মাস্টার্স ফাইনাল রাষ্ট্রবিজ্ঞান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন। ১। সরকারের সমস্যা বলতে কি বুঝ?
ভূমিকা:
একটি মানবিক সংগঠন হিসেবে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের তুলনায় সরকারের কার্যাবলির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। তাছাড়া আধুনিকতার যুগে মানুষের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সন্ত্রাস, রাহাজানি, অন্যায় অত্যাচারের মাত্রাও বেড়েছে। এমতাবস্থায় সরকারকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়।
সরকারের সমস্যা:
বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সাথে বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রা জটিলতর হয়ে পড়েছে। আর এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উপর নতুন নতুন কার্যের দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। আধুনিক যুগের যান্ত্রিক পরিবর্তন প্রথমে অর্থনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক সম্পর্কাদির উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এভাবে সাংস্কৃতিক জীবন তথা সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর এসব ক্ষেত্রে সরকার যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হয় তাকে সরকারের সমস্যা বলা হয়।
![]() |
মাস্টার্স ফাইনাল, বিষয়: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই: শাসনের সমস্যাবলি, বিষয় কোড: ৩১১৯০৭ (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর) |
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
আলোচনা করা হলো। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সরকারের সমস্যাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তা
১. হারম্যান হিলার (Herman Heller)-এর মতে, "রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মধ্যকার সম্পর্ক আধুনিক রাষ্ট্র শাসনের সর্বাপেক্ষা প্রকট সমস্যা।"
২. আর, এম. ম্যাকাইভার (R. M. Maclver)-এর মতে, "সকল মানবিক সংগঠনের মধ্যে সরকারই সর্ববৃহৎ।" (Government is the best of all human enterprises.)
৩. অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Herman Finer) বলেন, "বস্তুত আধুনিক গণতান্ত্রিক সরকারের গুরুতর সমস্যা হচ্ছে সর্বাধিক জনকল্যাণ সাধন করবে এমন সর্বাধিক উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার পরিকল্পনা উদ্ভাবন করা এবং একই সময়ে রাজনৈতিক দিক দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের এবং উদ্যমশীল অর্থনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা।"
আরও পড়ুনঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: দলীয় ব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যায়ন
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায় যে, শাসন কর্তৃত্ব ও স্বাধীনতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারকে নানাবিধ সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত সমস্যাদির সমাধান সরকারকেই করতে হবে।
=================================
প্রশ্ন। ২। সরকারের প্রধান প্রধান সমস্যা লিখ?
অথবা,
উন্নয়নশীল দেশসমূহের সমস্যাবলি চিহ্নিত কর?
ভূমিকা:
সকল মানবিক সংগঠনের মধ্যে সরকারই সর্ববৃহৎ। যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের তুলনায় সরকারের কার্যাবলির পরিমাণ অনেক বেশি। তাছাড়া বর্তমান আধুনিকতার যুগে মানুষের চাহিদার পরিমাণ গেছে বেড়ে। সাথে সাথে সন্ত্রাস, রাহাজানি, অন্যায় অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সরকারকে বিভিন্ন রকম সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়।
সরকারের প্রধান প্রধান সমস্যা:
সরকারের সমস্যাদি এতই ব্যাপক ও বন্ধুবিধ যে, একে সুনির্দিষ্টভাবে এক সঙ্গে চিহ্নিত ও উল্লেখ করা প্রায় অসম্ভব। আর সমাজ যতই আধুনিকতামুখী হবে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে মানুষের কল্যাণে যতবেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হবে, সরকারের সমস্যা নিঃসন্দেহে ততই বৃদ্ধি পাবে। যা হোক নিম্নে আধুনিক সরকারের প্রধান সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলো:
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা:
বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশই জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন। জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে সরকারকে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মপ্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ তাদের দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে। কাজেই জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি সরকারের অন্যতম প্রধান সমস্যা।
২. অশিক্ষাগত সমস্যা:
অশিক্ষিত জনগণ একটি দেশের বোঝাস্বরূপ। শিক্ষিত জনগণ মাত্রই সচেতন। শিক্ষিত জনগণ জীবনের উচ্চমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে আগ্রহী। অশিক্ষিত জনগণ সরকার ব্যবস্থা, সংবিধান, আইন, বিচার ও. শাসন বিভাগ কি এবং এগুল্লোর প্রয়োজনও তাদের কাছে বোধগম্য নয়। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি তাদের যে কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে এ সম্পর্কেও তারা অজ্ঞ। এর ফলে সরকারের উন্নয়নমূলক অনেক পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটাও আধুনিক সরকারের অন্যতম সমস্যা।
৩. প্রতিকূল বাণিজ্য হার:
বিশ্বের অধিকাংশ অনুন্নত দেশগুলোতে তাদের রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি। আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাণিজ্য হার তাদের প্রতিকূলে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এটাও সরকারের একটা সমস্যা।
৪. কোঠা সিস্টেম:
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোঠা সিস্টেম অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এ কোঠা সিস্টেম অনুসরণ করার ফলে অনুন্নত দেশের বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী আন্তর্জাতিক বৃহৎ বাজারে প্রবেশ করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। রপ্তানি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা সরকারের বড় ধরনের একটা সমস্যা।
৫. বিরোধী দলের চাপ:
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থায় এক বা একাধিক বিরোধী দলের অস্তিত্ব লক্ষণীয়। বিরোধী দলের প্রধান কাজ হলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা এবং সরকারকে দেশ পরিচালনায় সহায়তা করা। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তাদের দলীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে প্রয়োজনে, অ-প্রয়োজনে সরকারকে সমস্যায় ফেলতে চেষ্টা করে। জনমতকে বিভ্রান্ত করে তারা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করে। এতে সরকার তার দায়িত্ব পালনে বাধার সম্মুখীন হয়।
আরও পড়ুনঃ সাধারণ জ্ঞান: আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
৬. সরকার সম্পর্কিত সমস্যা:
সরকার গঠন, পরিবর্তন, কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন, জবাবদিহিতা ইত্যাদি সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা। সরকারকে প্রায় সময়ই এ সমস্ত সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।
উপসংহার:
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, সরকারের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সরকারের কার্যাবলিকে যেহেতু একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রাখা সম্ভব নয় সেহেতু সমস্যার সমাধানও খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধান করতে হবে সমস্যার প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য রেখে। প্রত্যেক দেশেই সমস্যার সমাধান আবশ্যক। আর এ সফলতা অর্জনের জন্য দরকার উন্নত সরকার ব্যবস্থা, দক্ষ প্রশাসন ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী সরকার।
=================================
প্রশ্ন: ৩। সরকারের সমস্যাবলি পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?
অথবা,
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর?
ভূমিকা:
সরকারের সমস্যা বিষয়ে অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিককালে সরকার নানাবিধ সমস্যার জর্জরিত। সরকারের বিভিন্নমুখী সমস্যা মূলত জনগণেরই সামগ্রিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। এ কারণেই সরকারের সমস্যাদি সচারুরূপে অধ্যয়ন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের সমস্যাবলি পাঠের প্রয়োজনীয়তা:
সরকারের সমস্যাবলি পাঠের আবশ্যকতা বহুবিধ। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা:
বস্তুত রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সরকারকেই সম্পাদন করতে হয়। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার উপরই সরকারের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। স্থিতিশীল সরকারই এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার উপযোগী। যেমন- আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে স্থিতিশীল সরকার বিদ্যমান থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা সংরক্ষণে সরকারের সমস্যাবলি পাঠ অত্যাবশ্যক।
২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
অর্থনৈতিক উন্নয়নই সরকারের পরম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারকে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হয়। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বহুবিধ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড যেমন- খাদ্য, উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হয়। মূলত অর্থনীতিই রাজনীতির মাপকাঠি। অতএব অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বিষয়ক পাঠ রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. রাজনৈতিক অগ্রগতি:
আধুনিক যুগ উন্নয়নের যুগ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন রাজনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত তেমনি রাজনৈতিক উন্নয়নও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক। রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্থিতিহীনতা, রাজনৈতিক সংকট, সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব, দলের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাব, অগণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রভৃতি যেকোনো দেশ ও সরকারকে অবক্ষয়ের মধ্যে নিমজ্জিত রাখে এবং রাজনৈতিক সংকট বা অস্থিরতা দেশের যেকোনো ধরনের অগ্রগতি পথের প্রতিবন্ধক। বস্তুত রাজনৈতিক অগ্রগতি সাধনে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। আর রাজনীতিতে তাই এটা অতীব তাৎপর্য বহন করে।
আরও পড়ুনঃ সাধারণ জ্ঞান। মাস্টার্স ফাইনাল: শাসনের সমস্যাবলী বই
৪. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব
আধুনিক যুগ আন্তর্জাতিকতাবাদের যুগ। কোনো দেশই আজ কাল স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। জাতিসমূহ পরস্পর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিভিন্নমুখী প্রয়োজনের তাগিদে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। সম্পর্ক যতই সুদৃঢ় ও গভীর হবে ততই সরকার সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। সরকারের সমস্যাবলি সমাধানের জন্য বৈদেশিক সহযোগিতা ও সাহায্য অপরিহার্য। তাই সরকারকে এমনভাবে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্র দৃঢ়তর হয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সরকারের ভূমিকা রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রয়োজন।
৫. রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন
আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পরিউন্নয়নের ফরে রাজনৈতিক ব্যবস্তায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এর ফলে নতুন নতুন ও অধিকতর জটিল প্রকৃতির সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। যেগুলোর সমাধান কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পদ্ধতির মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এ কারণেই সরকারের সমস্যা বিষয়ে অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক যুগে সরকারের সমস্যা পাঠ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আধুনিক সরকার কর্তৃত্ববাদী বা সর্বাত্মকবাদী সরকার নয়। এটা প্রতিনিধিত্বমূলক ও দায়িত্বশীল সরকার। যতই এর সমস্যা সম্পর্কে অবহিত ও পরিচিত হওয়া যায় ততই এর দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাবে। সরকারের সমস্যাবলি পাঠ করে জনগণও নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হবে, সরকার ও জনগণের পথ প্রসারিত হবে, কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সকলেরই সরকারের সমস্যা পাঠ করা অত্যাবশ্যক।
=================================
প্রশ্ন। ৪। সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো কি?
ভূমিকা:
সরকার হলো একটি সর্বজনীন সংস্থা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং সাংস্কৃতিক জীবনধারার জটিলতার কারণে সরকারের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। সরকার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কার্য পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর সরকারের এসব সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিঃ
এক সময়ে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে গতানুগতিক পদ্ধতিই ছিল সর্বোত্তম পদ্ধতি। সেই সময় সরকারের কার্যাবলি অত্যন্ত সহজ ও সরল ছিল। ফলে চিন্তাবিদগণ সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন। সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো নিম্নোক্তভাবে আলোচনা করা হলো।
১. বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি:
সনাতন পদ্ধতিতে সরকারের সমস্যা বর্ণনামূলক, ইতিহাসভিত্তিক বা আইনগত দৃষ্টিকোণ হতে অধ্যয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে 'রাজনৈতিক সমস্যাকে' সংশ্লিষ্ট দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর উল্লেখক্রমে আলোচনা করা হয়, যেমন- ফরাসি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিহীনতার কারণ হিসেবে আইনসভা ভেঙ্গে দেওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের অধিকারের কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রীয় সমস্যাদি তুলনামূলক উপায়ে বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা করা হয় না।
২. সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দৃষ্টিভঙ্গি:
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন অনুশীলন পদ্ধতিতে সরকারের সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান ও বিধি ব্যবস্থা সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়। কিন্তু এতে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান ও বিধি ব্যবস্থার ভূমিকা উপেক্ষা করা হয়। যে সকল অরাজনৈতিক উপাদান সরকারের সমস্যা ও এর সমাধানের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, তা সনাতন পদ্ধতিতে গুরুত্ব লাভ করে না।
৩. প্রাবন্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি:
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতি মূলত প্রাবন্ধিক। সনাতন পদ্ধতির অনুসারীরা কখনো কখনো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কতগুলো সমস্যা বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে আলোচনা করেন। এরূপ সাধারণ সমস্যাগুলো হলো নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভার মধ্যকার সম্পর্ক এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক শাখা ও আইনের বিকাশ। এ সকল সমস্যার আলোকেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে জাতীয় বৈশিষ্ট্যাবলি এবং রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক সুষ্ঠুভাবে আলোচনা করা হয় না, অথচ তা সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নের পক্ষে প্রয়োজনীয়।
আরও পড়ুনঃ Natok: The Taming of the shrew | Williams Shakespeare | Translate In Bangla
উপসংহার:
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসংহারে বলা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার পরিবর্তন সাধিত হয়। এক সময়ে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতিই সর্বোত্তম পদ্ধতি বলে বিবেচিত হতো। সেই সময়ে সরকারের কার্যাবলি অত্যন্ত সহজ ও সরল ছিল। বর্তমান যুগে জটিল সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে গতানুগতিক তথা সনাতন পদ্ধতি এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অচল হয়ে পড়েছে। সেজন্য আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সনাতন পদ্ধতির স্থলে কয়েকটি নূতন পদ্ধতি অনুসরণে প্রয়াসী হয়েছেন।
=================================
প্রশ্ন। ৫। সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর?
ভূমিকা:
এক সময়ে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে গতানুগতিক পদ্ধতিই ছিল সর্বোত্তম পদ্ধতি। সেই সময়ে সরকারের কার্যাবলি অত্যন্ত সহজ ও সরল ছিল। ফলে রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সরকারের সমস্যাবলির অধ্যয়নের সনাতন পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অচল হয়ে পড়েছে।
সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর সীমাবদ্ধতা:
বর্তমান যুগে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নের সনাতন পদ্ধতি এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অচল হয়ে পড়েছে। সনাতন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাসমূহ নিম্নরূপ-
১. বর্ণনামূলক সীমাবদ্ধতা:
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতি মূলত বর্ণনামূলক। এই পদ্ধতিতে কোনো বিশেষ সরকারের সমস্যাদির বর্ণনা দেওয়া হয়।
এতে কিছু প্রয়োজনীয় ফল লাভ হলেও সমস্যাদির অনেক দিক অনুদ্ঘাটিত থেকে যায়, কারণ এতে এক দেশের সরকারের সমস্যাদি অন্যদেশের সরকারের সমস্যাদির সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করা হয় না। এই বর্ণনামূলক বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণে আরো কয়েকটি সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
(ক) এ পদ্ধতিতে প্রাক-অনুমান বা প্রকল্পসমূহ গঠন এবং ওদের সত্যায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর কোনো গুরুত্বই প্রদান করা হয় না।
(খ) এই পদ্ধতি মূলত বর্ণনামূলক হওয়ায় এতে প্রাক অনুমানগুলোর সত্যতা পরীক্ষা করা যায় না। সরকারের সমস্যা সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য উপাত্তসমূহ (data) সুবিন্যস্ত উপায়ে একত্র করা সম্ভব হয় না।
(গ) সনাতন বর্ণনামূলক অনুশীলন পদ্ধতিতে কোনো নূতন সমস্যা সম্পর্কে সুব্যবস্থিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। একই কারণে এ পদ্ধতিতে রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিপ্লব ও রাজনৈতিক স্থিতিহীনতা সম্পর্কে তুলনামূলক ভিত্তিতেও কোনো মতবাদ প্রণয়ন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২. সনাতন পদ্ধতি- সংকীর্ণ পদ্ধতি:
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতি মূলত সংকীর্ণ। এই পদ্ধতির অনেক অনুসারীই কেবল পশ্চিম ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সমস্যাদির কথাই আলোচনা করেন। তারা কেবল পাশ্চাত্যের "অগণতান্ত্রিক" সরকারের সমস্যা নহে, উপরন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যাদি সম্পর্কেও সুব্যবস্থিত উপায়ে আলোচনা করা হতে বিরত থাকেন।
৩. সনাতন পদ্ধতি স্থবির:
সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতিতে স্থবিরতারও পরিচয় পাওয়া যায়। কারণ এতে রাজনৈতিক বিকাশ ও পরিবর্তনের সমস্যাদির কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই পদ্ধতির অনুসারীরা দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ও সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যাপারেই প্রধানত উৎসাহী থাকেন, তারা নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সফলতার শর্ত বা ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করেন না এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সমস্যা সম্পূর্ণভাবেই আলোচনা বহির্ভূত রাখেন।
আরও পড়ুনঃ নাটক: দি টেমিং অফ দি শ্রু। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
৪. বর্তমানে সনাতন পদ্ধতি অচল:
বর্তমান যুগে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতি একেবারেই অচল। কারণ এই পদ্ধতি আমাদের প্রয়োজন মেটাতে সম্পূর্ণভাবে অসমর্থ। এই পদ্ধতি সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যাবলির বর্ণনাদানেই সীমাবদ্ধ; এতে তুলনামূলক উপায়ে এগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয় না। এই পদ্ধতি কোনো 'সুব্যবস্থিত অধ্যয়ন রীতি নয় বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।
৫. অধ্যাপক আর. সি. ম্যাক্রিডিস-এর অভিমত:
অধ্যাপক আর, সি. ম্যাক্রিডিস (R. C Macridis) বলেন, "কতগুলো কারণে আমরা সরকারের সমস্যা অধ্যয়নে সনাতন অনুশীলন পদ্ধতির দোষত্রুটি সম্পর্কে ক্রমশ সচেতন হয়ে উঠেছি। এই কারণগুলো হচ্ছে, একদেশ একদেশ করে সরকারের সমস্যা অধ্যয়নের পদ্ধতি বর্তমানে আর সন্তোষজনক বলে গণ্য করা হচ্ছে না। অ-পাশ্চাত্যে সরকারগুলোর সমস্যা অধ্যয়ন করার বিষয়টি আমাদের অনুশীলন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের অনুশীলন পদ্ধতিকে প্রসারিত করার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং এ নীতির দিক নির্দেশের বিষয়টি ক্রমশ আমাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের সমস্যাবলির তুলনামূলক বিশ্লেষণ ক্রমবর্ধমানভাবেই বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়ন পদ্ধতির অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
উপসংহার:
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসংহারে বলা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার পরিবর্তন সাধিত হয়। এক সময়ে সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতিই সর্বোত্তম পদ্ধতি বলে বিবেচিত হতো। সেই সময়ে সরকারের কার্যাবলি অত্যন্ত সহজ ও সরল ছিল। বর্তমান যুগে জটিল সরকারের সমস্যাবলি অধ্যয়নে গতানুগতিক তথা সনাতন পদ্ধতি এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অচল হয়ে পড়েছে। সেজন্য আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সনাতন পদ্ধতির স্থলে কয়েকটি নূতন পদ্ধতি অনুসরণে প্রয়াসী হয়েছেন।