মুক্তিযুদ্ধের গল্প: যুদ্ধাপরাধী। গোলাম সরোয়ার সলোক

যুদ্ধাপরাধী

গোলাম সরোয়ার সলোক



পলাশ বহিঃবাটির এক কোনে বসা ছিল।

চোখের পলকে তর্জনী আঙ্গুল উঁচু করে এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। ওর চারিদিকে অনেক লোক। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। সবাই একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছে।

কেউ কেউ পলাশের দিকেও তাকাচ্ছে উৎসুক নেত্রে। আবার কেউ কেউ বলছে "উচিত বিচার। এই না হলে বাপের বেটা। ওতো ঠিক কথাই বলছে"।

পলাশ তার সিদ্ধান্তে অনড়, অটল। এক চুল পরিমান ছাড় দিতে সে নারাজ। মুখে এক বাক্য, "এ বাড়ীতে দাফন হবেনা। এ গ্রামে উনার দাফন হবেনা"।

বহিঃবাটিতে জেলা সদর হতে এসেছে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স। সাথে সরকারী লোক। র‍্যাব, পুলিশ, সেনা সদস্য।

থানার ওসি সাহেবও এসেছে জনাকয়েক পুলিশ নিয়ে। সবার চোখে মুখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাব।

অন্য সব মৃত লোকের দাফন কাফনে যেমন ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীয্য, ভক্তি-শ্রদ্ধার অনাবিল পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়। সেই সাথে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করে।

গল্পের নাম যুদ্ধাপরাধী। লিখেছেন গোলাম সরোয়ার সলোক
মুক্তিযুদ্ধের গল্প: যুদ্ধাপরাধী

এখানে তার উল্টোটা।

র‍্যাব-পুলিশ ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে কফিন নামাচ্ছে। বড় একটা কাঠের বাক্স। বাক্সটা বেশ ভারী ভারীই মনে হচ্ছে।

উপস্থিত উৎসুক জনতা চারিদিক হতে বাক্সকে কেন্দ্র করে সামনে এগিয়ে আসছে। আসতে আসতে একেবারেই কাছে এসে গেছে। যে কারনে বাক্সটা নামানোই অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে অফিসার জোড়ে ফু দিলো বাঁশীতে। কান ঝালাপালা করে দিয়ে বাজলো কয়েকবার।

মধ্য-পুকুরে ঢিল মারলে বা ঢিল ফেললে যেমনটা হয়। ঢিল পতনস্থল হতে ছোট ছোট ঢেউ উঠে চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। ছড়াতে ছড়াতে কূলে এসে সে ঢেউ আঘাত করে।

এই উৎসুক জন-সমুদ্রেরও তাই হোল। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যে যার সাধ্যমত পিছিয়ে গেল অনেকদূর পর্যন্ত। নিমিষে বহিঃবাটি গেল ফাঁকা হয়ে। এই সুযোগে সরকারী লোক কফিন নামালো বহিঃবাটির মধ্যস্থলে।

বাক্সটি নামিয়ে রাখা হোল উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি করে। বাক্সের মধ্যে গফুর মোল্লার মরদেহ।

গতরাতে তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্য্যকর করা হয়েছে।

গফুর মোল্লা পলাশের পিতা।

যে ব্যাক্তি পলাশের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত লোক। তাঁকে দেখলেই পলাশের গা রি রি করে ওঠে। অসহ্য মনে হয় যার উপস্থিতি। তাঁকে বাবা বলে পরিচয় দিতেও তার লজ্জা ও কুণ্ঠা।

সব সময় পলাশের মনের ভিতরে বাস করা বিবেক বলে,-" তোমার পিতা বিশ্বাসঘাতক! যুদ্ধাপরাধী "!

"বিশ্বাসঘাতক? যুদ্ধাপরাধী "? পলাশ নিজেই তার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে।

-"হ্যাঁ, হ্যাঁ, বিশ্বাসঘাতক! যুদ্ধাপরাধী। মানুষ জন্মেই তার জন্মভূমির কাছে ঋণী হয়ে যায়। কৃতজ্ঞ থাকে। মা-মাটি-মানুষের কাছে হয় সে চিরঋনী। তখন থেকেই সে মা-মাটি-মানুষের সম্মান ও কল্যাণের জন্য কাজ করে। প্রয়োজনে জীবন দেয়। আর তোমার মাস্টার গফুর মোল্লা কি করেছে"?

পলাশ লজ্জাবতী লতার ন্যায় নুয়ে পরে। সে নিজেই নিজের জীবনটাকে বইতে অপারগ হয়ে ওঠে। জীবনের প্রতি কেমন যেন বৃতস্রদ্ধ হয়। কোন কিছুতেই তার ভাললাগে না। বড়ই অপরাধী মনে হয় নিজেকে।

সে আলোকিত লোক। বাংলায় এম, এ করেছে। চাকরী করে একটা বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে। সাহিত্য পাতার দায়িত্ব।

সে তিতুমির, ঈশা খান, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, ফজলুল হক, সৌহরোয়াদ্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু পড়েছে। আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী, দেশ প্রেমিকের জীবনী পড়ছে।

কিন্তু না! এরা কেউ দেশের সঙ্গে বেঈমানী বা বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। দাঁড়ায়নি দেশের মানুষের বিপক্ষে। দেশের মানুষকে হত্যা করেনি পশুর মত। করেনি খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তরিত। ঘরে ঘরে করেনি অগ্নি সংযোগ। কেউই মাতৃভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে যুদ্ধ করেনি।

-"তাহলে "?

"তাহলে কি? তুমিতো অনেক বই পড়লে? কিছু পেলে? কি পেলে "?

"না, কিছুই না"।

-"তাহলে তোমার পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা মায়ের কাছ থেকে বাবা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নাও"।

-"ঠিক আছে। তাই জানবো"।

-"হে, তাই জানো"।

-"মা"। পলাশের অস্থির মনের এলোমেলো প্রশ্নের উত্তর পাবার ডাক।

ছেলের ডাক শুনেও সে চুপ। কোন জবাব নেই। নির্বিকার, নির্লিপ্ত।

বারান্দার এক কোনে মা সালেহা বেগম চুপটি মেরে বসে আছে।

মনটা শ্রাবণের মেঘের মত ভারী। এই যেন ঝর ঝর করে নামবে ঢল অঝর ধারায়। সেই ধারায় ভেসে যাবে বাড়ী-ঘর, মাঠ-ঘাট, গ্রাম-জনপদ।

যতলিয়ে যাবে ক্ষেতের ফসল। ঝড়-ঝঞ্ঝা, সাইক্লোনও বয়ে যেতে পারে।

আজ সে বড় একা। যাকে নিয়ে এতদিন সংসার করেছে,-সে চলে গেল। মেয়ে সুমির বিয়ে হয়েছে। চলে গেছে শ্বশুর বাড়ী। একমাত্র ছেলে পলাশ বড় হয়েছে। কাজের জন্য প্রায় সব সময়ই বাইরে থাকে। বাড়ীতে থাকে ছুটির দিনে।

ছুটির দিনে বাড়ীতে থাকলেও তেমন কথা বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। বই পড়ে।

-"আমার আব্বা মাষ্টার আব্দুল গফুর মোল্লা কি করেছে"?

ছেলের প্রশ্নে মা চমকে ওঠে সালেহা বেগম। যেন জন-মানবহীন গহীন অরন্য পথে চলছে। হঠাৎ বন হতে বিকট হুংকার দিয়ে বেড়িয়ে এলো একদল হিংস্র বাঘ। কিংবা অতিকায় বিশাল আজদাহা ফনাধারী শতাধিক গোখরো সাপ। বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কি বলবে? ছেলের প্রশ্নের কি উত্তর দিবে?

তবু সে হুঁচোট খায়।

অনেক- অনেক দুরঅনেক পিছু ফিরে চায়।

লোকটা ছেলেমেয়ের কত আদর হে করতো। ওদের খোঁজ-খবর নিত স্কুল থেকে এসেই। নিজের হাতে গোসল করাতো। মাথা আঁচড়িয়ে জামা-কাপড় পরিয়ে দিত। নিজহাতে ভাত মেখে পাশে বসে খাওয়াতো। সাথে করে নিয়ে যেত ঈদ ও বৈশাখী মেলায়। কিনে দিত কত খেলনা। গজা, খাজা, খাগড়াই, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা।

আরও পড়ুনঃ কবর কবিতার পরের কবিতা অর্থাৎ "কবরের পর কবর"। লেখক আল আব্বাস রবিন 

তাঁকেও কি কম ভালবাসতো? কোনদিন একটা খারাপ বা রাগের কথা বলতো না। সময় পেলেই তাঁদের নিয়ে ঘুরতে বেরুতো।

কিসে যে কি হোল। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাতারাতি পরির্বতন হয়ে গেল মানুষটা। নিজের স্বামীকেও চিনতে পারছিল না সালেহা বেগম।

কিযে হোল। দেশে আসলো নির্বাচন। যুদ্ধ।

১৯৭০ সাল।

দেশ এলো নির্বাচন। এই নির্বাচনই মানুষটাকে সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে দেয়। সকালে উঠে চলে যেত মুসলিম লীগের ক্যানভাস করতে। ফিরত মধ্যরাতে। আবার কোন কোনদিন ফিরতও না।

মুসলিম লীগের প্রার্থী আব্দুল মোমিনকে জিতানোর জন্য দুধেল গাইটা বিক্রি করেছে। অন্যের নির্বাচনের জন্য নিজের ছেলেমেয়ের দুধ খাওয়ার গাভী বিক্রির ঘটনা এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে।

সালেহা বেগম নিবৃত করতে চেয়েছিল।

খায়। -"পলাশের বাপে গাই বেচতেছেন কিয়ের লাইগে? পুলা-মাইয়া দুদ

মাঝ রাতে বদনা তাহাতে স্বামীর পায়ে পানি ঢেলে দিতে দিতে শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে সে।

পায়ে হাত সঞ্চালন বন্ধ রেখে সালেহা বেগমের মুখের দিকে চেয়ে জবাব দেয়,-"এ সবের তুমি কি বুঝবা?

"ক্যান? বুঝবো না ক্যান? আইশে-পাইশের চাইর দিকের মানুষ নানান কতা কইতেয়াছে"।

-"ওই সব কথায় কান না দিলেই তো হোল। কারো ভাল কেউ দেখতে পারেনা। পাছে লোক কিছু বলে। ওরা বলতেই থাকবে। ওসবে তুমি কান দিবানা। তুমি তোমার সংসার নিয়ে থাকো "?

-"অন্যির জন্যি নিজির পুলা মাইয়ার মুহির দুদির গাই বেঁচে কেউ "?

গফুর মোল্লা পা ধোয়া বন্ধ করে তাঁর দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়। যেন হিংস্র বাঘের চেহারা। এখনই ঘাড় মটকে গিলে খাবে। চোখে জগত সংহারী অগ্নি দাউ দাউ করে জ্বলছে। সে আগুনে জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে বুঝি। ভয়ে সালেহা বেগম কুচকে যায়।

এত বছরের সংসারিক জীবনে এমন সংহারী মূর্তি দেখেনি। ভয়ে সে কেঁপে ওঠে।

-"আপনের লাইগে হাত মুছার গামছা আইনে দিই"। গামছা আনার উসিলায় সে গফুর মোল্লার সামনে থেকে সরে যায়। ঘরের ভিতর গিয়ে চকির উপর বসে নিজেকে সামলে নেয়।

নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করে, 'মানুষডা এমন আচরণ করলো ক্যান? ইদানিং যেন কেমন

করে। কথা বললেই খেই করে রেগে ওঠে'।

গামছা এনে দিলে তাতে হাত মুছে গফুর মোল্লা শীতল মোলায়েম কণ্ঠে বলে,-"শোন, জীবন কয়দিনের? একদিন মরতে হবে। আল্লাহ্ কাছে ধরা দিতেই হবে। সেই আখেরাতের জন্য কিছু করা দরকার। নইলে কি জবাব দিবা কবর, হাশর, মিজান, পুলসেরাতে? আল্লাহ্ রাজী-খুশীর জন্য, ইসলামের টিকানোর লাইগা এই গাভী বিক্রি করছি। তুমি কিছু চিন্তা কইরো না। নির্বাচনটা হউক। মুসলিম লীগ আল্লাহ্র রহমতে ক্ষমতায় আসুক। এই গাভীর থেকেও ভাল দশটা গাভী কিনে দেব। এ ছাড়াও এম, পি, সাবে কইছে, 'সে আমারে নাকি তার পার্সোনাল সেক্রেটারী বানাবে'।

তখন ঢাকায় সরকারী গাড়ী, বাড়ী, পাইক, পেয়াদা, আর্দালি, অডারলি কত কি হইব। গুলশান বনানীতে বাড়ী হইব। শত শত বিঘা জমি হইব

-"পারসোনাল সিগ্রেট দিয়ে কি ওইব আমাগোর? আমাগোর কেউ কি সিগ্রেট ফোঁকে "?

হা হা, হো হো করে অট্টহাসি হেসে ফেটে পরে। সে হাসিতে ঘরখানা গুম গুম করতে থাকে। অঝর ধারার বাঁধ-ভাঙ্গা হাসি।

-"আরে সিগারেট না, সিগারেট না। পার্সোনাল সেক্রেটারী। মানে ব্যাক্তিগত সচিব। এর যে কি মুল্য?"।

-"মাষ্টার"!

সকালে হাত মুখ ধোয়াও শেষ হয়নি। মোমিনের লোকজন এসে হাজির। এর মধ্য হতে সলিম বললো, "জলদি আহেন। এম, পি, সাব আপনের লাইগা দাঁড়া আচে"।

-"আইতাছি সলিম, আইতাছি। খাঁড়াও"।

তাড়াহুড়ো করে কোনমতে হাত মুখ ধুয়ে নেয়। উঠোনে এসে সবাই মিলে মাদুর পেতে বসে। কোথায় যাবে- কে কি করবে, ঠিক করে নেয় পরামর্শ করে। এক সময় সদল বলে বেড়িয়ে পরে।

-"বইন গো, আপনে মাস্টেররে ফিরেইতেছেন না ক্যানে? মোমিন মিয়া জিতুম না। ওর সাথে মিশতে দেইন ক্যা "?

বাড়ীর আশেপাশের বউস্থিরা এসে সালেহা বেগমকে বলে।

-"আমি কি করুম? ক্যামনে ফিরামু "?

-"হাইরে যাইবো। হেরে কইয়েন, মুসলিম লীগ জিতবো না। জিতবো নইকো। শ্যাখ এ দ্যাশের ন্যাতা। ওই অতো দূরের পাহিস্থানের ন্যাতায় আমাগোর কি কামডা ওইবো। হেরাতো রইবো বারশো মাইল দূর"।

-"হেতো আমার কতা হোনে না"।

মাষ্টার মানুষ, সবাই বুদ্ধিমান বলে জানে। সমীহও করে। কিন্তু কি লোভে? কিসের আশায় পাকিস্থানীদের দলে নির্বাচন করে, কে জানে?

নির্বাচন হোল।

গ্রামের সকল ভোটার দলে দলে গেল ভোট কেন্দ্রে। মা-বোনেরাও বাদ গেল না। এটা একটা জাতীয় উৎসব ভেবে সবাই ভোট দিল। সালেহা বেগমও এই প্রথম গেল ভোট দিতে। পলাশের বাবাই তাকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেদিন তাঁর কোলে ছিল পাঁচ বছরের পলাশ।

সবার মনে একটাই বদ্ধমূল ধারনা কাজ করলো। আর শোষণ বঞ্চনা নয়। এবার শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।

রাত আটটার মধ্যেই খবর হয়ে যায়।

এদেশের ১৬৯ সিটের ১৬৭ সিটই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পায়। ভরাডুবি হয় মুসলিম লীগের। জামানত হারায়

আব্দুল মোমিন।

সারা গ্রামের মানুষ নৌকা, শেখ মুজিব ও জয় বাংলার শ্লোগান দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মিছিলে মিছিলে সাড়া গ্রাম টলোমলো হয়।

মিছিল যাবার সময় এ বাড়ীর সামনে অনেকক্ষন থাকে। নেচে গেয়ে মাষ্টাররে উদ্দেশ্য করে নানা শ্লোগান দেয়। মোল্লাকেও নানা কটূক্তি করে।

কৌতূহলী হয়ে ছোট পলাশ এত লোকজনের আনন্দ-উল্লাস দেখতে যায়।

লজ্জা, ক্ষোভ ও অপমানে মানুষটা ঘরের ভিতর মরার মত শুয়ে ছিল। এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। চিলের মত ছুটে গিয়ে পলাশের হাত ধরে বাড়ীর মধ্যে আনে। বেদম মার মারে।

সালেহা বেগম দৌড়ে এসে না ধরলে ছেলেটাকে মেরেই ফেলতো।

মুসলিম লীগের পরাজয় মনে ক্রোধ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। যা নিজের অবুঝ ছেলেটার উপর দিয়ে প্রকাশ করে।

পরাজয়ের পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সন্তান-হারা শোকে সারাদিন মন-মরা হয়ে ঘরের মধ্যে থাকে। নাওয়া খাওয়া বন্ধ প্রায়।

কয়েকদিন পর সদলবলে আব্দুল মোমিন মাষ্টার বাড়ীতে আসে। গল্প-গুজব, খানা-পিনাও হয়। বাদ যায় না চা-পান হাসি মশকরা।

আলাপ-আলোচনায় সালেহা বেগম যা বুঝতে পারে। তার মূলভাব অচিরেই দেশে যুদ্ধ হবি। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। আওয়ামী লীগ ভারতের সাহায্যপুষ্ট-মদদপুষ্ট।

এদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে ইসলাম ধ্বংস হইয়া যাইব।

২৫ শে মার্চের রাতে সত্যি সত্যিই পাক-সেনারা এদেশে আক্রমন করে। যার যেখানে পায় তাঁকেই পাখীর মত গুলি করে মারতে থাকে। পোড়াতে থাকে বাড়ী-ঘর। দোকান-পাট। ধরে নিয়ে যেতে থাকে সুন্দরী যুবতীদের। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের আটকে রাখে।

দিনরাত তাঁদের উপর চালাতে থাকে পাশবিক নির্যাতন বলাৎকার।

অবলা যুবতীদের আর্তনাদ, চিৎকার ও গোঙানিতে বাতাস হতে থাকে ভারী।

বেশ কয়েকদিন পর তাঁদের গ্রামেও মিলিটারি আসে। আস্তানা গাড়ে মোল্লার শিক্ষকতা করা স্কুলে। অবশ্য তাঁর স্বামীই এ ব্যপারে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করে। প্রতিদিন ক্যাম্পে গরু, খাসী, মুরগী সাপ্লাই দিতে থাকে। অঞ্চলের সেরা সুন্দরী মেয়েদের সাপ্লাই দিতেও বাদ রাখে না। এজন্যে গফুর মেজর সাবের নেক-নজরে পরে যায়।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়।

চারিদিকে তুমুল যুদ্ধ চলছে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সৈন্যদের। এই সময় এদেশের পথ-ঘাট দেখিয়ে ও আওয়ামীপন্থী লোকদের চিনিয়ে দেয়ার জন্য দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজাকার বাহিনী গঠন করে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগী দল হিসেবে কাজ করা।

আরও পড়ুনঃ নদী ও প্রজাপতির গল্প। মুক্তিযুদ্ধের গল্প। মনি হায়দার 

মেজর সাবের সুনজরে থাকার সুবাদে গফুর মোল্লা তাঁর নিজ থানার রাজাকার কমান্ডার হয়।

এলাকার মানুষ যারা আওয়ামী লীগ করেছিল, তাঁদের উপর মোল্লার অত্যাচার শতগুণ বেড়ে যায়।

যে সব ছাত্র-শিক্ষক, সাহিত্যিক-সাংবাদিক, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ভোটে জিতে তাঁর বাড়ীর সামনে নেচে গেয়ে শ্লোগান দিয়েছিল, তাঁদের নামের তালিকা করে। সদলবলে খুঁজে খুঁজে ধরে এনে ওর বাড়ীতে আটকে রেখে চালায় অকথ্য নির্যাতন।

কারো হাত কেটে দেয়। কারো পা ভাঙ্গে। কারো চোখ উপড়ে ফেলে। কারো ভেঙ্গে দেয় মুখের সবগুলো দাঁত।

ভয়ে আওয়ামীপন্থী লোক বনে-জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতে থাকে।

অনেকেই ভয়ে দেশ ছাড়ে। পালিয়ে যায় ভারতে। সেখান থেকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে শত্রু নিধনে আনিয়োগ করে। লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য দখলদার বাহিনীর কবল হতে দেশকে মুক্ত করা।

সালেহা বেগমের দরদী-মন কেঁদে ওঠে। একই মহল্লার, একই গ্রামের লোক। সবাই সবার সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে বেঁচে থাকে। সবাই সবার খোঁজ-খবর নেয়। কুশল বিনিময় করে। কোন উৎসব-আনন্দে একসঙ্গে মাতে। কারো বাড়ী আগুন লাগলে সবাই একসঙ্গে পানি ঢালে।

রাজনৈতিক মত ও পথের পার্থক্য থাকতেই পারে।

তাই বলে তাঁরা এই সামান্য দু'দিনের মধ্যে শত্রু হয়ে গেল! তাঁদের মেরে ফেলতে হবে! ঘরে আগুন দিতে হবে? বাড়ী ঘরে লুটতরাজ চালাতে হবে? এটা কেমন কথা? তাঁর মন স্বামীর কর্মের বিরোধিতা করে।

তাঁর অশান্তির অন্ত নেই। সকাল-সন্ধ্যা-মধ্যরাতের হিসাব নেই। যখন তখন রাজাকার বাহিনী নিয়ে এসে বলে, "ভাত দাও। ও পাড়ার মণ্ডলের বাড়ী আগুন দিতে যেতে হবে"।

আবার শুরু হয় রান্ধন। আবার বাড়ন।

কোনদিন দলবল সাথে নিয়ে এসে বলে,-"ঘরে চিড়া, মুড়ি, খই থাকলে দাও। সাথে একটু কুসুরের গুড়ও দিও"।

কি করবে সে।

নাই বললেই রাত দুপুরে হইচই-মারধর! কত আর পারা যায়?

আশেপাশের চারদিক থেকে তাঁদের বাসাটা বিছিন্ন হয়ে পরেছে। কেমন যেন একঘরে একঘরে ভাব। গুমোট অবস্থা। দম বন্ধ হয়ে আসার মত। পাড়া প্রতিবেশীরা কেউ আর এখন তাঁদের বাড়ীতে আসেনা। কেমন যেন ভয়ে ভয়ে দূরে দূরে থাকে।

দূর হতে চোখে চোখ পরলেও আৎকে ওঠে। ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। এড়িয়ে চলতে চায়। চোখের আড়াল হতে পারলেই বাঁচে।

এত কিছুর জন্যে এই মোল্লাই দায়ী। অথচ তাঁকে কিছু বলতেও পারেনা।

একরাতে রাতে বস্তা ভর্তি করে সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা আনে। বস্তার মুখ খুলে ঘরের মেঝেয় ঢালে। এতে ঝন ঝন করে শব্দ হয়। এতে আধা-ঘুম আধা-জাগরন অবস্থায় খাটের উপর শুয়ে থাকা সালেহা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

ভয়ে সে আলো জ্বালে।

চোখ মেলে চায়।

হার, দুল, চুড়ি, রুলিবালা, আংটি, মাথার টায়রা, পায়েল, নাকফুল, নোলক বাজুবন্ধ ও আরও কত কি! স্তূপীকৃত সোনার গহনার উপর আলো পরে ঝলমল ঝলমল করে ওঠে।

পাশে আকাশ সমান স্তূপীকৃত টাকা। শুধু পাঁচশত আর হাজার টাকার নোট। এতো সোনা-রূপা-টাকা জীবনে দেখেনি সে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।

সে অবাক, অভিভুত, বিস্ময়-বিমূঢ়, নির্বাক।

-"সালে, ভয় পাস না। আমি। এই দেখ কি এনেছি। সব তোর জন্য। এগুলো পরে সারা বাড়ী ঘুরবি"। বলে মুখে খই-ফোটা হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে

-"কই পাইলেন এতো সোনা রূপা টাকা পয়সা "?

-"নাহ! এই মূর্খটারে নিয়ে আর পারা গেল না। কিছুই বোঝে না। এখন যে যেভাবে পারছে। কামাই করছে। আমিও করছি। বড় পরিশ্রমের ফসল"!

"থাক। ওসব আমার লাগবিনানে"। বলে বিতৃষ্ণা, অবজ্ঞা ও অবহেলায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরে।

একদিন পঞ্চাশোর্ধ্য তুতাই মণ্ডলের মাজায় দড়ি বেঁধে আনে। বাঁধে উঠোনের পেয়ারা গাছের সঙ্গে। মাথায় বক-সাদা চুল। মুখ ভর্তি সাদা চাপ দাড়ি। কপালটার মাঝখানে কালো দাগ। এতে বোঝা গেল নামাজী মানুষ।

এতদিন শুধু শুনেই এসেছে তাঁর স্বামী আওয়ামীপন্থীদের খুঁজে খুঁজে ধরে আনে। তারপর নানা শাস্তি সাজার পর পাখীর মত গুলি করে মারে। তাঁদের বাড়ী-ঘরে আগুন দেয়।

বিশ্বাস হয়নি সালেহা বেগমের।

কিন্তু আজ উঠোনে বাঁধা লোকটাকে দেখে বিশ্বাস না করে পারলো না। সে ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে লোকটাকে দেখতে থাকে। লোকটার কান্না দেখে পাথর পাষাণও গলে যায়।

অথচ এই পাষণ্ডদের গলছে না।

তাঁর স্বামীর প্রধান সহযোগী হামিদ রাজাকারের এক হাতে রাইফেল।

অন্য হাতে জিক্সের তিন হাত লম্বা নলা বা ডাল। লোকটার হাতে পায়ের গিঠে গিঠে বিরতিহীন ভাবে মারছে।

আঘাতে আঘাতে সে জর্জরিত। কত কাকুতি মিনতি করছে। হাতে পায়ে ধরছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

রাইফেল দিয়ে গুতো দিচ্ছে আর বলছে,- "বোল হালা, তুর দুডে ছাওয়াল মজিদ মচো কই? কোনডে লুকাই রাকচিস? কোন তুর মজিবর বাপে? অ্যাহন আমাগোর আত থেইকা তুর কেডায় বাঁচাইব? আমাগোর কাচে তত্য আচ্ছে তুই নাহি রাতি রাতি মুক্তিরে শুতি জাগা দিস? বাত রাঁধে খাওয়াস? পুলা দুইডা মুক্তি বানাইছস? মুক্তিগের দিয়ে আমাগোর মারতি চাস"?

শুধু ঠাস ঠাস, খট খট শব্দ হচ্ছে। হামিদের হাত চলছে সমান তালে। সে মার খেতে খেতে মাটিতে পরে গেল।

দু'জন রাজাকার তাঁর বুকের উপর দাঁড়ালো। লোকটা গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়েই নিশ্চল, নিশ্চুপ। নিরব, নিথর।

অনেকক্ষণ নড়াচড়া নাই!

আরও অনেকক্ষণ পর। আরও অনেকক্ষণ পর- খুব জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নড়ে উঠলো। তারপর নদীর প্রচণ্ড ঢেউয়ের বুকটা উঠানামা করিয়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকলো।

গো-পিটানি চলছেই। সেই সাথে নানা জিজ্ঞাসা।

-"হেদের দিশে হামি জানিনে। হেদের নগে হামার খুজ-খবর নাই। কতাবাতা হয় না"। উনার মুখে শুধু এই একটাই বুলি।

-"মাগো, সবাই মিলে উনারে মারে ক্যান"?

="তর বাপরে জিগা"। কম্পিত-কণ্ঠে অস্ফুট-স্বরে বলে সালেহা বেগম।

-"মুক্তি কি মা "?

-"মগোর দ্যাশের জন্যি, মগোর ভালোর জন্যি যারা জান দিচ্ছে, তাঁরাই মুক্তি। উনার দুডে পুলায় মুক্তি। হেরায় দ্যাশ স্বাদীন করবো"।

-"মুক্তি কি খারাপ, মা"? বলে রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে কাঁপতে থাকে।

-"না। খারাপ এই কুত্তা গুলান"।

সালেহা বেগমের কথা শেষ না হতেই বাড়ীর ভিতর ঢোকে আব্দুল মোমিন আর গফুর মোল্লা। তাঁদের দেখে লোকটার উপর মারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় হামিদ। বহৃদের খুশী করার জন্য সে তাঁর শারীরিক শক্তি প্রদর্শন করতে থাকে।

অন্য রাজাকাররা হাসছে। কেউ গায়ে থু থু দিচ্ছে। কেউ কটূক্তি করছে। কেউ কেউ কিল, থাপ্পর ও চিমটি দিচ্ছে।

-"এই তোরা হোন। বুড়ারে আমার কাছে নিয়ে আয়"। হুকুম দেয় আব্দুল মোমিন।

রাজাকাররা লোকটার গাছের বাঁধন খুলে এম, পি, সাবের সামনে এনে দাঁড় করায়। সে আপাদমস্তক ভাল করে দেখে। এক সময় হামিদের হাতের জিক্টের ডাল নিজের হাতে নিয়ে ধমক দেয়,

আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প: "অতিক্রম"

-"এই বুড়ো, তোর পোলারে মুক্তি বানাইয়া কই লুকাইয়া রাখছস"?

-"হামি হেদের তালাশ জানিনে "।

-"জানিস না? সব জানিস"। বলে সপাং সপাং করে পেটাতে থাকে।

প্রতি গিরায় গিরায় মারছে। শুধু ঠাস ঠাস, খট খট শব্দ হচ্ছে।

-"মাগো, মলাম গো। ওরে বাবারে। ওরে মারে। মরে গেলাম রে"। বলে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকে।

শুধু ঠাস ঠাস, খট খট শব্দ।

মুমূর্ষুপ্রায় অবস্থায় এক সময় ক্ষীণ-কণ্ঠে বলে,-"হানি। হানি খামু"।

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।"পানি তোর লিডারের কাছে চা। সে পাকিস্তানের জেলখানা ভাঙ্গি আসি দিয়ে যাবি"।

-"বুগডা ফাইটে যাচ্চেতো"।

-"ঠিক আছে, পানি দিতি পারি। যদি তোর দুই ছেলের আমাদের সাথে দিস। ওরা রাজাকারে নাম লেখাক। মাসে মাসে বেতন পাবি। আরও কত কি! চোখ কান খোলা রাখে কাজ করলি আরও কত কিছু অর্জন করা যায়"!

-"না। মরে গিলিও পুলারে রাজাকার বানাতি পারুম না"।

গফুর মোল্লা পাশে ছিল। সে জিকের ডাল নিজ হাতে নেয়ার জন্য ডান হাতখানা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,-"এম, পি, সাব, হাতে দেন। বুড়োরে আমি দেখি"।

-"শোন বুড়ো, আমরা এদেশের মানুষ। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই। কি দরকার ঐ হিন্দুগোর দলে থাইকা? ওরা দেশটারে টুকরা টুকরা করতে চায়। পাকিস্তান অটুট থাকলে আমরা ভাল থাকবো। নইলে এদেশের মসজিদে উলু ধ্বনি হবে। ঈদের দিন গরু কোরবানি দিতে দিবে না"।

-"অত কিচু বুজিনে। হামি মুক্ষু সুক্ষু মানুচ। দেচ সাদিন হোক"।

শুনেই দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য অবস্থাপ্রায় মোল্লার। কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। দাঁত কিড়মিড় করে হাতে ধরা লাঠি দিয়ে দিল বারি। সপাং সপাং করে পিটানো শুরু করে দিল। হাউ মাউ করে চিৎকার করতে করতে এক সময় নিরব হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর অন্য সব রাজাকারদের সহায়তায় ধরাধরি করে গড়াই নদীতে ফেলে দিয়ে এলো বৃদ্ধর নিথর দেহ।

জীবন্ত মানুষটি এক নিমিষে হারিয়ে গেল কালের অতল গহবরে।

যুদ্ধ শুরু হবার পর সালেহা বেগমের বাইরে আসা হয়নি। বাড়ীর ভিতরেই থাকে। আজ মনে হোল বহিঃবাটির কাছারি ঘরটা কতদিন ঝাড়ু দেয়া হয়নি। একটু ঝাড়ু দেয়া দরকার। এ কয়দিনে হয়তো ময়লা, ঝুল-কালিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

কাছারি ঘরের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ। শিকল উপরে চৌকাঠের কড়ার ভিতরে ঢোকানো। তারপর কড়ার ছিদ্রটার মধ্যে বাঁশের কঞ্চি-কাঠি দিয়ে সেটে দেয়া।

সালেহা বেগমের মনে খটকা লাগে। এমন হোল ক্যান? এ বাড়ীতে আসার পর সে দেখে এসেছে। কাছারি ঘরের দরজা সব সময় খোলা থাকে।

গ্রামের লোকজন এখানে এসে গল্প-গুজব করে। পথচারীরা বসে বিশ্রাম নেয়। সামনের টিউবওয়েল হতে পানি পান করে।

হালচাষের কাজের লোক ও বিদেশী পৈরাত ঘরে থাকে। রাতে ঘুমায়। অথচ আজ দরজা বন্ধ। তাহলে এতো যে রাজাকার আসে। তাঁরা কি এখানে বসে না।

কাছারি ঘরের অর্ধেকটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। আর বাকি অর্ধেকটা ফাকা। এই ঘেরা অর্ধেকের মধ্যে ২/৩ টি চকি পাতা।

ফাঁকা জায়গা টুকুতেও চকি পাতা ২/৩ টি।

কাছারি ঘরে উঠেই কেমন যেন ঠেকল তাঁর কাছে। এতদিনের চেনা কাছারি ঘরের পরিবেশ অন্যরকম অন্যরকম। অচেনা মনে হোল।

তবু বাহিরের খোলা ফাঁকা জায়গাটুকু ঝাড়ু দিলো। এরপর দরজা খুলতেই চক্ষু স্থির হয়ে গেল। একটা অভাবনীয় দৃশ্যে আটকে গেল তাঁর দুটি চোখ।

নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করে। যা দেখছে তা কি সত্যি? না স্বপ্ন দেখছে? এটা কি করে সম্ভব হোল? আর হোলই যদি সে একটুও বুঝতে পারলোনা? সে অবাক, অচঞ্চল, হতবিহবল।

ঘরের অন্ধকার কোনাটায় হাত, পা, চোখ বাঁধা অবস্থায় দুটি মেয়ে। বয়স বিশ হতে বাইশের মধ্যে।

অপূর্ব সুন্দরী। দুধে-আলতা মেশানো গায়ের রঙ। দেখেই মনে হয় কোন সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান। দিনের পর দিন চালানো হয়েছে তাঁদের উপর নারকীয় পাশবিক নির্যাতন। অসহনীয় অত্যাচার।

পরনে কাপড় নেই। শুধু শত ছিন্ন পেটিকোট। ঠোট কামড়ে কেটে দেয়া। ভরাট বুকটা নখের খামছে ক্ষত শত-সহস্র। হাত রক্তাক্ত। কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে বেঁধার ক্ষত।

পাশেই ভেঙ্গেচুড়ে গুড়ো হয়ে পরে আছে রঙ্গিন কাঁচের চুড়িগুলো।

ওপাশে বুকের কাঁচুলি পরে। তা শত ছিন্ন। উরুদ্বয় রক্তে ভেজা। তাজা রক্তে জবজবে ভেজা পরনের ছেঁড়া পেটিকোটটি।

মেঝেয় চাপ চাপ রক্ত। রক্ত দেখে মনে হোল,-গতরাতে ঝরানো ঐ ওদিকটার রক্ত।

সালেহা বেগম চমকে উঠলো! একি সভ্য সমাজ! না নরক! তার স্বামী না মাস্টের মানুষ! দশ গ্রামের লোক মান্যি করে! তাঁর চেহারা এতো কদর্য, কুৎসিত? সে এতটাই চরিত্রহীন?

ইয়া আল্লাহ! এ দৃশ্য দেখার আগে মরণ হলো না ক্যান?

কিছুক্ষণ চিন্তা করে। আকাশ জমিন তাঁর মাথায় ভেঙ্গে পরে। পরে আধা ভাঙ্গা চুড়ি আর রক্তের ফাঁকে ফাঁকে অতি সন্তর্পণে পা ফেলে মেয়ে দুটির কাছে যায়।

-"কেডায় গো তুমরা "? বলে গায়ে হাত দিতেই মেয়ে দুটি নির্জীব প্রায় অবস্থায় নড়ে চড়ে ওঠে। ককিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ক্ষীণস্বরে।

-"আর না। আর সইতে পারবোনা। আমাদের ছেড়ে দেন। না হয় গুলি করে মেরে ফেলেন। আর রক্ত ঝরাবেন না। আর না---দুটি পায়ে ধরি। আপনি আমাদের ধর্মের বাপ"।

অনেক কাকুতি মিনতি করতে থাকে। সেই সাথে ভয়ে কাঁপতে থাকে ছোট্ট পাখীর ছানার মত।

সালেহা বেগম সব বুঝতে পারে। হাত-পা-চোখের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলে,-"আমি। তুমাদের কুনু ভয় নাই। তুমরা কারা"?

"মাগো"। বলে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে।

-"মাগো। আমরা। লুবনা আর শাহানা। আমরা আপন দুই বোন। ভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি"। বলে মেয়ে কাঁদতেই থাকে।

-"হু। বাড়ী কই "?

"জাগলবার"।

-"জাগলবার"!

সালেহা বেগম চমকে ওঠে। তাঁর বাপের গ্রাম। এ গ্রামেই সে ষোল বছর কাটিয়েছে। ঐ গ্রামের অলিগলি এখনো তাঁর চেনা।

-"বাপের নামডা কিডাগো "?

"রিয়াদ সরোয়ার"।

-"ফুয়াদ শাহরিয়ারের পুলাডা "?

"হ্যাঁ"।

এক সঙ্গেই তাঁরা গ্রামের স্কুলে পড়তো। হাইস্কুলেও তাঁরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছে। একসঙ্গে খেলেছে। চড়ুইভাতি করেছে। মেলায় বেড়াতে গেছে।

দু'জনের কি সখ্যই না ছিল। যেদিন দেখা হতো না। সেদিনটা যেন কেমন পানসে পানসে মনে হতো। দু'জন একসঙ্গেই প্রাইমারী বৃত্তি দিলাম ও বৃত্তি পেলাম।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় দৌড়ে সবার সামনে ছিল সে।

একমাত্র তাঁকে জেতানোর জন্য সে ছল করে পড়ে যায়। সালেহা বেগম দৌড়ে প্রথম হয়। প্রথম পুরুস্কার পায়। সবার মুখে তাঁর প্রশংসা হয়।

বার্ষিক পরীক্ষায় জানা দুটি অংকের উত্তর না করেই খাতা জমা দিয়ে আসে। আর একারণেই সব বিষয় যোগ করে এক নম্বর বেশী পেয়ে সে হয় প্রথম। ছাত্র-শিক্ষক সবার চোখে সে ভাল ছাত্রী ও সম্মানের পাত্রী হয়ে ওঠে।

পরের টুকু মনে হতেই ফিক করে হেসে ফেলে। ঠোঁটে দাঁত চেপে তা নিবৃত করে। লজ্জারুণ তাঁর সমস্ত মুখমণ্ডল রক্তিমাভ করে তোলে। -"ও, তো তোমরা এহানে কতদিন আইচ "?

"একুশ দিন। প্রতিরাতে আমাদের দু'বোনের উপর পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালায়। কথা না শুনলে চোখ মুখ বেঁধে বেদম প্রহার করে। কত বলেছি গুলি করে মেরে ফেলতে। তাও মারেনা"।

সালেহা বেগমের চোখ দু'টি ভিজে যায়। সে বাকরুদ্ধ হয়। লুবনা শাহানা মৃতপ্রায়। ওদের সেবাযত্ন দরকার। আর সহ্য নয়! এর প্রতিবাদ করা দরকার।

সে দু'জনের ধরে বাড়ীর ভিতর আনে। ঘরের মধ্যে নিয়ে জানালা দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর ঠোঁট, উরু, জঙ্ঘা ও নিাঙ্গে সেভলন লাগিয়ে দেয়। মেয়ে দু'টি'উহু আহা, জ্বলে যায় বলে চাপাকণ্ঠে চিৎকার করতে থাকে।

সালেহা বেগমের নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়।

ফুয়াদের মেয়ে তাঁর নিজের মেয়ে মনে ভাবে। আর সেটা ভাবারও যথেষ্ট অবকাশ আছে। সালেহা বেগমেরই তো এদের মা হওয়ার কথা ছিল। অভিভাবকদের একগুঁয়েমির জন্যইতো সম্ভব হয়নি। তা না হলে এরাই হতো তাঁর মেয়ে।

সে দু'বোনকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ায়। তারপর পরিধেয় পর্যাপ্ত কাপড় চোপড় ও কিছু টাকা চাকর আব্দুলের সঙ্গে জাগলবার পাঠায়।

মধ্যরাতে একদল রাজাকারসহ গফুর মোল্লা বাড়ী ফেরে।

কাছারি ঘরের দরজায় টর্চ মারতেই দেখে দরজা খোলা। দ্রুত পদে কাছারি ঘরে উঠে যায়। টর্চ মেরে এদিক ওদিক ইতি উতি চায়। না, কেউ কোথাও নেই। শুন্য ঘর।

রাগে গোংরাতে থাকে। ত্বরিতগতিতে বাড়ীর ভিতর আসে। সালেহাকে জিজ্ঞেস করে,- "কাছারি ঘরের দরজা খুলছে কে "?

"আ---আ---আমি"। ভয়ে কাঁপাকণ্ঠে উত্তর দেয় সালেহা বেগম।

-"ক্যান"?

"ক্যান মাইনে? নজ্জা করে না? অন্যির মাইয়ার উপর অত্যিচার করতি? অরা না আপনের সুন্তানের লাহান। আল্লায় কি এসব সইবো?"

"ভাল হবিনানে কইলাম"। মোল্লার হুংকারে আক্রোশ ঝরে পরে।

-"হু! কত ক্ষ্যমতা! ক্ষ্যামতা থাহলি যান। মুক্তিদের লগে যুজ্জ করেন। দেহি কত পারেন। গুতো খান। অমানুচ! মরা শিয়েলতো হগলেই মারতি পারে?"

"এই! মাথা বিগড়াইয়া দিবিনা কইলাম। তাইলে কিন্তুক এই রাতে তোকেও শেষ করে ফেলবো। পেত্নী কোথাকার।"

এরই মধ্যে এলাকায় মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। একের পর এক দখলদার বাহিনী ও রাজাকাদের ক্যাম্প গুড়িয়ে দিতে থাকে। দলে দলে মারা যেতে থাকে মিলিটারি ও রাজাকার। জীবিতগুলো প্রাণ ভয়ে পালাতে থাকে এদিক সেদিক।

গফুর মোল্লার-স্কুল ক্যাম্পেও আক্রমণ হয় এক রাতে। সে রাতে মোল্লা ঐ ক্যাম্পেই ছিল।

অনেক কষ্টে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে ন্যাংটা হয়ে বাড়ী আসে। পিছন বাড়ীর পায়খানার পিছনে লুকিয়ে সারা রাত কাটায়। সেখানেই চলতে থাকে খাওয়া-শোয়া। এভাবেই করতে থাকে দিনাতিপাত।

মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে ধরার জন্য বাড়ীতে হানা দিতে থাকে। বাতাসের কানে এ খবর সে পেয়ে যায়। তার আগেই সে জঙ্গলের ভিতর ভাঙ্গা কবরের মধ্যে গিয়ে লুকায়।

আরও পড়ুনঃ একজন মুক্তিযোদ্ধা দাদুর গল্প। লেখক মনি হায়দার

এরই মধ্যে এসে যায় ১৬ই ডিসেম্বর। পাকিস্তানি বাহিনী আসমর্পণ করে। অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। উড়ে লাল সবুজ পতাকা। বাংলা হয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।

এদিন আরও একটা খুশীর সংবাদ সবার মুখে মুখে চাউর হয়ে যায়। লুবনা শাহানা দু'বোন দু'টি সন্তানের জন্ম দেয়। লুবনার গর্ভে হয় ছেলে। আর শাহানা গর্ভে মেয়ে জন্ম নেয়।

ছেলেটির নাম রাখা হয় বিজয়। আর মেয়েটির নাম মুক্তি।

জন্মের পর ওরা সন্তান মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। মাতৃত্ব জেগে ওঠে। শিশু দু'টি নিষ্পাপ। এর তো কোন দোষ করেনি। তাঁদের মেরে কি লাভ! শাশ্বত মাতৃত্বের কাছে দুই বোনই হেরে যায়।

তাই এরা সিধান্ত নিয়েছে। শিশু দু'টি যুদ্ধ শিশু পরিচয়েই বেঁচে থাক। স্বাধীন দেশের আলো বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিক। এদেশএ জাতিকে ওরা এগিয়ে নিয়ে যাক আরও অনেকদূর। অ-নে-দুর। আরও অ-নে-দুর।

বাতাস সব সময় একদিক থেকেই বহে না। কারও দিনও সব সময় একই সমান্তরালে বয়ে যায় না। চলার পথে মাঝে মাঝে বাঁকও নেয়। কর্মফল চলার গতি থামিয়ে দেয়।

মোল্লার বেলায়ও ঠিক তাই হোল।

অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় থেকে শোচনীয় হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তন্য তন্য করে খুঁজতে শুরু করে। কতদিন আর এ কবরে ও কবরে পালিয়ে বাঁচা যায়।

একদিন সে বোরকা পরে মহিলা সেজে গরুর গাড়ীতে ছই দিয়ে লাগিয়ে এলাকা ছাড়ে। পথে মুক্তিদের সামনে পরে কয়েক জায়গায়। কিন্তু মুক্তিরা বোরকা পরা পর্দানশীন মহিলা দেখে সসম্মানে ছেড়ে দেয়।

আর এই সুযোগটাই সে কাজে লাগায়। পালিয়ে চলে যায় ঢাকায়।

কয়েক বছর পর।

এলাকার লোকজন জানতে পারে। গফুর ঢাকায় লুকিয়ে আছে। দাড়ি রেখে জুব্বা পরে হাজির বেশ ধরেছে। দিনাতিপাত করছে বিভিন্ন স্থানে ধর্ম সভা করে। সে এখন বিখ্যাত হুজুর মাওলানা। কাক লেবাজটাকে বদলে ফেলে ময়ুরপক্ষী সেজেছে।

কিন্তু পেরেছে কি তার অতিত ইতিহাস ঢাকতে? ইতিহাস বড়ই নির্মম, নিষ্ঠুর। সব সময় সত্য সুন্দর। চিরাচরিত স্বাভাবিক নিয়মেই সত্য প্রকাশ করে দেয়। প্রকাশ হয়ে যায়।

২০০৮ সালে আবার নির্বাচন হয়।

এবার বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গফুর মোল্লা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পরে। এই মাওলানার মুখোস খুলে যায় দেশ ও জাতির কাছে।

মোল্লার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ ইত্যাদি অভিযোগ গঠিত হয়। এক কথায় সে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে বিচার হতে থাকে।

আইন সত্য সুন্দর ও সুরভী সমৃদ্ধ। আইন সব সময় তাঁর নিজস্ব গতিতে চলে। আইনের হাত বড়ই লম্বা। আইন আবেগের বসবতি হয়ে কারো প্রতি করুনা দেখায় না। আবার বিরাগের বসবতি হয়ে কারো দণ্ডিত করে না। আইনের চোখে অনুরাগ বা বিরাগের কোন মূল্য নেই। আইন ব্যাক্তিকে করে আলোকিত। সমাজকে করে সমৃদ্ধ। দেশ ও জাতিকে করে উন্নত। আইন আলোকবর্তিকা।

তাই আমরা সবাই আইনকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। আনতমস্তকে আইন মেনে চলি।

যে মানে না, সেই উচ্ছৃঙ্খল- অপরাধী বলে গন্য হয়।

একদিন এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে গফুর মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়। যা সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে।

-"মা, তুমি কি চাও একজন যুদ্ধাপরাধী আমাদের আঙ্গিনায় শুয়ে থাক।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এক সাগর রক্তে কেনা। এই পতাকা, এই জাতীয় সঙ্গীত, এই স্বাধীন সার্বভৌম ভূমি লজ্জিত, অপমানিত হোক"?

"না বাজি, এইডে আমি চাইনে"। অবলীলায় বলে সে চাপাস্বরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। এরই মধ্যে ভিড় ঠেলে বিজয় মুক্তি দু'ভাইবোন পলাশের কাছে চলে আসে।

তাঁরাও সমস্বরে বলে,-"না, এদেশের মাটিতে কোন রাজাকারের জায়গা হবে না। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এরা মা, মাটি, দেশকে কলংকিত করেছে। অপমানিত করেছে"।

লুবনা শাহানা গ্রামের মোল্লার শিক্ষকতা করা স্কুলেরই শিক্ষক হয়েছে।

স্কুলে পত পত করে পতাকা উড়ছে। দু'বোন একদৃষ্টে তা চেয়ে চেয়ে দেখছে তা। আজ যেন ঐ পতাকাটা তাঁদের কাছে মনে হচ্ছে আরও বেশী সুন্দর। সবুজ অংশটুকু আরও গাঢ় সবুজ। সূর্য আঁকা রক্ত-লাল অংশটুকু আরও উজ্জ্বল লাল দেখাচ্ছে। ওই লাল সূর্যের দেহ তাঁদের রক্তে রঞ্জিত।

এই দেশ, পতাকা, স্বাধীনতা ও জাতীয় সঙ্গীত অর্জনে তাঁরাও রক্ত ঝরিয়েছে। এসবের তাঁরাও অংশীদার। তাঁরাও ভাগীদার।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url