করে।
চাচা একটা গান শোনান। মধুমতী নদীর পাড়ে সবাই একটা গালিচায় গোল হয়ে বসলে প্রস্তাবটা করে আরমান।
হাসে ওসমান চাচা- তুই আমার কণ্ঠে গান শুনতে চাস কেনো?
ভালো লাগে যে।
আচ্ছা তুই যখন শুনতে চেয়েছিস, তখন তো শোনাতেই হয়।
সবাই কান পাতে। এবার ওসমান চাচা গান শোনাবেন। তার গান
কারো না কারো ভালো লাগে।
গ্রামে ছেলে বুড়ো সবাই ওসমান চাচার গানের দারুণ ভক্ত।
নাও ছাড়িযে দে রে তোরা নাও ছাড়িযে দে ওসমান চাচার গান মধুমতির ঢেউয়ে নতুন গতি সঞ্চার করে। ওরা মুগ্ধ হয়ে শোনে। প্রাণ ভরে যায়।
ওসমান চাচা হাঁটার সময় একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন। তাঁর ডান পায়ের গোড়ালি অর্ধেকই নেই।
ওসমান চাচা! গান শেষে ডাকে আশিষ।
বলো।
তুমি খুঁড়িযে হাঁটো কেনো?
পায়ের গোড়ালিটা কেটে ফেলেছি যে।
নিজেই কেটেছো? চোখ বড়ো করে জানতে চায় গীতি।
না রে না। হাসপাতালের ডাক্তার কেটেছে।
কেনো? তোমার পায়ে কাঁটা বিঁধেছিলো? প্রশ্ন ছোঁড়ে অরণ্য।
কাঁটা! হ্যাঁ কাঁটাই বলতে পারো। তবে অন্যরকম কাঁটা।
রেগে গিয়ে গীতি বলে- ওসমান চাচা, তুমি কথা সোজাসুজি বলো, কাঁটা কেনো তোমার পায়ে বিঁধেছিলো?
আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প: ডানপিটে। মনি হায়দার
যুদ্ধে গিয়েছিলাম একাত্তরে। যখন শত্রুর একটা গুলি আমার ডান পায়ের গোড়ালিতে ঢোকে তখন আমি পড়ে গেলাম। প্রচুর রক্তপাত আরম্ভহলো। আমার সহযোদ্ধারা আমাকে কাঁধে নিয়ে সরিয়ে আনলো। তারপর সোজা হাসপাতালে।
তুমি গণ্ডোগোলের বছরের কথা বলছো?
মৃদুলালের কথায় ওসমান চাচার চোয়াল শক্ত হলো। মুখের রেখায় কাঠিন্য। কঠিন চোখে তাকালেন মৃদুলালের দিকে- গণ্ডোগোলের বছর বললে কেনো?
অনেকে বলে যে!
কে বলে? কেনো বলে? আর কোনোদিন তোমরা এই শব্দ বলবে না।
সেই সময়টা ছিলো বাঙালিদের, বাংলাদেশের মানুষের জন্যে মহা মূল্যবান সময়। যা একটি জাতির জন্যে মহা গৌরবের। সম্মানের। সব জাতি সে সম্মান অর্জন করতে পারে না। আমরা পেরেছিলাম ৭১ এ।
আরমান জিজ্ঞেস করে, তুমি নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছো?
হ্যাঁ, স্বাধীনতার জন্যে মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের এই দেশ থেকে প্রায় বারো'শ মাইল দূরে, ভিন্ন ভাষার একদল হার্মাদ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির অস্তিত্বকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো। আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো। এ সবেরই প্রতিবাদে মানুষ নামে রাজপথে। তারই পথ ধরে
৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে বর্বরেরা ঢাকায় ঘুমন্ত নিরাপরাধ মানুষের ওপর ট্যাংক কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ, বৃদ্ধ, শিশু, কিশোর, যুবক, মাতা, বোনকে পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করে। তারই প্রতিবাদে আমরা পাকিস্তানিদের নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে যাই।
তোমার পায়ে কেমন করে কোন যুদ্ধে গুলি লাগে? অরণ্যের জিজ্ঞাসায় ওসমান চাচা বলেন- শোনো, তারিখটা আমার ঠিক মনে নেই। সম্ভবত আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ হবে। আমরা ত্রিশ-বত্রিশ জন মুক্তিযোদ্ধা কচানদীর পারে বোথলা গ্রামে ইমু চাচার গোয়ালঘরে ঘাঁটি গেড়ে অপেক্ষায় আছি। বোথলা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি। আমরা একটা সূত্রে খবর পেলাম ভান্ডারিয়া বন্দর থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এই গ্রামে আসবে। ওরা হিন্দুদের ধরে ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে এক গুলিতে মেরে ফেলে লাশগুলিকে কচানদীতে নিক্ষেপ করতো। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতো। এইভাবে তিন দিন তিন রাত অপেক্ষার পর এক সকালে ওরা এলো। গ্রামে ঢোকার পর কচুবনের আড়ালে আমরা ওৎ পেতে আছি।
তোমাদের ভয় করতো না ওসমান চাচা? জিজ্ঞেস করে আশিষ।
গীতি বলে, যুদ্ধের বর্ণনা শুনেই শরীর আমার কাঁটা দিচ্ছে।
দেখ তোরা। গীতি হাতটা বাড়িয়ে দেয় অরণ্যের দিকে।
অদ্ভুত একটা হাসির ঢেউ ওসমান চাচার ঠোঁটে- ভয় পেলে কি চলে? এ যে দেশের জন্যে যুদ্ধ। স্বাধীনতার যুদ্ধ। তোমাদের মুক্তির জন্যে যুদ্ধ। চোখের সামনে দেখেছি কতো মুক্তিযোদ্ধাকে বুকে গুলি খেয়ে রক্তে ভেসে মারা যেতে। ওর রক্তে আমি লাল হয়ে গেছি। উষ্ণ টাটকা রক্ত। প্রিয় বন্ধুর মুখে এক ফোঁটা পানি দিতে পারিনি। কারণ, আমার সহযোদ্ধাকে হত্যাকারী পাকিস্তানিদের ট্রিগার টিপে হত্যায় ব্যস্ত। যাই হোক গ্রামে ঢোকার মুখে কমাণ্ডারের নির্দেশে আমরা ওদের ওপর আক্রমণ চালালাম।
আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প: কোয়াক পাখির ডাক। লেখক মনি হায়দার
ওরা ভয় পায়নি? জানতে চায় আরমান।
প্রথমে তো কিছুটা ভয় পেয়েছিলো। কারণ, ওরা ধারণা করতে পারেনি এই অজপাড়া গাঁয়ে 'মুক্তি' আসতে পারে! মুক্তিযোদ্ধাদের ওরা
'মুক্তি' বলতো মুক্তি মানেই ওদের সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। তাছাড়া আমরা তো থেকেছি গোপনে। কাকপক্ষীও টের পায়নি। কেবল ইমু চাচা জানতেন। ওরা তো আবার প্রশিক্ষন পাওয়া ঝাঁনু সৈনিক। প্রথম ধাক্কা সামলিয়েই পজিশন পাল্টে আক্রমণ চালালো।
মৃদুলা বলে, ইস শুনেই আমার দারুণ ভয় লাগছে।
তুই তো ভীতুর আণ্ডা। একটা ঘাসফড়িংও মারতে পরিস না, বলে অরণ্য।
ক্ষেপে যায় মৃদুলা- তোকে বলেছে।
ঝগড়া করো না। ঝগড়া করলে যুদ্ধের কথা বলবো না। ওদের দু'জনকে বলেন ওসমান চাচা। ওরা দুটি জোঁক। যেখানে যায় সেখানেই ঝগড়া বাঁধায়, বলেন আপনি- ওসমান চাচাকে উৎসাহ দেয় গীতি।
শোনো, ওসমান চাচা বলতে আরম্ভ করলেন- দু'পরে তীব্র যুদ্ধ চলছে। বোথলা গ্রামের লোকজন ঘর-বাড়ি, সংসার, রান্না-বান্না ফেলে বাচ্চা-কাচ্ছা নিয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসী সাধারণত নিরীহ মানুষ। তারা তো এসব যুদ্ধ কখনো দেখেনি। শোনেনি আগ্নেয়অস্ত্রের বিকট শব্দ। যুদ্ধ করতে করতে দুপুর প্রায়। পাকিস্তানিদের রয়েছে আধুনিক অস্ত্র। আমাদের কাছে কয়েকটা পুরনো রাইফেল। কমাণ্ডারের কাছে কেবল একটা হালকা মেশিনগান। আমাদের অবস্থান ছিলো একটু সুবিধাজনক। আমরা কচুবনে সামান্য উঁচু জায়গায়। ওরা ছিলো রাস্তায়। আমাদেরকে ওরা দেখতে পাচ্ছিলো না। অনেক পাক সৈন্য মারা গলো। রাজাকার, আলবদরও ছিলো। এক সময়ে যারা বেঁচে আছে, তারা পেছনের দিকে সরে যাচ্ছিলো। পেছনে ফিরে দৌড়ে কচানদীতে অবস্থানরত গানবোটে উঠে পালাতে লাগলো। আমরা পিছে ধাওয়া করলাম। হঠাৎ আরমান বলে- ওসমান চাচা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।
করো।
যুদ্ধ করার এতো সাহস তোমরা কোথায় পেলে?
একজন বিশাল মানুষের কাছ থেকে আমরা এই সাহস পেয়েছিলাম।
মাত্র একজন মানুষ?
হ্যাঁ।
কে তিনি?
তিনি বাংলার মানুষ। তাঁর বুকের মধ্যে অথৈ সাহস আর দেশের জন্যে অফুরন্ত ভালোবাসা ছিলো, যার কোনো তুলনা হয় না। সে কারণে পাকিস্তানি বর্বর শাসকেরা তাকে ভয় পেতো। বারবার তাকে দমিয়ে রাখার জন্য কারাগারে আটকে রাখতো। সত্যিকার দেশপ্রেমিক মানুষকে সামরিক সরকার সব সময় ভয় পায়। শত নির্যাতন অত্যাচারেও এই সাহসী মানুষটাকে ওরা দমাতে পারলো না। মানুষটা নিজে যেমন স্বপ্ন দেখতে জানতেন, তেমনি লক্ষ লক্ষ মানুষকেও স্বপ্ন দেখাতে পারতেন। সেই মহান মানুষটার কাছ থেকে আমি, আমার মতো হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ সাহস পেয়েছে।
আরমান অবাক। ওসমান চাচার কথার সঙ্গে মায়ের কথার স্পষ্ট মিল পাচ্ছে সে। একজন মানুষের ডাকে সাহসে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের প্রিয় প্রাণকে তুচ্ছ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো? কেমন মানুষ ছিলেন তিনি?
আমার আব্বা কি কোনেদিন আসবে না মা? আরমানের জিজ্ঞাসায় মা লুৎফুন নাহার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে চুপচাপ থাকেন। এমন কথার জবাব দিতে ভালো লাগে না। নিজের বুকেই তাঁর কতো কষ্ট। তার ওপর আরমানের এই মর্মান্তিক প্রশ্নের কী জাবাব দেবেন তিনি? দীর্ঘদিনের বহন করা বেদনার কোনো অংশীদার নেই।
আরও পড়ুনঃ General Knowledge about Oxford University
কথা বলছো না কেনো মা? আরমান আবার জিজ্ঞেস করে।
কী বলবো?
আব্বা আর আসবেন না? তোমাকে হাজার বার প্রশ্ন করছি। উত্তর দাও না কেনো?
জানি না।
কেনো জানো না?
আসলে আরমান অসহিঞ্চু আজকাল। কিশোর একটা ছেলে সে। প্রতিদিন চারপাশে অসংখ্য বন্ধুদের দেখছে। তাদের সবার আব্বা আছে। কেবল আরমান ব্যতিক্রম। হয়তো এই ব্যতিক্রমই ওকে চঞ্চল করে তুলেছে।
তুই কি জানিস না, মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসে না।
আব্বা মারা গেছেন?
হ্যাঁ।
কীভাবে?
যুদ্ধে
মুক্তিযুদ্ধে?
হ্যাঁ।
ওসমান চাচার মতো আব্বাও মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন? আব্বা যখন যুদ্ধে যান তখন আমার বয়স কতো?
লুৎফুন নাহার তাকিয়ে থাকেন ছেলের দিকে। সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না জানা পর্যন্ত প্রশ্নের পালা চলতেই থাকবে। সুতরাং এখন সব কথা বলা দরকার। বলার সময়ও হয়েছে। আরমান আজ বড়ো। চোখের সামনে থাকলে যা হয়- মনে হয় ছোটোই আছে। কিন্তু চারপাশ, ইতিহাস, জীবনের ধারাপাত পাঠ করে আরমান আজ প্রশ্ন করছে সরাসরি তার নিজের সম্পর্কে।
আরমান ...।
মা
তোমার আব্বা খুব সাহসী মানুষ ছিলেন। দেশকে দারুণ ভালোবাসতেন। ছোটো একটা ব্যবসা করতেন ঢাকায়। মালিটোলার ভাড়া বাসায় থাকতাম। আমাদের সঙ্গে তোমার দাদুও থাকতেন। সারা দেশ তখন উত্তাল। টালমাটাল। দেশ জুড়ে আন্দোলন, মিছিল, মিটিং। দেশের মানুষ পাকিস্তান নামক অবাস্তব রাষ্ট্র ভেঙে নতুন একটা দেশ, বাংলাদেশ যার নাম নির্মাণ করতে চায়। আর লক্ষ-কোটি মানুষের মধ্যে তোমার আব্বাও একজন। সব মানুষ, সব বাঙালির নেতা একজন। তিনি কেন্দ্রবিন্দু। গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে তিনি কয়েক ইঞ্চি বেশি লম্বা। চওড়া কপাল, উন্নত নাসিকা। আয়ত চোখ। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। তার কণ্ঠে যেনো পুরো বাংলাদেশ রঙময় হয়ে উঠতো। তিনি জনসভা ডাকলে মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না সভায়।
তাঁর এই অসম্ভব জনপ্রিয়তায় পাকিস্তানিরা দারুণ ভয় পায়। তারা ভাবে, এই মানুষটাকে, মানুষের মহানায়ককে মানুষের সঙ্গে মিশতে দিলে এদেশ স্বাধীন হবে। এদেশ স্বাধীন হলে তারা শোষণ করতে পারবে না। পাকিস্তানিদের নির্মম শোষণের প্রতিবাদে সেই স্বপ্নময় মানুষটি ঢাকার
তৎকালীন রেসকোর্স মাঠে সাতই মার্চ এক জনসভায় ভাষণ দিলেন। সেটা কেবল জনসভা ছিলো না, ছিলো মানুষের মহাসমুদ্র। সেই মানুষটি জনসমুদ্রে বজ্রকণ্ঠে বললেন, 'তোমাদের ঘরে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো। শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।'
তারপরেই এলো পঁচিশ মার্চ।
ঐ রাতেই তোমার আব্বা যুদ্ধে গেলেন। তুমি তখন সাত মাসের আমার পেটে। যুদ্ধে যাবার সময় তোমার কথা বললে তোমার আব্বা বললেন, নেতার নির্দেশ অমান্য করার সাধ্য আমার নেই। আমি চললাম।
সেই যে তিনি গেলন, আর ফিরলেন না। ফিরলো বাংলাদেশ।
কেমন সে নেতা? কী ছিলো তাঁর ক্ষমতা? যার আহবানে জীবনকে তুচ্ছ করে লক্ষ লক্ষ মানুষ যুদ্ধে যায়? সাতই মার্চের সেই ভাষণের জায়গাটা কেমন? দেখতে ইচ্ছে হয় আরমানের। চলে আসে ঢাকায়। আসে আজিমপুরের মামার বাসায়। কিন্তু আসাটাই ব্যর্থ। কোথাও সেই বিরাট
আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প: বর্ণমালার মিছিল। লেখক মনি হায়দার
মানুষটির কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কেনো নেই?
কীরে মন খারাপ কেনো? মামা জিজ্ঞেস করেন আরমানকে।
মামাকে সব বলে আরমান বিশ্বাস করো মামা, আমার খুব খারাপ লাগছে। এতো বড়ো মানুষটির স্মরণে তোমরা একটা ভাস্কর্যও বানাতে পারোনি।
মামা মাথায় হাত রাখলেন। স্বীকার করলেন নিজেদের ব্যর্থতা। বললেন, আমরা যা পারিনি, তোরা সেই বিরাট মহৎ মানুষটির একটা
স্মরণীয় ভাস্কর্য বানাবি। আমাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবি।